শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হতেই পর্যটকের ঢল নেমেছে কক্সবাজারে। সৈকতজুড়ে এখন মানুষের পদচারণা, হোটেল-মোটেল প্রায় পরিপূর্ণ, ব্যস্ত সময় পার করছে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব খাত। লোকের মুখে মুখে কক্সবাজার এখন ‘পর্যটন রাজধানী’।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, আগামী সপ্তাহে পর্যটকের সংখ্যা আরও কয়েক লাখ বাড়তে পারে। এই বাড়তি ভিড়ের সঙ্গে সঙ্গে সামনে এসেছে পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রশ্নও।এমন প্রেক্ষাপটে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদের বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি কক্সবাজারেই দায়িত্ব পালন করবেন।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ট্যুরিস্ট পুলিশের সদর দপ্তর থেকে জারি করা এক অফিস আদেশে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। আদেশে বলা হয়, প্রশাসনিক ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কক্সবাজার রিজিয়নে তাঁর বদলির কার্যকারিতা স্থগিত রাখা হলো।
বদলির আদেশ, তারপরও দায়িত্বে
জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর আপেল মাহমুদ নিজেই পুলিশ সদর দপ্তরে বদলির জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০ ডিসেম্বর তাঁকে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করার আদেশ জারি করা হয়।
জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনেও বিষয়টি উল্লেখ ছিল।
তবে হঠাৎ করে পর্যটকের চাপ বেড়ে যাওয়া, আসন্ন পর্যটন মৌসুম এবং নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ওই বদলির আদেশ কার্যকর করা হয়নি। ফলে প্রশাসনিকভাবে বদলির আদেশ থাকলেও বাস্তবে তিনি কক্সবাজারেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
মাঠে সক্রিয় ট্যুরিস্ট পুলিশ
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, বদলির আদেশ জারি হলেও মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম থেমে নেই। কক্সবাজারের প্রতিটি জোন ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একাধিক শিফটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। সৈকত, হোটেল এলাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
একাধিক পর্যটন ব্যবসায়ী বলেন, “যেকোনো সময় আপেল মাহমুদকে পাওয়া যায়। ফোন দিলেই সাড়া দেন। কক্সবাজারের মতো পর্যটন নগরীতে এমন নেতৃত্ব খুব প্রয়োজন।”
নিরাপত্তা জোরদারে বিশেষ ভূমিকা
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নে যোগদান করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি পর্যটন এলাকার নিরাপত্তা জোরদার, চুরি-ছিনতাই ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, সৈকতের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাতেও ট্যুরিস্ট পুলিশের অভিযান চালু হয় তাঁর সময়েই। এতে পর্যটকদের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি বেড়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
হতাশা ও প্রত্যাশা
আপেল মাহমুদের হঠাৎ বদলির খবরে পর্যটন ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছিল। তাঁদের মতে, পর্যটনের মৌসুমে অভিজ্ঞ ও মাঠঘনিষ্ঠ কর্মকর্তার বদলি কক্সবাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এক হোটেল মালিক বলেন, “আপেল মাহমুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ট্যুরিস্ট পুলিশকে সব সময় পাশে পেয়েছি। তাঁর নেতৃত্বে আমরা অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করি।”
প্রশাসনিক সূত্র জানায়, শিগগিরই কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের কথা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে আপেল মাহমুদের অভিজ্ঞতা ও উপস্থিতি জরুরি হয়ে পড়েছে।
পর্যটনের শহর কক্সবাজারে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পর্যটকের ঢল সামলাতে সেই দায়িত্বেই আপাতত কক্সবাজারেই থাকছেন অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ।