সংগৃহীত
সারাদেশ
তৈরির উৎসবে মেতেছেন গ্রামীণ রমণীরা

শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, শহরেও কুমড়া বড়ির চাহিদা অনেক

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

শীতকালীন সুস্বাদু কুমড়ার বড়ি তৈরির উৎসবে মেতেছেন গ্রামীণ রমণীরা। শীতের শুরুতে ভোর থেকে গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়ে যায় কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম।

শীতকালকে কুমড়ার বড়ি তৈরির প্রধান মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময় শীতের সবজির সঙ্গে কুমড়ার বড়ির মিশ্রণ একটি জনপ্রিয় খাবার।

গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় এ দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় এখন কুমড়ার বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গৃহিণীরা। শীতকালীন রসনা বিলাসের অন্যতম সুস্বাদু খাদ্য কুমড়ার বড়ি। এখন শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, শহরেও কুমড়ার বড়ির চাহিদা অনেক।

এই কুমড়া বড়ির চাহিদা বাড়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবেও বড়ি তৈরি হচ্ছে। দেশব্যাপী কুমড়া বড়ির চাহিদা থাকায় সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিকভিত্তিতে কুমড়ার আবাদ হয়ে থাকে। কুমড়া দিয়েই তৈরি করা হয় বড়ি।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, কুমড়ার বড়ি দিলে তরকারীর স্বাদই পাল্টে যায়। পাকা কুমড়া সাধারণত শীতের শুরুতেই পাওয়া যায়। এ কুমড়ার সঙ্গে কলাইয়ের ডাল পিসে কাপড় অথবা বিশেষ নেটে ছোট ছোট বড়ি করে রোদে শুকালেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। এটিই তরকারীর মধ্যে দিলে তা হয়ে ওঠে অত্যন্ত সুস্বাদু। শীত মৌসুমের দেওয়া বড়ি সংরক্ষণ করে সারাবছর খাওয়া হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, শীতের শুরু থেকেই জেলার শ্যামনগরে বাড়ি বাড়ি গৃহিণীরা কুমড়ার বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ যেন গৃহিণীদের চিরাচরিত উৎসব হয়ে উঠেছে।

সাতক্ষীরা জেলার একাধিক গৃহিণী জানান, সারাদেশে কী হয় তারা জানেন না; তবে শীত আসলেই এ অঞ্চলে কুমড়ার বড়ি তৈরির ধুম পড়ে। এ বড়ি ঘরে রেখে সারা বছর তরকারিতে দিয়ে তরকারি সুস্বাদু করে খাওয়া হয়। এর আগে বর্ষা মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের প্রায় বাড়িতে লাগানো হয় কুমড়া গাছ। এ গাছগুলো লতিয়ে গেলে উঠিয়ে দেওয়া হয় বসবাসের ঘর, গোয়ালঘর, রান্নাঘরের ছাদ অথবা চালে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাচা করে এ গাছের লতাগুলো উঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনো প্রকার সার ছাড়াই এখানে আপন গতিতে লতিয়ে বেড়ে উঠে এক সময় কুমড়ার ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে কাঁচা বা জালি কুমড়া তরকারী অথবা ভাজি করে খাওয়া হয়। বাকিগুলো রেখে দেওয়া হয় বড়ি দেওয়ার জন্য। কুমড়াগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়ে ছাদে অথবা টাল বা মাচংয়ে ঝুলতে থাকে। এক পর্যায়ে কুমড়া পেকে এর গায়ে সাদা গুড়া পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে গাছের তরতাজা ভাব কেটে গিয়ে এক সময় মরে যায়। তখন গৃহিণীরা কুমড়াগুলো ঘরে রেখে সংরক্ষণ করে শীতের জন্য অপেক্ষা করেন।

