সংগৃহীত
ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

ইরাকের ওয়াদি আস সালাম যেন মৃতদের নগরী

আমার বাঙলা ডেস্ক

পাখির চোখে দেখলে মনে হবে এটি একটি জনবহুল নগরী। অসংখ্য ইটের স্থাপনা পাশাপাশি রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এই নগরীতে অগণিত ঘর আছে; তবে তা মৃতদের। এখানে যতদূর দৃষ্টি যায়, ততদূর পর্যন্ত দেখা যায় শুধু মৃতের মিছিল। ধারণা করা হয়, এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ কবরস্থান ওয়াদি আস সালাম।

ইরাকের নাজাফ শহরে অবস্থিত এ কবরস্থান প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। এখানে শুয়ে আছেন লাখো মানুষ; যার মধ্যে রয়েছেন রাজা, ইমাম, বিজ্ঞানী ও বণিক।

নাজাফ শহরটি হচ্ছে দেশটির বৃহত্তম শহরগুলোর মধ্যে একটি। এর আয়তন প্রায় ২৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার। আর জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। কিন্তু এটি শুধুমাত্র জীবিত মানুষের সংখ্যা। শহরটির উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত কবরস্থানে শায়িত আছে অর্ধ কোটিরও অধিক মানুষ!

কিন্তু কেন এত মানুষকে এখানে কবর দেওয়া হয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ফিরে যেতে হবে বহু বছর আগে।

ওয়াদি আস সালামে শুয়ে আছেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা, আলি (রা.)। শিয়া মুসলিমদের কাছে আলির (রা.) কবর বিশেষ পবিত্র স্থান। তারা বিশ্বাস করেন, হজরত আলির (রা.) মাজারের পাশেই এই কবরস্থানটি একটি বেহেশতের খণ্ড, যেখানে মুমিনদের রূহ জান্নাত লাভ করে। এ কারণে বহু মানুষ জীবনের শেষ ঠিকানা হিসেবে নাজাফকে বেছে নেন। এ ছাড়া হজরত হুদ (আ.) এবং হজরত সালেহের (আ.) কবরও এখারে রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়।

ইতিহাস বলে, সাসানীয় এবং পার্থিয়ান যুগ থেকেই নাজাফ কবরের জন্য জনপ্রিয় স্থান। শিয়াদের বিশ্বাস, সে সময় এই অঞ্চলে নিয়মিত ভূমিকম্প হতো। কিন্তু হজরত ইবরাহীম (আ.) যতদিন এখানে অবস্থান করেছিলেন, ততদিন পর্যন্ত কোনো ভূমিকম্প হয়নি। পরবর্তীতে এক রাতে ইবরাহীম (আ.) পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে গেলে সেদিনই নাজাফে ভূমিকম্প হয়। তখন এলাকাবাসী তাকে অনুরোধ করলে তিনি তা রক্ষা করতে পারেননি। তবে সেখানে নিজের নামে এক টুকরো জমি ক্রয় করেন। সেই জমির টুকরোটিই বর্তমানে ওয়াদি আস্-সালাম কবরস্থান। শিয়াদের মধ্যে প্রচলিত ধারণা, হজরত ইবরাহীম (আ.) বলেছিলেন, এই স্থানটি পুনরুত্থানের জায়গা হবে, যেখানে ৭০ হাজার মানুষ বিনা হিসেবে বেহেশত লাভ করবে।

ওয়াদি আস-সালাম কবরস্থানের কবরগুলো পোড়ামাটির ইটের তৈরি, বিভিন্ন আকার এবং আকৃতির। অনেক কবরের উপর পবিত্র কোরআনের আয়াত খোদাই করা থাকে। এখানে কিছু পারিবারিক সমাধি কক্ষও আছে, যেগুলোতে অনেক মৃতদেহ শায়িত করা যায়। সমাধি কক্ষগুলোতে প্রবেশের জন্য মই ব্যবহার করতে হয়।

২০০৩ সালে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী ইরাক আক্রমণের সময়, ইরাকি গেরিলারা এই কবরস্থানটি যুদ্ধের কৌশলগত কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। সরু গলির কারণে মার্কিন বাহিনী সহজে প্রবেশ করতে পারত না এখানে; ফলে গেরিলারা আক্রমণ চালিয়ে আত্মগোপন করতেন। পরবর্তীতে, মার্কিন সমর্থিত ইরাকি বাহিনীর হামলায় কবরস্থানের কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে আইএসবিরোধী যুদ্ধে নিহত শিয়া মিলিশিয়াদের কবর দেওয়ার কারণে কবরস্থানের আয়তন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

নাজাফের এ কবরস্থানে বছরে প্রায় এক লাখ মরদেহ দাফন করা হয়। প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ জনকে এখানে সমাহিত করা হয়। মূলত ইরাক, ইরান, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য দেশ থেকে মানুষকে এখানে কবর দিতে আনা হয়। তবে মরদেহ নাজাফে নিয়ে যাওয়ার এ প্রথা ১৩ শতক থেকেই শুরু হয়েছে। তখন মরদেহ পরিবহনের সঙ্গে একটি বিশাল ব্যবসাও গড়ে উঠেছিল। এ নিয়ে ফতোয়া পর্যন্ত জারি করতে হয়েছিল, যাতে মরদেহ পরিবহনে শৃঙ্খলা বজায় থাকে।

এখানে কিছু কবরের আকার বেশ বড়। শিয়া সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ রীতি হলো কবরের গভীরতা নির্দিষ্ট রাখা এবং মরদেহকে মক্কার দিকে মুখ করে রাখা।
ওয়াদি আস সালামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এটি শুধু মৃতদের জন্য নয়, জীবিতদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ স্থান। শিয়া সম্প্রদায়ের বহু মানুষ এখানে আসেন মর্সিয়া পাঠ এবং ধর্মীয় আচার পালনের জন্য। প্রতি শুক্রবার এবং রমজানের শেষ দশ দিনে এখানে ভিড় জমে যায়। বিশেষ করে লাইলাতুল কদরের রাতে কবরস্থান মানুষের ঢল নামে, যারা তাদের প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করতে আসেন। তাই বলা হয়, এই কবরস্থান মধ্যপ্রাচ্যের নানা সংঘাত, যুদ্ধ এবং ইতিহাসের সাক্ষী।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রাজনৈতিক দলের সমর্থন না পেলে সব কাজ বিফলে যাবে: সিইসি

প্রবাসী ভোটিং পদ্ধতি বাছাইয়ে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনদের সমর্থন আশা করেন প্রধা...

কানাডায় জয়ের পথে মার্ক কার্নির লিবারেল পার্টি

কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্...

কাশ্মীর সীমান্তে টানা পঞ্চমবারের মতো গোলাগুলি

কাশ্মীর সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব কন্ট্রো...

মহাবিশ্বের কাঠামো কত বড়?

হারকিউলিস-করোনা বোরেলিস গ্রেট ওয়াল মূলত বিভিন্ন গ...

সাবেক সংসদ সদস্য তুহিনের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি

সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রকৌ...

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন  ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা