বিশ্বব্যাপী ইউরিক অ্যাসিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন দিন বেড়েই চলেছে।ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। ইউরিক অ্যাসিড ধরা পড়া মানেই, আজ এটা খাওয়া যাবে না, তো কাল সেটা। কিন্তু জানেন কি, খাওয়া কমালেই যে ইউরিক অ্যাসিড কমবে তা নয়? বরং রোজের অভ্যাসে কিছু বদল আনলেই এই রোগকে জব্দ করা সম্ভব।খাবার হজমের সময় ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এটা প্রস্রাবের স্বাভাবিক উপাদান। মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন খেলে বা ওজন বাড়লে কখনও কখনও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড শরীরের অস্থিসন্ধি ও মূত্রনালিতে জমা হয়। তখন গাঁটে ব্যথা ও প্রস্রাবের সংক্রমণ হতে পারে। কিডনিতে পাথরও জমতে পারে এই সমস্যার কারণে।আর উচ্চমাত্রার ইউরিক অ্যাসিডের কারণে রক্তনালিতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি হয়। তখন অনেকটা নীরবেই ধমনির ভেতরের আস্তরণ এন্ডোথেলিয়াম হয় ক্ষতিগ্রস্ত। এ থেকে ভবিষ্যতে হৃদরোগের শঙ্কাও দেখা দেয়। তাই ইউরিক অ্যাসিডকে এখন আর কেবল বাতব্যথার কারণ হিসেবে দেখেন না বিজ্ঞানীরা। নীরবে হৃদযন্ত্র দুর্বল করে দিতে পারে ইউরিক অ্যাসিড।আর যাঁদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিড অনেক বেশি, তাঁদের হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের মতো হৃদ্রোগের ঝুঁকিও বেশি। উচ্চমাত্রার ইউরিক অ্যাসিডের কারণে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকলেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি কী?
ইউরিক অ্যাসিড হল একটি প্রাকৃতিক বর্জ্য পদার্থ, যা শরীরের ভেতর পিউরিন নামক রাসায়নিকের ভাঙনের মাধ্যমে তৈরি হয়। এটি সাধারণত কিডনির মাধ্যমে মূত্রের সাথে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যখন এটি শরীরে বেশি তৈরি হয় বা যথাযথভাবে বের হয় না, তখন তা রক্তে জমা হয়ে যায় এবং সৃষ্টি করে হাইপারইউরিকেমিয়া। অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড জমে গিয়ে গেঁটে বাত (Gout), কিডনির পাথর, এমনকি কিডনির ক্ষতিও করতে পারে।
ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির কারণ
- কিডনির সমস্যা থাকলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে
- অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে
- বিয়ার জাতীয় অ্যালকোহল পান করলে
- সোরিয়াসিস জাতীয় চর্মরোগ
- থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে
- কিছু রক্তরোগ আছে যার কারণে ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে পারে
- ক্যান্সারের চিকিৎসা এবং কিছু ওষুধের পার্শ্বঃপ্রতিক্রিয়ার কারণে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে
- এ ছাড়া ইউরিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খেলেও এর মাত্রা বেড়ে যায়।
- জেনেটিক প্রবণতা : পরিবারে কারও গেঁটে বাত বা কিডনির সমস্যা থাকলে ঝুঁকি বেশি থাকে।
লক্ষণ
ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি সব সময় উপসর্গ সৃষ্টি না করলেও, কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে—
- গেঁটে বাত : এটি ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির সবচেয়ে সাধারণ এবং বেদনাদায়ক লক্ষণ। বিশেষ করে পায়ের বুড়ো আঙুল, হাঁটু, গোড়ালি বা কবজিতে হঠাৎ ব্যথা, ফোলা ও লালচে ভাব দেখা যায়।
- কিডনিতে পাথর : অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড কিডনিতে জমে পাথর তৈরি করতে পারে।
- স্থায়ী ক্লান্তি ও দুর্বলতা: অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে দুর্বলতা অনুভূত হয়।
- বিরক্তিকর প্রস্রাব বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া।
