অভিনেতা হিসেবে নিজেকে সব সময় সফল মনে করেন তিনি। তাঁর কাছে সব সময়ই মনে হয় প্রাপ্তির পাল্লা ভারী। ক্যারিয়ারে যা পেয়েছেন, তাতেই তিনি খুশি। কখনোই তিনি নিজেকে কারও সঙ্গে তুলনা করেন না। দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় পথ চলছেন নিজের মতো করেই। এই অভিনেতার নাম রওনক হাসান। আজ তাঁর জন্মদিন।
ক্যারিয়ার নিয়ে তিনি প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘অভিনেতা হিসেবে আমি আমার জায়গায় সফল। নিয়মিত নাটক, সিনেমা করছি। পরিবারের দায়িত্ব পালন করছি। দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছি। সিনেমা, ওটিটিতে কাজ করছি। সেগুলো নিয়ে দর্শক কথা বলেন। এটাই প্রাপ্তি। একজন অভিনেতা হিসেবে চরিত্রের ক্ষুধা আছে, কিন্তু আমি ক্যারিয়ার নিয়ে খুশি।’
মঞ্চ দিয়েই তাঁর ৯০ দশকে অভিনয় শুরু। শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা ছিল। সেই সময় মঞ্চ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাজগুলো তাঁকে আরও বেশি অভিনয়ে আগ্রহী করে তোলে। শৈশবে বিটিভিতে অভিনয় ছিল স্বপ্নের মতো। সেই সুযোগও একসময় পেয়ে যান। বিটিভিতে কাজের অভিজ্ঞতা এখনো যেন সেদিনের কথা মনে হয়; এমনটাই জানিয়েছিলেন রওনক। বিটিভি থেকেই তিনি প্রথম পারিশ্রমিক পেয়েছেন।
রওনক এ প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের কবিতার ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন ছিল সেটা। সেই মাইম ড্রামায় অনেক অভিনয়শিল্পীর মধ্যে আমিও ছিলাম। ১৯৯৭ সালের ঘটনা এটা। পরিচালক ছিলেন শাহাদত হোসেন। সেদিন অভিনয় করে ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলাম। সেই টাকা দিয়ে মায়ের জন্য কাঁচাবাজার করে বাসায় গিয়েছিলাম। আমার কাছে এটা অনেক বড় ব্যাপার ছিল। তখন ১০০ টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার করতাম।’
সেই সময় রওনক নিয়মিত বাসার বাজার করতেন। তখনো এসএসসি পাস করেননি। বাসার বাজার করার জন্য ১০০ টাকা পেতেন। সেই সময়ের জন্য ১০০ টাকা অনেক। এই অভিনেতা প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মজার সেই ঘটনা নিয়ে বলেছিলেন, ‘সেই সময়ে ১০ টাকা মেরেও ৯০ টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার করেছি। দরদাম করে যেখানে কম পেতাম, সেখান থেকে কিনেছি। কারণ, হাতখরচটা এখান থেকেই আসত। তখন বাজার করার টাকা থেকে ১০ টাকা বাঁচিয়ে রাজার মতো চলতাম। হাতখরচ হয়ে যেত। অপেক্ষায় থাকতাম বাজার করার জন্য।’
তবে প্রথম পারিশ্রমিক পেয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যান রওনক। যেখানে ১০–১২ টাকায় তাঁর দিন চলে যায়। সেখানে একসঙ্গে ৫০০ টাকা নিয়ে কী করবেন রওনক? বেশ ভাবনায় পড়ে যান। তবে সবচেয়ে ভালো একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই অভিনেতা।
রওনক বলেন, ‘আমি জানতাম বাজার করে বাসায় গেলেই মা সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন। মা অভিভূত হলেন। তখন আমি চাকরিবাকরি ছেড়ে দিয়ে অভিনয় করছি, এটা নিয়ে আশপাশের মানুষ আমাকে নিয়ে মায়ের কাছে অনেক রকম কথা বলতেন। তখন অনেক পরিবার মনে করত, নাটক করা মানে নষ্ট হয়ে যাওয়া। কিন্তু আমার মা-বাবা সমর্থন দিয়েছেন। এর মধ্যেও তখন অনেকেই মাকে বলতেন, “তোমার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে।” এমন অনেক কথাই মা শুনে বিছানায় কাঁদতেন। যে কারণে এই কাঁচাবাজার অন্য রকম ব্যাপার ছিল।’
আমারবাঙলা/জিজি