টিনের ছোট ঘর। সেই ঘরজুড়ে সংসারের অভাবের ছাপ। সামনের ছোট উঠান ভরে গেছে স্বজন–প্রতিবেশীতে। স্বজনেরা বিলাপ করছেন, প্রতিবেশীরা করছেন আফসোস। সেখানে বসে আছেন গোপালগঞ্জে গতকাল বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা–সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ইমন তালুকদারের (১৭) মা রোকসানা বেগম।
নিহত ইমন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার গ্রামের আজাদ তালুকদারের ছেলে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকালে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলে হারানোর শোকে বাক্রুদ্ধ মা। কেউ তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কেউ সান্ত্বনা দিতে এসে নিজেই কাঁদছেন। তবুও ইমনের মা রোকসানার মুখে একটি শব্দও নেই।
নিহত ইমনের মামাতো ভাই রানা ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার ভাইডারে প্রাণে মাইরে ফ্যালতে হলো। ও তো প্রাণভিক্ষা চাইছেল। তার পরেও কেন মারতে হলো? কীভাবে মারল, আমরা তো ভিডিওতে দেখলাম। কীভাবে সহ্য করব? গুলি করে ফেলে পাড়ায় ধরে মাইরা ফেলল।’
প্রতিবেশী রাজু তালুকদার বলেন, ওরা দুই বোন ও তিন ভাই। বড় ভাই অসুস্থ। একটা বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট বোন আর ভাইটা পড়াশোনা করে, সেই খরচ ইমনই চালাত। ওর বাবা অসুস্থ। এ নিয়েই কখনো কখনো ভ্যান চালান। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বাবা একদম পাগল হয়ে গেছেন। ছেলের জানাজায় পর্যন্ত থাকেননি। বাড়ি থেকে কোথায় যেন চলে গেছেন, কেউ জানে না।
একপর্যায়ে ইমনের মা রোকসানা বেগম বলে ওঠেন, ‘এখন আমার সংসার বাঁচাবার মতো আর কেউ নাই। ছাওয়াল মরসে শুইনা ওর বাপ পাগল হইয়া চইলা গেছে। আমার বাপে সংসারটা টানত। এখন আমার চারটে–পাঁচটা ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকার কোনো পথ নাই, বাঁচার পথ নাই। আমার ছেলেরে যেমন পাড়ায় মারছে, গুলি করে মারছে, আমি এর বিচার চাই।’
পরিবারের সদস্যরা জানান, নিহত ইমন তালুকদার গোপালগঞ্জ শহরে মুন্সি ক্রোকারিজ দোকানের কর্মচারী ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে সে অন্য দিনের মতো দোকানে যায়। দোকানের মালিক তাকে দেড় শ টাকা দিয়ে বেলা ১১টার দিকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। ইমন বাড়ি না গিয়ে সংঘর্ষস্থলে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে আইনি প্রক্রিয়া শেষে আজ সকাল সাড়ে সাতটায় গোপালগঞ্জ গেটপাড়ার পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
আমারবাঙলা/জিজি
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            