ইউরিক এসিডের উচ্চ মাত্রার লক্ষণ
- উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড মাত্রার সাথে যুক্ত উপসর্গ যা গাউটের কারণ হতে পারে:
- বেদনাদায়ক বা ফোলা জয়েন্টগুলোতে
- জয়েন্টের চারপাশে বিবর্ণতা বা চকচকে ত্বক
- জয়েন্টগুলি স্পর্শে উষ্ণ অনুভব করে
ইউরিক অ্যাসিডের কারণে কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:-পিঠের দুপাশে ব্যথা, ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া,প্রস্রাব মেঘলা দেখায় বা এতে রক্ত থাকে বা অস্বাভাবিক গন্ধ হয়,বমি বমি ভাব
কম ইউরিক অ্যাসিডের ক্ষেত্রে উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের তুলনায় কম সাধারণ। কম ইউরিক অ্যাসিডের লক্ষণগুলির মধ্যে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে, যা ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে: সাধারণত ইউরিক অ্যাসিডের রক্তে স্বাভাবিক মাত্রা পুরুষের জন্য ৩.৪–৭.০ mg/dL এবং নারীর জন্য ২.৪–৬.০ mg/dL। এর বেশি হলে তা হাইপারইউরিকেমিয়া বোঝায়।প্রস্রাব পরীক্ষা: ইউরিক অ্যাসিড কতটা নিঃসরণ হচ্ছে তা যাচাই করা হয়।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ
যেসব খাবার শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়
সুস্থ থাকতে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায় যেসব খাবার সেগুলো পরিহার করা উচিত। যেমন-লাল মাংস, যেমন- গরু, খাসি, ভেড়া বা হাঁসের মাংস, মগজ, কলিজা, গুর্দা (কিডনি), ফুসফুস, মুরগির চামড়া, চিংড়ি, কাঁকড়া, শুঁটকি ও অন্যান্য সামুদ্রিক খাবার, কোমল পানীয়, বিয়ার জাতীয় অ্যালকোহল, অতিরিক্ত লবণ।
কী খেতে পারবেন:-শাকসবজি, ডাল, ডিম, দুধ ডাল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বীজ এবং অন্যান্য কিছু সবজি আগে ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে খেতে নিষেধ করা হতো। কিন্তু এখন দেখা গেছে, এই সবজিগুলো ইউরিক অ্যাসিড বাড়ানোতে বা রোগ সৃষ্টিতে কোনো ভূমিকা রাখে না। এজন্য এখন সবজি খেতে নিষেধ করা হয় না। প্রচুর পানি পান করুন (দিনে অন্তত ২.৫–৩ লিটার), যা ইউরিক অ্যাসিড প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করতে সাহায্য করে।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণ
ওজন কমালে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে এবং ইউরিক অ্যাসিড কমে। নিয়মিত ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাঁতার, যোগব্যায়াম উপকারী।
৩. অ্যালকোহল ও মিষ্টি পানীয় পরিহার
বিয়ার ও চিনি-সমৃদ্ধ কোমল পানীয় ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়, তাই তা পরিহার করতে হবে।
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে ঘরোয়া সমাধান : সকালে লেবু-পানি :-ঘরোয়াভাবে ইউরিক অ্যাসিড কমাতে দিনটা শুরু করুন লেবুর রস মেশানো এক গ্লাস গরম পানি দিয়ে। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড ভেঙে শরীর থেকে সহজে বের করতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন সকালে অর্ধেকটা লেবুর রস এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন।
হলুদ-দুধ: হলুদ মেশানো দুধ ইউরিক অ্যাসিড কমাতে দারুণ কার্যকর। হলুদের প্রধান উপাদান কারকিউমিন শরীরের প্রদাহ কমায় ও ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখে। এক গ্লাস গরম দুধেএক চিমটি হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খেলে শরীরে এর ইতিবাচক প্রভাব টের পাবেন ধীরে ধীরে।
শসার রস: শসার রস শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা ও সতেজ রাখে। শসার প্রায় ৯০ শতাংশই পানি, যা শরীরের টক্সিন ও ইউরিক অ্যাসিড বের করে দিতে সাহায্য করে। পাশাপাশি শসায় পিউরিন কম থাকে, তাই এটি ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার ঝুঁকি কমায়।
