লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিসে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর ঘটনায় মো. রুবেল নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত একেএম শাহজাহান কামালের এপিএস পরিচয়দানকারী শিমুল চক্রবর্তী ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে দিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর জনগণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি ও নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আবু তারেক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তার রুবেল লক্ষ্মীপুর পৌরসভার দক্ষিণ মজুপুর এলাকার মৃত আবুল হাশেমের ছেলে এবং সদর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হাকিমের বড় ভাই। তিনি বিদ্যুৎ অফিসের সাবেক গাড়িচালক। তার ভাই আজিজ ছাত্রলীগ করায় তিন মাস আগে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। চাকরিকালীন সময়েই সাবেক মন্ত্রীর এপিএস শিমুলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর জনগণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি ও নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে সাবেক মন্ত্রীর এপিএস শিমুল ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে রুবেলকে আগুন লাগানোর প্রস্তাব দেন। এতে রুবেল রাজি হয়। ১১ ডিসেম্বর বিকেলে নির্বাচন তফসিল ঘোষণা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় শিমুল তার বিকাশে ২ হাজার টাকা পাঠান।
১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রুবেল একটি হোটেল থেকে এক লিটার পানির বোতল কিনে পানি ফেলে দিয়ে খালি বোতলটি নিয়ে স্টেডিয়ামের সামনে বেলালের দোকান থেকে এক লিটার পেট্রোল নেয়। পরে গভীর রাতে মাস্ক পরে নির্বাচন কার্যালয়ে ঢুকে নিচতলার উত্তর পাশের স্টোররুমে জানালা খোলা পেয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। বোতলটি নির্বাচন অফিসের বাউন্ডারি প্রাচীরের ওপর দিয়ে ফেলে দেয়। আগুন লাগাতে গিয়ে তার ডান পাশের কানের নিচে ও ডান পাশের দাড়ির কিছু অংশ পুড়ে যায়।
এরপর হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে আগুন লাগানোর দৃশ্যের ছবি তোলে (সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়) দৌড়ে গেট টপকে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। অফিসে সিসি ক্যামেরা আছে বিষয়টি বুঝতে পেরে ক্যামেরার ফুটেজ দেখে যেন কেউ তাকে চিনতে না পারে, সেজন্য বাসায় আসার পর তার পরিহিত জামা-কাপড় আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। ওইদিন বিকেলেই শিমুল বিকাশে তাকে বাকি ৮ হাজার টাকা পাঠান।
আসামিকে গ্রেপ্তারের পর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এবং দেখানো মতে নির্বাচন ভবনের বাউন্ডারি প্রাচীরের উত্তর পাশের নিচু জমি থেকে পেট্রোল আনার কাজে ব্যবহৃত পানির (জীবন) বোতলটি উদ্ধার করা হয়।
এসপি আবু তারেক জানান, রুবেলের ব্যবহৃত স্মার্টফোন জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বক্তব্য দেয়। তার মোবাইল থেকে ঘটনার সময় তার তোলা আগুন ধরানোর স্থিরচিত্র পাওয়া যায়। তার মোবাইল ফোনের কথোপকথন পর্যালোচনা করে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জেলা খাদ্য গুদাম ও এলজিইডি অফিসে আগুন লাগানোর পরিকল্পনার বিষয়টিও জানা যায়। যে দুটি বিকাশ নম্বর থেকে রুবেলকে টাকা পাঠানো হয়েছে সেগুলোও শনাক্ত করা হয়েছে। নির্দেশদাতা ও অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আমারবাঙলা/এসএবি