কামরুজ্জামান স্বাধীন, উলিপুর থেকে: ১৩ নভেম্বর, হাতিয়া গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভোরের আলো ফোটার আগেই কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর, দাগারকুটি, হাতিয়া বকসী, রামখানা ও নয়াডারা গ্রামের ৬৯৭ জন নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী।
পাক বাহিনীর অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ থেকে কোলের শিশুরাও রক্ষা পায়নি সেদিন। অনেক শিশুকে পাক সেনারা ধরে আছাড় মেরে অথবা আগুনে নিক্ষেপ করে জঘন্যতম বর্বরতার মাধ্যমে হত্যা করে।
এভাবেই হাতিয়া ইউনিয়নের বাগুয়া, অনন্তপুর, রামখানা, নয়াডারা ও দাগারকুটি গ্রামসহ পার্শ^বর্তী গ্রামের মানুষকে যাকে যেখানে পেয়েছে, সেখানেই গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।
এই অপারেশন শুধু হাতিয়া ইউনিয়নেই সীমাবদ্ধ ছিল না, পার্শ^বর্তী বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কলাকাটা, জলঙ্গারকুটি, ফকির মোহাম্মদসহ আরও কয়েকটি গ্রামেও একযোগে হামলা চালানো হয়। সেদিন পাক সেনাদের গুলিতে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া কিছু মানুষ আজও জীবিত আছেন। সেই দিনের ভয়াবহ ঘটনার কথা জিজ্ঞাসা করলে আজও তারা হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।
হাতিয়া অপারেশনে পাক বাহিনীর গুলিতে এই পাঁচ গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারেরই কোনো না কোনো স্বজন নিহত হন। দেশের স্বাধীনতার জন্য এতো মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। সেই সব শহীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ১৯৯৭ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হোসেন লালুর প্রচেষ্টায় প্রথম দাগারকুটিতে (যে স্থানে ৬৯৭ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল) একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
পরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে সেই স্মৃতিস্তম্ভ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে নতুন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও দৃষ্টিনন্দনতার কারণে ২০১১ সালে সেটি স্থানান্তর করে বর্তমানে বাগুয়া-অনন্তপুর বাজারসংলগ্ন পশ্চিম পার্শ্বের মোড়ে স্থাপন করা হয়।
পাক বাহিনীর সেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞে প্রাণ হারানো ৬৯৭ জন শহীদের আত্মা হয়তো আজও আহাজারি করছে ব্রহ্মপুত্র নদের উপকূলীয় এলাকার গ্রামগুলোর আকাশ-বাতাসে।
দিবসটিকে প্রতিবছর প্রশাসনিকভাবে বিভিন্ন আয়োজন করাসহ শ্রদ্ধার সাথে পালন করা হয় দিবসটি।
আমার বাঙলা/আরএ