সারাদিন পরিশ্রম শেষে যদি ঘুমটা ভালোমতো না হয়, তাহলে পরের দিন নিজের কাছে খুবই অস্বস্তি অনুভব হয়। আর ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। আসুন জেনে নেওয়া যাক এর থেকে মুক্তির উপায়। দিনশেষে ঘুমানোর আগে যদি কিছুটা সময় নিয়ে পায়ে তেল মালিশ করা হয়, তা হলে তা শুধু আরামই দেয় না বরং শরীর ও মনের উপর পড়ে চমৎকার প্রভাব। অনিদ্রা, মানসিক চাপ, শারীরিক ক্লান্তি এমনকি ঠাণ্ডা লাগা—সবকিছুতেই পায়ের ম্যাসাজ কার্যকর ভূমিকা রাখে। চলুন, জেনে নিই কেন পায়ে তেল মালিশ করা উচিত এবং কোন তেল ব্যবহার করবেন।
গভীর ও আরামদায়ক ঘুম
যারা অনিদ্রায় ভোগেন, তাদের জন্য পায়ে তেল ম্যাসাজ হতে পারে প্রাকৃতিক সমাধান। এটি শরীর ও স্নায়ু শিথিল করে, মানসিক চাপ কমায় এবং ঘুমানোর আগে মন শান্ত করে দেয়। ফলে ঘুম গভীর ও শান্ত হয়।
রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে
দিনভর হাঁটা বা দাঁড়িয়ে কাজ করার ফলে পায়ে যে ক্লান্তি জমে, ম্যাসাজ তা দূর করে। এতে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়, শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন ও পুষ্টির সরবরাহ বাড়ে এবং শীতকালে পায়ে ঠাণ্ডা লাগাও অনেকাংশে রোধ করা যায়।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়
পায়ের বিভিন্ন একিউপ্রেশার পয়েন্ট উদ্দীপিত হওয়ার ফলে শরীরে এন্ডোরফিন নিঃসরণ হয়, যা মেজাজ ভালো করে এবং উদ্বেগ কমায়। এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
নিয়মিত তেল ম্যাসাজ স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে এবং রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখার মাধ্যমে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
শরীর থেকে টক্সিন দূর করে
তেল মালিশ লিম্ফ্যাটিক ড্রেনেজ সক্রিয় করে, যা শরীর থেকে টক্সিন ও বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করে। এটি শরীরকে আরো সুস্থ ও সতেজ রাখে।
ত্বক নরম ও আর্দ্র রাখে
শুষ্ক ও ফাটা গোড়ালি মেরামতে তেল ম্যাসাজ অত্যন্ত কার্যকর। নারকেল, বাদাম বা অলিভ অয়েলের মতো পুষ্টিকর তেল ব্যবহার করলে ত্বক আরো কোমল, উজ্জ্বল ও সংক্রমণমুক্ত থাকে।
মাংসপেশির ব্যথা ও টান কমায়
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা টাইট জুতা পরার কারণে পায়ের ব্যথা বা পেশির টান দূর করতে পায়ে তেল মালিশ অত্যন্ত উপকারী। ইউক্যালিপটাস বা টি ট্রি তেলের মতো প্রদাহ-বিরোধী তেল আরাম এনে দেয়।
গোড়ালি ও জয়েন্ট শক্তিশালী করে
নিয়মিত ম্যাসাজ পেশী ও জয়েন্টকে নমনীয় করে এবং ব্যথা কমায়। এর ফলে হাঁটা, দৌড়ানো বা চলাফেরা আরও স্বচ্ছন্দ হয়।
কোন তেল ব্যবহার করবেন?
১। সরিষার তেল: আয়ুর্বেদে বহুল ব্যবহৃত। উষ্ণ গুণসম্পন্ন ও ব্যথা কমাতে কার্যকর।
২। নারকেল তেল: হালকা, আর্দ্রতাদায়ক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল। শুষ্ক ত্বকের জন্য আদর্শ।
৩। বাদাম তেল: ভিটামিন ই-তে সমৃদ্ধ, যা ত্বককে পুষ্টি ও কোমলতা দেয়।
৪। ল্যাভেন্ডার তেল: ঘুমের আগে মানসিক প্রশান্তি আনে ও মানসিক চাপ কমায়। অন্যান্য তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।
৫। ইউক্যালিপটাস বা টি ট্রি তেল: প্রদাহ ও ব্যথা কমানোর জন্য দারুণ কার্যকর।
রাতে ঘুমের আগে মাত্র ১০ মিনিট পায়ে তেল মালিশ করতে পারলেই শরীর ও মনের ওপর পড়ে আশ্চর্যজনক প্রভাব। এটি একটি সহজ, সাশ্রয়ী ও স্বাভাবিক পদ্ধতি। যা দীর্ঘমেয়াদে ভালো ঘুম, সুস্থ ত্বক এবং শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
সূত্র : এশিয়া নেট
আমারবাঙলা/ইউকে