তিনি হতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক। সেই পথেই পা রেখেছিলেন। কিন্তু ২০০২ সালে এক সিনেমা বদলে দিয়েছিল তাঁর জীবনের পথচলা। সঞ্জয়লীলা বানসালির প্রেমকাহিনি ‘দেবদাস’-এ শাহরুখ খান, মাধুরী দীক্ষিত ও ঐশ্বরিয়া রাইয়ের চোখধাঁধানো উপস্থিতি, অভিনয় আর পরিচালকের সৃজনশীলতা এক অনবদ্য ছাপ ফেলেছিল জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজের মনে। সে সময় তিনি এক স্বপ্ন দেখেছিলেন, একদিন হয়তো বলিউডের স্বপ্নময় দুনিয়ায় নিজেও নাম লেখাবেন। গত ১১ আগস্ট, ৩৯ বছর বয়সে পৌঁছে জ্যাকুলিনের সেই স্বপ্ন অর্ধেক বাস্তবতা, অর্ধেক এখনো অধরা।
বলিউডে পথচলা শুরু ২০০৯ সালে, ‘আলাদিন’ ছবিতে ছিল অন্য রকম উপস্থিতি। পরে ‘হাউসফুল’ ফ্র্যাঞ্চাইজি, ‘মার্ডার ২ ’, ‘কিক’, ‘জুড়ুয়া ২ ’সহ ৪০টিরও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন। ডেভিড ধাওয়ান, রোহিত শেঠি, মোহিত সুরি, সাজিদ খানের মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে সঞ্জয় লীলা বানসালির সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন এখনো অধরা রয়ে গেছে। নিজেই জানিয়েছেন সেই অতৃপ্তির কথা।
এক সাক্ষাৎকারে জ্যাকুলিন জানিয়েছেন, ‘আমি দুচোখ ভরে সঞ্জয় লীলা বানসালির কাজ দেখেছিলাম, আর মনে মনে বলেছিলাম, এটাও কি সম্ভব! তাঁর ছবির দুনিয়া ছিল স্বপ্নের মতো সুন্দর। সত্যি বলতে, আমি সব সময় তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছি। “দেবদাস” আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিল।’
২০০২ সালের সঞ্জয় লীলা বানসালির পরিচালিত ভারতে এই ছবি পেয়েছিল বিশাল জনপ্রিয়তা। এর জাঁকজমক পোশাক, গান, শাহরুখ-মাধুরী-ঐশ্বরিয়ার উপস্থিতি ও নির্মাণ কৌশল এক অনন্য আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছিল দর্শকের হৃদয়ে। শাহরুখ খানের ‘দেবদাস’, মাধুরীর ‘চন্দ্রমুখী’ আর ঐশ্বরিয়ার ‘পার্বতী’ চরিত্র আজও দর্শকের মনে রয়ে গেছে। যেমনটি রয়ে গেছে জ্যাকুলিনের মনেও। নায়িকার জীবনে ছবিটি ছিল এক বিপ্লবী মাইলফলক, যেখান থেকে শুরু হয় বলিউডের প্রতি তার আকর্ষণ ও স্বপ্নের যাত্রা।
অনেকে মনে করেন, এই নায়িকার জন্ম শ্রীলঙ্কায়। বাস্তবে তা নয়, ১৯৮৫ সালের ১১ আগস্ট বাহরাইনে জন্মগ্রহণ করেন জ্যাকুলিন। শ্রীলঙ্কান সুরকার এলরয় ফার্নান্দেজ ও মালয়েশিয়ান বংশোদ্ভূত সাবেক বিমানসেবা কর্মকর্তা কিমের কন্যা। শৈশব কাটে বহুভাষিক পরিবেশে—সিংহলি, আরবি, ফারসি, হিন্দি, ইংরেজি ভাষায় সাবলীল হয়ে ওঠেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করে শ্রীলঙ্কায় ফিরে কাজ করেন টেলিভিশন সাংবাদিক হিসেবে। কিন্তু ২০০৬ সালে ‘মিস ইউনিভার্স শ্রীলঙ্কা’ হিসেবে খেতাবও জেতেন।
বলিউডের পর্দার বাইরে তিনি ব্যবসায়েও সফল। শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ উপকূলে তাঁর ব্যক্তিগত একটি দ্বীপ রয়েছে, যা সাবেক ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারার দ্বীপের কাছাকাছি। পাশাপাশি মালিকানা আছে একটি রেস্তোরাঁরও। ব্যক্তিগত জীবনে বাহরাইনের যুবরাজ বিন রশিদ অল খালিফার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বলে সংবাদে এসেছে, যদিও তা স্থায়ী হয়নি। ‘বলিউড ভাইজান’ সালমানের সঙ্গেও সম্পর্কের কথা শোনা গেছে।
অনেকের মতো জ্যাকুলিনেরও ক্যারিয়ার শুরুর পথ ততটা মসৃণ ছিল না। সৌন্দর্যের তথাকথিত সংজ্ঞা মেনে চেহারায় কাটাছেঁড়া করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল অভিনেত্রী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজকে। ক্যারিয়ারের গোড়ায় দিকেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নাকের গড়ন বদলানোর পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। শুধু তা-ই নয়; জ্যাকুলিনকে বয়স লুকানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এক সহ-অভিনেতাই নাকি তাঁকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। অভিনেত্রীদের নাকি বয়স ৩০ বছর পেরিয়ে গেলে তাঁরা আর কাজ পান না, এমনই বলা হয়েছিল জ্যাকুলিনকে।
পাশাপাশি বছর কয়েক ধরে জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজের নাম বারবার সংবাদমাধ্যমে আসছে ভারতের আলোচিত অর্থ পাচারের মামলার অন্যতম মূল আসামি সুকেশ চন্দ্রশেখরের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে। যদিও জ্যাকুলিন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ওই অভিযোগে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই এবং নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ মনে করেন। এ ঘটনায় তিনি সামাজিক ও গণমাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছিলেন, যা তার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের জন্য কঠিন সময় হিসেবে পরিণত হয়েছিল।
তবে সব ছাপিয়ে জ্যাকুলিন তাঁর কাজ ও ক্যারিয়ারে মনোযোগ দিয়ে নিজের অবস্থান মজবুত রেখেছেন। যদিও এত বছরের ক্যারিয়ার আর অসংখ্য অর্জনের মধ্যেও ‘দেবদাস’-এর মায়াবী দুনিয়ার মতো এক বিশেষ অধ্যায় আজও জ্যাকুলিনের হৃদয়ে অমলিন। তাঁর সেই স্বপ্ন ধরা দিক, এমন প্রত্যাশা জন্মদিনে ভক্তরা করতেই পারেন।
আমারবাঙলা/জিজি