পরিচিতিটা অভিনয়ে বেশি হলেও রুমানা রশিদ ঈশিতা নাচে–গানেও বেশ পারদর্শী ছিলেন। একসময় যাঁকে নিয়মিত দেখা যেত টেলিভিশনের পর্দায়, এখন তাঁর উপস্থিতি কম হলেও জনপ্রিয়তা কমেনি। বিনোদন অঙ্গনে শুরুটা শিশুদের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’তে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে।
এ প্রতিযোগিতায় পরিবেশনায় মুগ্ধ করে ‘ক’ এবং ‘খ’ দুই বিভাগে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতে নেন। আজ এই তারকার জন্মদিন। চার দশকের বেশি সময় ধরে বিনোদন অঙ্গনে কাজের সঙ্গে জড়িত ঈশিতা এখন কী করছেন জেনে নেওয়া যাক।
আশির দশকের শুরুতে আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন রুমানা রশিদ ঈশিতা। প্রকৌশলী বাবা ও গৃহিণী মায়ের সন্তান ঈশিতা ছোটবেলা থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলো ছড়িয়েছেন। ‘নতুন কুঁড়ি’র দুই বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশনা দিয়ে জিতে জিতে নেন দেশের মানুষের ভালোবাসাও।
‘নতুন কুঁড়ি’তে ৯ বছর বয়সে তাঁর অভিনয় সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। নির্যাতিত কাজের মেয়ে ‘ফেলানী’ চরিত্র এতটা মুগ্ধ করেছিল, তা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকেও মুগ্ধ করেছিল। শুধুই মুগ্ধ নয়, ঈশিতার সেদিনের অভিনয়ে সেদিন কান্না ধরে রাখতে পারেননি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট।
ঈশিতার কথা থেকে জানা যায়, ‘ফেলানী’ চরিত্রটি লিখেছিলেন লুৎফর রহমান রিটন। আর এটি শিখিয়েছিলেন বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার। ‘ফেলানী’ চরিত্রটি টেলিভিশনে প্রচারের পর পরই ঈশিতার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নির্যাতিত ছোট শিশুর চরিত্রটি সবার মনে দাগ কাটে।
ছোটবেলায় ইমদাদুল হক মিলনের লেখা ফখরুল আবেদীন পরিচালিত ‘দুজনে’ ছিল তাঁর অভিনীত প্রথম নাটক। অভিনয়ের পাশাপাশি মডেল, সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী এবং লেখক হিসেবেও নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন ঈশিতা। বিশ্ব বিখ্যাত বিউটি সোপের ব্র্যান্ড লাক্সের মডেলও হয়েছিলেন তিনি। অভিনয়ের বাইরে ঈশিতার সাতটি গানের অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। নাটক পরিচালনার কাজও করে গেছেন সমানতালে।
সংসার ও সন্তানদের নিয়েই ঈশিতা সাজিয়েছেন তাঁর বর্তমান জীবন। মিডিয়ায় কাজের পাশাপাশি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করছেন জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী। তবে ২০১৮ সালে রেদওয়ান রনির পরিচালনায় ‘পাতা ঝরার দিন’ নাটকের মধ্য দিয়ে প্রায় চার বছরের বিরতি দিয়ে ফিরেছিলেন ঈশিতা। এ নাটকে অসাধারণ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নতুন করে আবারও আলোচনায় আসেন ঈশিতা।
কথা প্রসঙ্গে ঈশিতা জানান, কোনো নাটকের গল্প শোনার পর জীবনে এই প্রথম কোনো পরিচালককে তিনি বলেছিলেন, নাটকটি যেন তাঁকে ছাড়া করা না হয়।
প্রতিষ্ঠিত এবং গ্রহণযোগ্য অভিনয়শিল্পী হয়েও কয়েক বছর ধরে কাজ কমিয়ে দিয়েছেন। তারপরও মানুষের ভালোবাসা অব্যাহত আছে। এই ভালোবাসা প্রসঙ্গে
ঈশিতা বলেন, ‘আমি মনে করি মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার মতো বড় আর কিছু নেই। মানুষ আমাকে এতটা ভালোবাসেন, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি কী আর হতে পারে? কাজ কম বা বেশি বড় কথা নয়। ভালো কাজের সংখ্যাটা কতটা সেটাই বড় কথা। দর্শকেরা কিন্ত ভালো কাজকে মনে রাখেন। এখনো কাজ করতে চাই, কিন্তু ভালো কাজ হতে হবে।
স্বামী–সংসার নিয়ে এখন বেশি ব্যস্ততা তাঁর। এক ছেলে ও এক মেয়ে মা অভিনয়শিল্পী ঈশিতা পরিবারকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। সেভাবেই এখনকার জীবনকে তিনি সাজিয়ে–গুছিয়ে নিয়েছেন।
আমারবাঙলা/জিজি