তরমুজের রস: তরমুজও ইউরিক অ্যাসিড কমাতে দারুণ কাজে আসে। তরমুজ পানিতে ভরপুর, যা কিডনিকে ইউরিক অ্যাসিড বের করে দিতে সাহায্য করে। তরমুজেও পিউরিন খুব কম। তাই সুযোগ পেলেই এক গ্লাস তরমুজের রস খেলে সতেজ থাকবেন, পাশাপাশি ইউরিক অ্যাসিড কমাতেও সহায়ক হবে।
আদা–চা: আদা–চা দারুণ স্বাস্থ্যকর। আদায় আছে প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক উপাদান, যা ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে। কয়েক টুকরা তাজা আদা পানিতে সেদ্ধ করে তাতে একটু মধু মিশিয়ে চা বানান, এটি জয়েন্টের ব্যথা কমায় আর শরীরের জন্যও খুব উপকারী।
গ্রিন টি: গ্রিন টি শুধু মন শান্ত করে না, শরীরের ভেতরটাও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে বের করতে সহায়তা করে। নিয়মিত গ্রিন টি খেলে কিডনির কার্যকারিতা ভালো থাকে।
যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে নিজে থেকেই ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।গেঁটে বাতের হঠাৎ ব্যথা হলে বরফ সেঁক এবং বিশ্রাম নিন।নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন, বিশেষ করে যদি পূর্বে সমস্যা থাকে।পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপমুক্ত জীবন যাপন করুন।
রোগীর গল্প ১ – শ্রমজীবী রফিক সাহেবের ভোরের স্বস্তি
ভাটিয়ারী শাখার এক শীতল সকালে দরজায় কড়া নাড়ে মধ্যবয়সী এক লোক। তাঁর চোখে ক্লান্তি, মুখে কষ্টের ছাপ। ভেতরে এসে বসেই বললেন,
"ডাক্তার সাহেব, রাতে পায়ের বুড়ো আঙুলে এমন ব্যথা হয় যে ঘুমই আসে না। ভোরে উঠে কাজ করতে পারি না, পেটের ভাত জোটানোই দায় হয়ে গেছে।"
আমি তাঁর বিস্তারিত ইতিহাস নিলাম, পরীক্ষা করালাম। রিপোর্টে দেখা গেল—রক্তে ইউরিক অ্যাসিড ৮.৫ mg/dL। ব্যাখ্যা করে বললাম,
"রফিক ভাই, এই ব্যথা শুধু বাতের নয়, ইউরিক অ্যাসিডের জন্যই হচ্ছে। তবে ভয় পাবেন না, কিছু অভ্যাস বদল আর সঠিক চিকিৎসায় এটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।"
তাঁকে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, পর্যাপ্ত পানি পান ও কিছু উপসর্গভিত্তিক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ—কলচিকাম ও ব্রায়োনিয়া—দিলাম। তিন সপ্তাহ পর যখন তিনি ফিরলেন, হাতে এক প্যাকেট তাজা কলা আর চোখে আনন্দের ঝিলিক, বললেন,ডাক্তার সাহেব, আলহামদুলিল্লাহ, রাতের ব্যথা প্রায় চলে গেছে। এখন আবার সকালে ভ্যান চালিয়ে বাজারে যাই। জীবন যেন আবার গতি পেয়েছে।
রোগীর গল্প ২ – শিউলি বেগমের নীরব কষ্টের অবসান
এক বিকেলে, ৩৮ বছরের গৃহিণী শিউলি বেগম তাঁর স্বামীর সঙ্গে এলেন। আস্তে আস্তে বললেন,
"ডাক্তার সাহেব, হাঁটুর ব্যথায় রান্না করতেও কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে প্রস্রাবে জ্বালা করে, আর খুব ক্লান্ত লাগে।রক্ত পরীক্ষায় জানা গেল ইউরিক অ্যাসিড ৭.৯ mg/dL। আমি তাঁকে বোঝালাম,
"আপনার সমস্যাগুলো ইউরিক অ্যাসিডের জন্য। তবে ইনশাআল্লাহ, এটা কমানো সম্ভব।তাঁকে বারবেরিস ভালগারিস ও রাসটক্স ওষুধের পাশাপাশি ইউরিক অ্যাসিড কমানোর খাদ্য তালিকা দিলাম। নির্দেশ দিলাম দিনে অন্তত ৩ লিটার পানি পান করতে, অ্যালকোহল ও অতিরিক্ত লাল মাংস এড়িয়ে চলতে।এক মাস পরে তিনি ফিরে এসে খুশি হয়ে বললেন,
"ডাক্তার সাহেব, হাঁটতে আর কষ্ট হয় না, ঘরের কাজও আগের মতো করতে পারি। রাতে ভালো ঘুম হয়।তাঁর চোখের স্বস্তি যেন কথার চেয়েও বেশি কিছু বলছিল।
ছোট্ট আরাফাতের গল্প ৩ : ইউরিক অ্যাসিডের লুকানো বিপদ