তারা আরো জানান, শীতের শুরুতে নতুন কলাইয়ের ডাল ক্ষেত থেকে উঠলে অথবা বাজারে আসলে এ কলাইয়ের ডাল এনে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে এ ডাল পানিতে ভিজে রসালো হয়ে উঠলে পরে উপরের কালো ছাল তুলে ফেলা হয়। এরপর কুমড়া কেটে ছোট ছোট টুকরা বড়ির সঙ্গে মিশিয়ে মেশিনে অথবা ঢেঁকিতে একসঙ্গে পিসে ফেলা হয়। এরপর বাড়িতে এনে পাত্রে ফেলে হাত দিয়ে ভালো করে মাখানো হয়। এক পর্যায়ে আঠালো হয়ে উঠলে নতুন কোন নেট, টিন, চালুনী, পরিষ্কার কাপড়ে ছোট ছোট বড়ি আকারে দিয়ে রোদে শুকাতে হয়। এরপর এটা হয় তরকারীতে দেওয়ার উপযোগী।

কলারোয়া উপজেলার ফতেমা বেগম জানান, শীত মৌসুমে কুমড়ার বড়ি দেওয়া এ জেলার নারীদের জন্য একটি উৎসব। কেননা প্রতিটি পরিবারেই এর জন্য আয়োজন থাকে। আবহমান কাল থেকেই এমন রেওয়াজ চালু রয়েছে। তবে আগের চেয়ে কুমড়ার বড়ি দেওয়ার কষ্ট কমে গেছে। আগে কলাইয়ের ডাল পিসা হতো ঢেঁকিতে। কিন্ত বর্তমানে যন্ত্রে তা করা হচ্ছে।

সদর উপজেলার গৃহিণী নাজমা বেগম জানান, এ বছর তিনি প্রতিকেজি ১৭০-১৮০ টাকা দরে কলাইয়ের ডাল ও ৩০ টাকা কেজি দরে তিনটি কুমড়া কিনে বড়ি দিয়েছেন। অর্ধেক পরিবারের জন্য রেখে বাকিটা ঢাকা শহরে বসবাসরত এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠাবেন। বড়ি ভালোমতো শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে সারাবছর খাওয়া যায়। মাছ না থাকলেও তরকারী বড়ি দিয়ে রান্না করলে অত্যন্ত লোভনীয় স্বাদ হয়।

তালা উপজেলার করিমন বেগম জানান, কুমড়া বড়ি তৈরি গৃহিণীদের জন্য শীতকালীন রুটিন কাজ। এ বড়ি নিয়ে গ্রাম্য সমাজে রয়েছে নানা কুসংস্কার। কেউ বড়ি দিলে ওইদিন যদি কুয়াশায় সূর্যের দেখা না মেলে তাহলে অনেকে বলে থাকেন বড়ি দেওয়া গৃহিণীর কারণে সূর্য়ের দেখা মিলছে না।

শ্যামনগর বাজারের মুদি দোকানদার এলাই বক্স জানান, তিনি দোকানে সব জিনিসের সঙ্গে সব ধরনের ডালও বিক্রি করেন। তবে শীত শুরু হলে বড়ি দেওয়া কলাইয়ের ডাল খুব বিক্রি হয়। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর কলাইয়ের ডালের ব্যাপক চাহিদা। প্রতিকেজি ডাল এখন ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন।

আমারবাঙলা/এনআই

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার

জনস্বার্থে ন্যায্য ও সময়োপযোগী প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দেশের ত...

ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  

ইসি যে সময় ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে সে সময়ের জন্য প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী&rs...

ইরানের হামলায় ইসরায়েলে অনেক হতাহত

ইসরায়েলে ভয়ংকর হামলা চালিয়েছে ইরান। শনিবার মধ্যরাত ও রবিবার ভোরে ইসরায়েলের বি...

হঠাৎ উত্তপ্ত প্রেস ক্লাব, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

গণজমায়েতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে প্রব...

ড্রয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু মেসির মায়ামির

নতুন কিছু প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে জমকালো উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আজ...

ইসরায়েলে আবারো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বহু হতাহত

ইসরায়েলে আবারো ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। ইসরায়েলের তেল আবিব ও বন্দরনগরী...

আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার

জনস্বার্থে ন্যায্য ও সময়োপযোগী প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দেশের ত...

ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  

ইসি যে সময় ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে সে সময়ের জন্য প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী&rs...

হঠাৎ উত্তপ্ত প্রেস ক্লাব, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

গণজমায়েতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে প্রব...

যদি ইসরায়েল থামে তবে আমরাও থামবো: ইরান

ইরান-ইসরায়েল চলমান পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা