নদী দখল ও দূষণের কারণে ‘নদীমাতৃক’ শব্দটি কিছুটা ভাটা পড়লেও প্রাকৃতিক হাওরবিল এখনো নিঃশেষ হয়নি দেশের প্রকৃতিতে। বাংলাদেশের এই সৌন্দর্য্যবহুল প্রাকৃতিক পরিবেশই দেশের জীবন্ত প্রাণ। জলাভূমির অন্তঃপুর থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গজে ওঠা তৃণভূমি জলচর পাখিদের খাদ্যসংস্থান ও নিরাপদ আবাস প্রদান করে। ভাসমান ফেনার আড়ালে দেহ লুকিয়ে তারা কাটায় একেকটি দিন ও রাত।
বেগুনি কালেম, পানকৌড়ি সহ অসংখ্য আবাসিক পাখিরা শীতের আগমনে প্রতি বছর হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাইক্কা বিলে ছুটে আসে। নানান প্রজাতির পরিযায়ী পাখিরা বিভিন্ন প্রজাতির আবাসিক পাখিদের সঙ্গে মিলেমিশে এখানে গঠন করে এক অনন্য ‘স্বর্গরাজ্য’।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) শীতের স্নিগ্ধ সকালে রোদের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে বাইক্কা বিল। অপরাহ্নের রৌদ্রদীপ্তির ভেতর দিয়ে সবকিছুকে যেন নতুন সৌন্দর্যের আভায় মোড়া করে। এটি মৌলভীবাজারের একমাত্র মৎস্য অভয়ারণ্য, যা প্রাকৃতিক জলাভূমির বিস্ময়কর উপকারিতা দিয়ে দিনের পর দিন মৎস্য সম্পদকে সমৃদ্ধ করে চলেছে।
বিলটিতে জলচর পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ানো পরিযায়ী পাখিরা এবং পানিতে ঝাঁপানো জলচর পাখিদের দৃশ্য এক অদেখা সৌন্দর্যের ছবি ফুটিয়ে তোলে। ইতিমধ্যে শীত মৌসুমে এখানে আসতে শুরু করেছে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি।
বাইক্কা বিল হাইল হাওরের পূর্ব দিকের প্রায় ১৭০ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। ২০০৩ সালে সরকার হাইল হাওরকে মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে পর্যটকদের কাছে বিলটির পরিচিতি ও সৌন্দর্য্য বেড়েছে। শীত মৌসুমে প্রায় ১৭৫ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এখানে আসে। বিলের মূল আকর্ষণ হলেও এটি ‘মাছের রাজ্য’ হিসেবেও পরিচিত।
বিলের পাখিদের মধ্যে রয়েছে শঙ্খচিল, ভূবনচিল, দলপিপি, নেউপিপি, পাতি সরালি হাঁস, বালি হাঁস, মরচেরং ভূতি হাঁস, পানকৌড়ি, গো-বক, ধলাবক, বেগুনি কালেম। এখানের জলজ জীববৈচিত্র্য ও পাখিদের কলকাকলিতে বিল মুখরিত হয়।
চাপড়া, মাগুড়া ও যাদুরিয়া বিলকে ২০০৩ সালে স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। অভয়াশ্রমটির জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। ধীরে ধীরে বিপন্ন মাছ প্রজাতির প্রজনন রক্ষা সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে এটি আবাসিক ও পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. আরিফ হোসেন বলেন, “বাইক্কা বিল স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম মৎস্য অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ২০০৩ সাল থেকে এটি কার্যকর। এখানে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হয়। এককভাবে এত বড় জলাভূমি সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। পুরো বিলটি লীজ হয় না, যার ফলে মাছ, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী ও উভচর প্রাণীসহ একটি সুন্দর ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। এখানের খাদ্যশৃঙ্খলের স্বাস্থ্য বাংলাদেশের যে কোনো জলাভূমির চেয়ে অনেক ভালো। এ কারণেই এটি দেশি-বিদেশী পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় স্থান। তবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি নেই।
আমারবাঙলা/এসএবি