সারাদেশ
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা

আশ্রাফ উজ- জামান, সাতক্ষীরা

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। সার্জারী, মেডিসিন, গাইনী, চক্ষুসহ ১০ জন চিকিৎসকের পদ শুন্য রয়েছে দীর্ঘদিন। একশ’ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তিকৃত প্রায় ২০০ জন রোগীর জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১২ জন। রয়েছে নার্সসহ অন্যান্য জনবল সংকট। ফলে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালমুখী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতে বাড়ছে তাদের চিকিৎসা ব্যয়।

বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎস্যক না থাকায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোগীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। আর এই সুযোগ নিচ্ছে হাসপাতালের আশেপাশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো। হাসপাতাল এলাকায় থাকা দালালদের মাধ্যমে রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। ফলে চিকিৎসার নামে আর্থিকভাবে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০০ শয্যার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ২০০ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এছাড়া আউটডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন আরও প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ রোগী। জেলা সদরের এমন একটি হাসপাতাল চলছে তিনজন জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মাত্র ১২ জন চিকিৎসক দিয়ে। এখানে নেই কোন সিনিয়র কনস্যালটেন্ট বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন একজন ডেন্টাল সার্জন, একজন করে জুনিয়র কনসালটেন্ট পেডিয়েট্রিক্স, ইএনটি ও গাইনী। রয়েছেন একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), ৪ জন মেডিকেল অফিসার ও জরুরী বিভাগের জন্য রয়েছে ৩ জন মেডিকেল অফিসার। এছাড়া রয়েছে জুনিয়র কনসালটেন্ট প্যাথলোজি একজন, প্যাথোলজিস্ট একজন এবং মেডিকেল অফিসার আয়ুরবেদিক (উন্নয়ন) একজন।

সদর হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী, অর্থপেডিক্স, মেডিসিন, গাইনী, চক্ষু ও এ্যানেসথেসিয়া, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী, প্যাথলজি, রেডিওলজিস্ট এবং প্যাথলজিস্ট পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। এ্যানেসথেসিয়া ও সার্জারী কনসালটেন্ট না থাকায় এই হাসপাতালে বর্তমানে কোন জরুরি অপরেশন করা হচ্ছে না। একই সাথে মেডিকেল অফিসারের ২টি পদ খালি আছে।

এছাড়া নার্সিং সুপার ভাইজারের ১টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স ৫টি, মিডওয়াফ ৬টি, সহকারি নার্স ২টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ৩টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও) ২টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ফিজিও) ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইসিজি) ১টি, কার্ডিওগ্রাফার ২টি, ডার্করুম সহকারির ১টি পদ খালি রয়েছে। যে কারনে হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা একবারে তলানীতে পৌঁছানোর উপক্রম হয়েছে।

হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ও সার্জারিসহ অন্যান্য বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ মেডিকেল অফিসার দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা চলছে। ফলে রোগীরা তাদের কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনরা।

জেলার আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের আব্দুর রশিদ গাজী (৪৬) ও কলারোয়ার কেড়াগাছির মোমেনা বেগম (৪৩) দু’জন সদর হাসপাতালে এসেছিলেন চোখের ও হাড়ের ডাক্তার দেখাতে। তারা বলেন, ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এসেই জানতে পারেন এখানে কোনো হাড়ের বা চোখের ডাক্তার নেই। বাড়ি থেকে জেলা সদরে আসা যাওয়া খরচ কমপক্ষে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

তারা বলেন, বেসরকারী পর্যায়ে কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার মত আর্থিক সঙ্গতি নেই তাদের। হাসপাতাল চত্বরে বেশ কয়েকজন কম খরচে ভাল ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা করিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে চাইছিল। কিন্তু টাকা পয়সা বেশি না থাকায় যেতে সাহস পাইনি। তাই চিকিৎসা না করেই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

তালা উপজেলার নলতা গ্রামের মিজান জানান, বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে এসছিলেন মেডিসিনের ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে টিকিট নেওয়ার পর জানতে পারলাম সদর হাসপাতালে কোন মেডিসিন এর ডাক্তার নেই। তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। পরে কোন ক্লিনিকে নিয়ে দেখিয়ে নিব।

শুধু রশিদ, মোমেনা ও মিজান নয় প্রতিদিন শত শত মানুষ তাদের কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন এই হাসপাতাল থেকে।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ আব্দুস সালাম চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, শূন্য পদে ১০জন চিকিৎসক, ৪ জন নার্স এবং অন্যান্য শূন্য পদে জনবল চেয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের দপ্তরে পত্র প্রেরণ করা হলেও অদ্যবধি কোনো লাভ হয়নি।

তিনি বলেন, নিয়মিত শতাধিক ভর্তি রোগীসহ বহির্বিভাগে বহু সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক সল্পতার কারণে তাদেরকে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। তার পরও চেষ্টা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষ যেন চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে না যায়।

আমার বাঙলা/এনবি

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ফুলকোর্ট সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ফুলকোর্ট সভা...

দেশজুড়ে সমবায়ের জয়যাত্রা, বঞ্চিত সিলেট বিভাগ

দেশজুড়ে যখন সমবায়ের জয়যাত্রা, তখন সিলেট বিভাগ যেন রয়ে গেছে উন্নয়নের মানচিত্রে...

যে কারনে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন,ব্যাখ্যা করলেন অজিত দোভাল

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল বলেছেন, দুর্বল শাসন ব্যবস...

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে সরকার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দলগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে সরকার। ইতোমধ...

সুদানে ভয়াবহ গণহত্যা চালালো আরএসএফ

সুদানের দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশার শহরে ভয়াবহ গণহত্যার চিত্র উঠে এসেছে। আবুবকর আ...

লাঠিটিলায় বিলুপ্তির পথে হাতি !

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার থেকে: মৌলভীবাজারে জুড়ীতে সিলেট বিভাগের একমাত্...

ফুলকোর্ট সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ফুলকোর্ট সভা...

যে কারনে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন,ব্যাখ্যা করলেন অজিত দোভাল

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল বলেছেন, দুর্বল শাসন ব্যবস...

দেশজুড়ে সমবায়ের জয়যাত্রা, বঞ্চিত সিলেট বিভাগ

দেশজুড়ে যখন সমবায়ের জয়যাত্রা, তখন সিলেট বিভাগ যেন রয়ে গেছে উন্নয়নের মানচিত্রে...

সুদানে ভয়াবহ গণহত্যা চালালো আরএসএফ

সুদানের দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশার শহরে ভয়াবহ গণহত্যার চিত্র উঠে এসেছে। আবুবকর আ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা