কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) জুলাই বিপ্লবী শহীদ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজা শেষে হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জুম্মার নামাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকেই বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় আবাসিক হল থেকে ছাত্রীরাও মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।
জানাজার নামাজে ইবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আল্লাহ জীবন-মৃত্যু নির্ধারণ করে রেখেছেন, তবুও এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কষ্টকর। আমি তাহাজ্জুদ নামাজে হাদির জন্য দোয়া করেছি। আপনারাও তার জন্য দোয়া করবেন।”
জানাজা শেষে বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘তুমি কে আমি কে, হাদি হাদি’, ‘ভারতের আগ্রাসন, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘আমরা সবাই হাদি হবো, গুলির মুখে কথা ক’বো’—সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে বটতলায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থী তাজমিন বলেন, “খুনি যদি পৃথিবীর শেষ প্রান্তে কিংবা জাহান্নামেও গিয়ে থাকে, সেখান থেকে ধরে এনে বিচার করতে হবে। আমাদের জুলাই থামেনি, জুলাই চলমান, শহীদদের তালিকাও চলমান। আমরা মনে করি, আমাদের সামনে একটি অঘোষিত যুদ্ধ চলছে, আর এই যুদ্ধে আমরা সবাই শরিক হবো।”
শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মো. ইউসুফ আলী বলেন, “অনেকে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের অফিস ভাঙচুরে সুশীলতা দেখাচ্ছেন। এসব ভণ্ডামি করবেন না। হাদি ভাই একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম ছিলেন। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনার নামে ইসলামের বাইরে কোনো সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “হাদিকে ‘জঙ্গি’ বলে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ইবির এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি। সাত দিনের মধ্যে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহমেদ বলেন, “হাদীর ওপর হামলার পরও প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এসব অজুহাত চলবে না। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর বেশ কয়েকজন প্রার্থী হামলার শিকার হয়েছেন। পতিত হাসিনা ও ভারতীয় দাসরা দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। এর বিরুদ্ধে আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”
তিনি দাবি জানান, “শহীদ ওসমান হাদির নামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন একটি হলের নামকরণ করতে হবে এবং প্রশাসনকে দ্রুত সাজিদ হত্যার বিচার করতে হবে।”
এ সময় ইবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এস এম সুইট বলেন, “ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী যাদের অবস্থান ছিল, তাদের নিরাপত্তা রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারেনি। ২০১৭ সালে আবরারকে হত্যা করে চিন্তা ও মতাদর্শ নিশ্চিহ্ন করা যায়নি, বরং তা বহুগুণে ফিরে এসেছে।”
তিনি দাবি জানান, “ইবির যেসব শিক্ষক অতীতে ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের দ্রুত অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
সমাবেশ শেষে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
আমারবাঙলা/এসএ