মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়-টিলা ঘেরা সবুজে ঘেরা চা-বাগানগুলোতে সাধারণত শীত, মৃদু বাতাস ও কুয়াশার প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি অনুভূত হয়। ফলে প্রচণ্ড শীতের সময় জবুথবু হয়ে পড়েন চা-শ্রমিকদের একটি বড় অংশ। পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাবে এই হাড়কাঁপানো শীতে তারা চরম দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
কয়েক বছর আগেও শ্রমিকদের চাহিদা অনুযায়ী বাগান কর্তৃপক্ষ শীত নিবারণের জন্য চটের বস্তা বিতরণ করলেও বর্তমানে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আর সেই চটের বস্তা দেওয়া হচ্ছে না। শীতের কারণে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
চা-শ্রমিকরা জানান, স্বল্প আয়ে পরিবারের খাদ্যঘাটতি মেটানোই যেখানে কষ্টসাধ্য, সেখানে গরম কাপড় কেনা তাদের অধিকাংশেরই সাধ্য ও সামর্থ্যের বাইরে। শীত নিবারণের জন্য এসব পরিবারের সদস্যরা ঘরের ভেতরে ও বাইরে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহানোর মাধ্যমে ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেন।
বর্তমানে চা-বাগান এলাকায় বাগান পঞ্চায়েত, জনপ্রতিনিধি ও বাগান কর্তৃপক্ষের সুবিধাভোগী কিছু হাতে গোনা স্বচ্ছল পরিবার তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটালেও প্রায় ৯০ শতাংশ শ্রমিক পরিবারকে দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়েই জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা-বাগানের শ্রমিক মহিমা রানী ও আদরমনি মৃধা বলেন,
“আমরা দৈনিক মাত্র ১৮৭ টাকা মজুরিতে কাজ করে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের পরিবারের সংসার চালাই। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। খাওয়া-দাওয়াই যেখানে কষ্ট, সেখানে গরম কাপড় কিনব কীভাবে? বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে শীতবস্ত্র কেনার কোনো সুযোগ নেই। অভাব-অনটনের সঙ্গে শীতের কষ্ট আরও বেড়ে গেছে। সব চা-বাগানের অবস্থাই একই।”
তারা আরও জানান, শীতে কেউ খড়কুটো বিছিয়ে, কেউ বস্তা পেতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেন। আবার কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়ে শরীরে গরম ভাপ নিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন।
শমশেরনগরের কানিহাটি চা-বাগানের শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন ও চা-শ্রমিক সংঘের নেতা রাজদেও কৈরী বলেন, শীতের সময় চা-শ্রমিকদের জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ কোনো শীতবস্ত্র বিতরণ করে না। কয়েক বছর আগে চটের বস্তা দেওয়া হলেও এখন তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে অধিকাংশ শ্রমিক পরিবার শীতের কষ্টে বেহাল অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে শীত বাড়তে থাকলেও চা-বাগানগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থার চিত্র অত্যন্ত নাজুক। ডিসপেনসারিগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নেই। সব মিলিয়ে চা-শ্রমিকরা চরম কষ্টের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে সর্দি, কাশি ও অন্যান্য ঠান্ডাজনিত উপসর্গ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অভাব-অনটন আর শীতের দাপটে চা-বাগান শ্রমিকরা যেন কোনোমতে বেঁচে আছেন—মানবেতর জীবনযাপন করে দিন পার করছেন।
আমারবাঙলা/এসএবি