২০১৯ সালের ঘটনা। ইংল্যান্ডে চলছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সঞ্জনা গণেশান তখন কাজ করছেন সম্প্রচারক হিসেবে। স্বাভাবিকভাবেই সব ক্রিকেটারের সঙ্গে পরিচয় ছিল তাঁর। সৌজন্যের খাতিরে মাঠে সবাই হেসে ‘হাই’ বলতেন তাঁকে। শুধু একজন ছিলেন ব্যতিক্রম।
যশপ্রীত বুমরা যেন তাঁকেই পাত্তাই দিতেন না। অথচ এর দুই বছর পর সেই বুমরার সঙ্গেই বিয়ে হয় সঞ্জনার। দুজনের প্রথম দেখার সেই গল্প ভারতের সাবেক ক্রিকেটার হরভজন সিং ও তাঁর স্ত্রী গীতা বসরার ইউটিউব চ্যানেলে শুনিয়েছেন বুমরা ও সঞ্জনা।
সঞ্জনা তখন ভেবেছিলেন, বুমরা হয়তো বিবাহিত অথবা প্রেমিকা আছে। নইলে মেয়েদের থেকে দূরে কেন থাকবেন! বুমরার দাবি, তিনি ছিলেন অনেক লাজুক। ২০১৯ বিশ্বকাপের ঘটনা নিয়ে সঞ্জনার ভাষ্য, ‘২০১৯ বিশ্বকাপে আমি কাজ করছিলাম, তাই প্র্যাকটিস সেশনে নিয়মিতই যেতাম। ডিকে (দিনেশ কার্তিক) আর অন্য অনেক ক্রিকেটার আমাকে চিনত, ওরা খুব স্বাভাবিকভাবেই “হাই” বলত। আমি হেসে জবাব দিতাম, তারপর নিজের কাজে মন দিতাম। বুমরা একটা গোটা দলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে, যাদের সবাই আমাকে “হাই” বলছে...আর সে? দাঁড়িয়ে আছে একদম কাঠ হয়ে থাকা মুখ নিয়ে।’
কেন? সঞ্জনা যা ভেবেছিলেন সেটাও বলেছেন, ‘আমি ভাবলাম, নিশ্চয় প্রেমিকা আছে, না হয় বউ। কোথাও বসে দেখছে হয়তো। একেবারে কাঠ হয়ে আছে, ভাবটা এমন যেন-‘‘আমি কাউকে হাই বলব না। চোখে চোখও পড়তে দেব না। একটা গম্ভীর চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থাকব।”’
বুমরার কথায়, পুরো ব্যাপারটাই ভুল–বোঝাবুঝি! লাজুক বলেই নাকি তখনকার অপরিচিত মেয়ে সঞ্জনার সঙ্গে কথা বলেননি বুমরা, ‘গল্পটা একদম একপক্ষীয়। সঞ্জনা ভেবেছিল আমি বিয়ে করে ফেলেছি! কে জানে এই চিন্তা ওর মাথায় এল কোথা থেকে! আসলে আমি একটু লাজুক, নতুন কারও সঙ্গে সহজে মিশি না। একটু সময় লাগে। ওকে তখন চিনতাম না, তাই স্বাভাবিকভাবেই গিয়ে “হাই-হ্যালো” বলিনি। কিন্তু উনি ধরে নিলেন, এই ছেলে চোখে চোখও ফেলছে না, নিশ্চয় বউ আশপাশে বসে দেখছে! এটা কী ধরনের যুক্তি বলেন তো?’
সঞ্জনাকে অবশ্য প্রেমের প্রস্তাব বুমরাই দিয়েছিলেন। সেটা অনেক লড়াইয়ের পর। পুরো গল্প শুনুন বুমরার মুখে, ‘কোভিডের সময়ের কথা। সবার জন্য আলাদা বাবল (২০২১ আইপিএলে) ছিল। ভাগ্য ভালো, সে সময় সঞ্জনা ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সে, আমি মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে। দুই দলই আবুধাবিতে ছিল। আমি একটা আংটি নিয়ে গিয়েছিলাম, ভাবছিলাম টুর্নামেন্ট শেষে হয়তো সুযোগ পাব। কিন্তু মাঠের বাইরেও তো দেখা করা যেত না বাবলের কারণে।’
বুমরা যোগ করেন, ‘তাই আমাকে বলতে হলো সবাইকে, এ আংটি নিয়ে এসেছি, দয়া করে বাবল থেকে বাবলে হাতবদল করে দাও। সেটা করাও হলো। ও যখন এল, আমি নিজে সব করলাম-কেক সাজালাম, ঘর গোছালাম আর আংটি হাতে নিয়ে প্রস্তুত ছিলাম।’
সঞ্জনা এ সময় বলেন, ‘আমি ঘরে ঢুকলাম, সে বলল, “ব্যালকনিতে চলো”। আমি বললাম মাত্র এলাম, আগে তো একটু পানি দাও। কিন্তু সে বলল, “না না, ব্যালকনিতে চলো।”’
বুমরা এমনটা করেছেন ভালোবাসার কথা জানাবেনই বলেই, ‘আমি মোমবাতি জ্বালিয়েছিলাম, যেটা সমুদ্রের দিকে ছিল। বাতাস আসছিল, যে কারণে বারবার নিভে যাচ্ছিল। খুব কষ্ট করেছিলাম।’
এসবের ফল তো সবারই জানা। ২০২১ সালের ১৫ মার্চ বিয়ে হয় তাঁদের। বুমরা ও সঞ্জনা দুজনেই এখন ইংল্যান্ডে। সেখানে টেস্ট সিরিজে একজন খেলছেন আর একজন সম্প্রচার করছেন।
আমারবাঙলা/জিজি