রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় একটি ছাত্রীবাস থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত ওই তরুণীর নাম জান্নাতারা রুমী (৩০) তিনি এনসিপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের (ধানমন্ডি থানা) সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে হাজারীবাগের জিগাতলা কাঁচাবাজার সংলগ্ন একটি ছাত্রীনিবাসে নিজ কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।
হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক এসআই মো. কামরুজ্জামান জানান, সকালে সংবাদ পেয়ে আমরা জিগাতলা জান্নাত নারী হোস্টেলে পঞ্চম তলা ভবনের রুমে গিয়ে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পাই। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানায় জান্নাতারা রুমী এনসিপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তার বাড়ি নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নাজিরপুর থানায়। তিনি মো. জাকির হোসেন ও নুরজাহান বেগমের কন্যা।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা নাকি অন্য কোনো ঘটনা—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এদিকে, রুমী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে দেওয়া সর্বশেষ স্ট্যাটাসে তিনি ওসমান হাদির কথা উল্লেখ করেন। ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘ইয়া আল্লাহ, হাদি ভাইকে আমাদের খুব দরকার।’
একদিন আগের আরেকটি পোস্টে একটি ছবি যোগ করে তিনি লেখেন, ‘একদিন ভোর হবে, সবাই ডাকাডাকি করবে কিন্তু আমি উঠব না... কারণ আমি ভোরে উঠি না!’
হাজারীবাগ থানার ওসি (অপারেশন) দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে আসল ঘটনা বের হবে। মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হচ্ছে।
রুমি পারিবারিকভাবে মানসিক চাপে ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহতের সাবেক স্বামী মো. বিপ্লব সরকার জানান, তার সঙ্গে চার–পাঁচ মাস আগে জান্নাত আরা রুমির ডিভোর্স হয়। এর আগে তার আরেকজন স্বামী ছিলেন এবং সেখানেও ডিভোর্স হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে বিয়ের পর আমরা নওগাঁর নজিপুর এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতাম। তার প্রথম স্বামীর ঘরে আট বছরের একটি মেয়ে রয়েছে, নাম মুনতাহা। আর আমার সঙ্গে সংসারে তার সাড়ে তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে, নাম আয়মান। একদিন সে আমাকে বলে—তুমি ঘর থেকে বের হয়ে যাও, তোমাকে আমার দরকার নেই। এরপর গত তিন–চার মাস ধরে তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না।’
তিনি আরও জানান, জান্নাত আরা রুমি আগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে চাকরি করতেন। পরে ৫ আগস্টের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন এবং পরবর্তীতে এনসিপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ ফোন করে তাকে আত্মহত্যার খবর জানায় বলে তিনি দাবি করেন।
নিহতের খালাতো ভাই সোয়েইব হোসেন জানান, জান্নাত আরা রুমি ঢাকায় ওই ছাত্রী হোস্টেলে একাই থাকতেন। তার দুইটি সন্তান রয়েছে—একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। তারা দু’জনই নওগাঁয়ের গ্রামের বাড়িতে বসবাস করে।
আমারবাঙলা/এসএ