অধ্যাপক মাহাবুবুল ইসলাম: সরকারি সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন, দীর্ঘদিন সরকারি সাত কলেজ, তথা ঢাকা কলেজ এবং সরকারি বাঙলা কলেজে চাকরি করার সুযোগ হওয়ায় কাছ থেকে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তার আলোকে একটু পর্যালোচনা করতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি কেন হলো :
১.কোন প্রকার দাবি বা আন্দোলন ছাড়াই বিগত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত খায়েশ এবং সাবেক দুই ভিসির ব্যক্তিগত রেষা-রেষিতে ২০১৭ সালে কোন প্রকার অধ্যাদেশ বা নীতিমালা ছাড়াই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে ৭ কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত করা হয়।
২. অধিভক্তির পর বিশ্ববিদ্যালয় কোন প্রকার বাজেট বা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে তারা তেমন কোন ভূমিকা রাখেননি।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার বিল্ডিং এখনো সেকালে ম্যানুয়ালী রয়েছে, শিক্ষার্থীদের কাছে যা 'লাঞ্চের পরে আসেন' কালচার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শুধু শিক্ষার্থী নয় শিক্ষকদেরও পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
৪. বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিমাতাসুলভ আচরণ এবং তাদের নিজস্ব সমস্যায় জর্জরিত থাকায় নিজেদের গুণগত মান উন্নয়নে সামর্থ হয়নি বরং দিন দিন রেংকিংয়ে নিচের দিকে যাচ্ছে।
৫. যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিন দিন রেংকিং এ নিচের দিকে যাচ্ছে, শিক্ষার গুণগত মান ও তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারছেন না। সেখানে কিভাবে তার চেয়ে তিন /চার গুন বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে এই বিশাল বোঝা তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হলো তা কিছুতেই বোধগম্য নয়। তাছাড়া ঢাবির অনেক শিক্ষক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ইভিনিং কোর্স সহ প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ব্যস্ত থাকেন ।
৬.অধিভুক্তির ফলে তাদের ব্যক্তিগত কিছু লাভ ছাড়া শিক্ষার্থী বা শিক্ষার কোন গুণগত মান উন্নয়ন হয়েছে বলে শিক্ষার্থী এবং স্টেক হোল্ডাররা মনে করেন না।
৭. শিক্ষার্থীদের যে সনদ দেয়া হয়েছে তাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের সাথে মিল নেই।
৮. অধিভুক্তির আগে শিক্ষার্থীরা মনে করেছিলেন তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হতে পারবেন এবং সার্টিফিকেট পাবেন । ঢাবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তো তারা হতে পারেননি, বরং ঢাবির ক্যাম্পাসে ঢুকাও সম্ভব ছিল না । এমনকি সমাবর্তন গুলোও বাইরে মাঠে ভার্চুয়ালি করতে হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক!!
৯. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কখনো ওন করেননি, এবং তাদের সাথে সব সময় বৈষম্যমূলক আচরণ করা হতো ।
১০. আর্থিক নীতি ছাড়াই শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে লক্ষ - লক্ষ টাকার নন কলেজিয়েট এবং ডিস কলেজিয়েট ফিস আদায় করে ঢাবিকে দেয়া হতো কিন্তু এই অর্থ কলেজের গরীব শিক্ষার্থীদের কোন উপকারে আসেনি।
১১. সাত কলেজের উত্তরপত্র মূল্যায়নে সিঙ্গেল পরীক্ষক কর্তৃক মূল্যায়ন করা, উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও বিতরণে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা, ফলাফল তৈরিতে দীর্ঘ সূত্রীতা ও ভুল ইত্যাদি নানাবিধ কারণে ফলাফল প্রকাশ্যে বিলম্ব হতো।
যার কারনে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চয় হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সমস্যার সমাধান কল্পে বিভিন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করেন। বিভিন্ন কলেজ তাদের নিজস্ব নামে কখনো বাঙলা বিশ্ববিদ্যালয়, কখনো ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়, কখনো তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করে। ৩৬ জুলাই ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পেরে তারা এখন ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে।
খসড়া প্রস্তাবের অসঙ্গতির দিকগুলো হলো :
১. স্থান -কাল - পাত্র ভেদে প্রকল্পের উদ্দেশ্য,বাজেট, সম্ভাব্যতা নির্ধারণ হয়েছে বলে মনে হয় না। এস ডি জি ৪: তথা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই প্রকল্প কতটুকু সামর্থ হবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ!