ঢাকার এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ৯ বছরের ছেলে আরাফাত। খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ—সব কিছুতেই ছিল তার অসীম আগ্রহ। কিন্তু কয়েক মাস ধরে দেখা গেল, হঠাৎ হঠাৎ তার পায়ের আঙুল ফুলে যাচ্ছে, হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে, মাঝে মাঝে জ্বরও আসছে।প্রথমে বাবা-মা ভেবেছিলেন, এটা হয়তো সাধারণ কোনো চোট বা ঠান্ডাজনিত ব্যথা। কিন্তু ব্যথা ও ফোলা বাড়তে থাকায় একদিন তারা ভাটিয়ারীতে অবস্থিত ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল হোমিও রিসার্চ সেন্টার–এ নিয়ে আসেন।রোগীর ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা ও রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত হওয়া গেল—আরাফাতের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।ডা. মাজেদ বাবা-মাকে বুঝিয়ে বললেন—ইউরিক অ্যাসিড শুধু বড়দের সমস্যা নয়, শিশুদেরও হতে পারে। বেশি পিউরিনযুক্ত খাবার, কম পানি পান, স্থূলতা, এমনকি বংশগত কারণও এর জন্য দায়ী। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।”
চিকিৎসা পদ্ধতি,রোগীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ইতিহাস অনুযায়ী উপযুক্ত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্বাচন,খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন—ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় ও অতিরিক্ত লাল মাংস বাদ, প্রচুর পানি পান ও তাজা ফল-সবজি খাওয়ার পরামর্শ।প্রতিদিন অন্তত আধাঘণ্টা হালকা শারীরিক ব্যায়াম বা বাইরে খেলাধুলা,মাত্র তিন মাসের চিকিৎসার পর ফলোআপ পরীক্ষায় দেখা গেল—আরাফাতের ইউরিক অ্যাসিড স্বাভাবিক মাত্রায় নেমে এসেছে, এবং তার ব্যথা ও ফোলা সম্পূর্ণ সেরে গেছে। আজ আরাফাত আবার স্কুলের মাঠে দৌড়ঝাঁপ করছে, ফুটবল খেলছে—মুখে আগের মতোই হাসি।এই লেখার থেকে আমাদেরকে শেখায়—ইউরিক অ্যাসিড প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শিশুদেরও হতে পারে, তবে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
হোমিও প্রতিকার:হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে সমাধান, ইউরিক অ্যাসিডজনিত রোগীর সমস্যা, বিশেষ করে গেঁটে বাত, জয়েন্টের ব্যথা ও কিডনির জটিলতা নিয়ন্ত্রণে একটি অত্যন্ত কার্যকর ও নিরাপদ পদ্ধতি। হোমিওপ্যাথিতে শুধুমাত্র উপসর্গ নয়, বরং রোগের মূল কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা করা হয়। এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেহকে নিজেই রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
নিয়মিত ও সঠিকভাবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, এবং বারবার ব্যথা বা প্রদাহের পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব।তবে রোগীর বয়স, শারীরিক গঠন, মানসিক অবস্থা ও উপসর্গ অনুযায়ী সঠিক ওষুধ নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।প্রাথমিকভাবে লক্ষণভিত্তিক যেসব হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহৃত হতে পারে:-ব্রায়োনিয়া, কলচিকাম, লিডিয়াম পল, রাসটক্স, বেলেডোনা, আর্টিকাইউরেন্স, লিথিয়াম কার্ব বারবেরিস ভালগারিস,ক্যালকেরিয়া কার্ব, ন্যাফেলিয়াম, বেনজোইকাম অ্যাসিডাম,সালফার অস্টিওআর্থ্রাইটিস নোসড, ম্যাগফস, জ্যাকেরেন্ডা। তবে মনে রাখতে হবে, এসব ওষুধ লক্ষণভিত্তিকভাবে নির্ধারিত হয়, এবং রোগীভেদে আলাদা হতে পারে! অতএব, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়, কারণ তা রোগকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
পরিশেষের বলতে চাই, ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি একটি নীরব কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি গেঁটে বাত বা কিডনির জটিলতায় পরিণত হতে পারে। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শরীরের ছোট পরিবর্তনও বড় সমস্যার পূর্বাভাস হতে পারে, তাই সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।
লেখক, চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
আমারবাঙলা/এফএইচ