২. প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিলুপ্ত করে ৫ লক্ষ শিক্ষার্থীর পরিবর্তে পাঁচ /ছয় হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে যে প্রতিষ্ঠান গঠিত হতে যাচ্ছে তা বাংলাদেশের মতো গরিব জনবহুল দেশের জন্য চাহিদার তুলনায় কতটুকু উপযোগী এবং এটি শিক্ষা সংকোচন নীতির বহিঃপ্রকাশ কিনা তা আলোচনার দাবি রাখে।
৩. প্রস্তাবে শিক্ষার সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশের গরিব সাধারণ মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাবেন না তারা এই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় এবং পাশাপাশি পার্ট টাইম চাকরি করেন। সেই সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হবেন।
৪. বিদ্যমান সাবজেক্ট গুলো অধিকাংশ বাদ দেয়া হয়েছে। সেখানে যে সমস্ত শিক্ষার্থী এই সাবজেক্টগুলো অধ্যায়ন করছেন তাদের ব্যাপারে কি হবে, তার নির্দেশনা নেই।
৫. ভার্চুয়াল ক্লাসের কথা বলা হয়েছে অথচ বিগত করোনার সময় বাস্তবতা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকই সাত কলেজে কোন ভার্চুয়াল ক্লাসে অংশগ্রহণ করেননি অথবা তাদের লেসন দিয়ে সহযোগিতা করেননি। এমনকি সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। এটি প্রকারান্তরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বলে অনেকে মনে করেন।
৬.এটি মূলত প্রফেশনাল কোর্স মনে হয়েছে যা ঢাবির ইভিনিং এ পড়ানো হয়।
৭. নতুন কোর্সগুলো কারা পড়াবেন, পুরাতন সাবজেক্ট গুলো থাকবে কিনা, শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় ১৫০০ সদস্য, হাজার হাজার বেসরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারী তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা উল্লেখ নাই।
৮. ভৌত অবকাঠামো কোন্ প্রতিষ্ঠানের থাকবে সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। সাত কলেজের আয়- ব্যয় তাদের নিজস্ব কিনা এ বিষয়ে নির্দেশনা না থাকায় আন্ত:দ্বন্ধ তৈরি হবে।
৯. বর্তমানে সাত কলেজে খুবই স্বল্প খরচে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করেন। শিক্ষার্থী কমিয়ে আনায় এই বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেতে বাধ্য হবেন। ফলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় লাভবান হবে।
১০. দেশের সেরা এই সাতটি কলেজ প্রচলিত সাবজেক্টগুলো না থাকায় এখান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। তাছাড়া এই নতুন নতুন সাবজেক্ট গুলো পিএসসিতে অন্তর্ভুক্ত নেই।
১১. দুপুর একটা পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিকের এবং পরবর্তীতে অনার্স লেভেলে ক্লাস এর কারণে অনার্স --মাস্টার্স এর শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং পরবর্তীতে তারা উচ্চমাধ্যমিকের উপর চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে বের করে দেয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
১২. এখানকার শিক্ষার্থীরা ঢাবির তুলনায় কম মেধাবী থাকবে কিন্তু তাদের ক্লাস মাত্র ৬০% হবে সরাসরি আর বাকি ৪০% ভার্চুয়ালী হবে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বর্তমান প্রেক্ষিতে ভার্চুয়াল ক্লাসগুলো কতটুকু ইফেকটিভ হবে তা
প্রশ্নসাপেক্ষ।
সাত কলেজে কারা পড়েন :
************************
সমাজের দরিদ্র, নিপীড়িত, অসহায়, গ্রামের কৃষক সহ কিছু মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রায় পাঁচ লক্ষ শিক্ষার্থী এখানে পড়েন। যারা সমাজের ধনী শ্রেণীর, তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ করে অল্প খরচে তারা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে কর্ম ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। এটি বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের শিক্ষার্থীদের সার্বজনীন শিক্ষার সুযোগ। কলেজ বন্ধ করে গুটি কয়েক শিক্ষার্থী নিয়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় হলে লক্ষ লক্ষ গরিব শিক্ষার্থী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। তাদেরকে বঞ্চিত করার জন্য সুবিধাভোগী কোন গোষ্ঠী আছে কিনা সেটিও ভেবে দেখা সময়ের দাবি।
বাংলাদেশের ঐতিহ্য: সেরা সাত কলেজ
****-**-************************
ছাত্র-শিক্ষক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তিনটি মিলেই শিক্ষা প্রক্রিয়া প্রবাহমান। এই তিনটি উপাদানের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব :
১. ঢাকা কলেজ : স্বনামেই খ্যাত, ১৮৪১ সালে যার প্রতিষ্ঠা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা কলেজ তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে।তৈরি করেছে অসংখ্য শ্রেষ্ঠ মানব সম্পদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মহান ভাষা আন্দোলন,মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান এর সাথে প্রতিষ্ঠানটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি। শিক্ষা ক্যাডারের স্বপ্নের আবাসস্থল। এই প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চমাধ্যমিকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাস করে বুয়েট মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন। অন্যদিকে এখান থেকে অনার্স ও মাস্টার্স অর্জন করে শিক্ষার্থীরা বিসিএস সহ সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করছেন। এই প্যারালাল কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো তৈরি হয়নি বাংলাদেশে।
২. সরকারি তিতুমীর কলেজ : হাজী নেসার আলী ওরফে শহীদ তিতুমীর। যার নাম শুনলে এখনো বীর বাঙালির রক্ত স্রোতধারায় শিহরণ জাগায়। অন্যায় আর অসত্যের বিরুদ্ধে, ব্রিটিশদের শোষণের বিরুদ্ধে, জমিদারি প্রথা উচ্ছেদে আপোসহীন এক বীর বাঙালি হাফেজ শহীদ তিতুমীর। তার বাঁশের কেল্লা অন্যায় - অসত্যের বিরুদ্ধে জন্ম ও জন্মান্তর যোগাবে শক্তি, সাহস- প্রেরণা। ২৪ এর গন আন্দোলনে তাই এ কলেজে শিক্ষার্থীদের দেখেছি জীবন বাজি রেখে সংগ্রামে অংশ নিতে। দীর্ঘজীবী হোক শহীদ তিতুমীর কলেজ।
৩. সরকারি বাঙলা কলেজ : মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সাথে যে প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি জড়িত সেটি হলো সরকারি বাঙলা কলেজ। ঙ বর্ণ দিয়ে লেখা এ কলেজটি ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ভাষা সংগ্রামী প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম, দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আযরফ সহ বাংলাদেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, কবি- সাহিত্যিক স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে বাংলাকে দাড় করানোর জন্য এ কলেজটি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
৪. ইডেন মহিলা কলেজ : নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসারে ১৮৭৩ সালে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকাসহ সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা এ কলেজে অধ্যায়ন করে কর্মজীবনে উজ্জ্বলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এখনো রানিং কয়েকজন সচিব এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪ এর গণআন্দোলনে এ কলেজের শিক্ষার্থীদের অবদান অবিস্মরণীয়। যে কলেজের শিক্ষার্থীরা ছেলেদের সাথে পড়বে না বলেই এই বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। সেখানে কোন যুক্তিতে ছাত্রদের ঢুকাবেন?
৫. কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই আমাদের জাতীয় চেতনার অংশ। প্রতিটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির অত্যন্ত মেধাবী গরিব হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা এখানে অধ্যায়ন করে। এই প্যারালাল এখনো ঢাকা শহরে কোন প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি। বুয়েট, মেডিকেল, ঢাবি সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সমস্ত কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী
শেষ করে মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়।
খসড়া প্রস্তাবনায় সাত কলেজের সমস্যা-
সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা আলোচনা হয়েছে বলে মনে হয় না। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, শিক্ষার ব্যাপক প্রসার না হয়ে বরং শিক্ষা সংকোচন হবে বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন। প্রয়োজন সাত কলেজের ঐতিহ্য রক্ষা করে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা। প্রয়োজন একটি স্বাধীন শিক্ষা গঠন। জরুরী ভিত্তিতে ক্যাডার সদস্য এবং স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে নিয়ে একটি সেমিনার করুন, রুপরেখা তৈরি করুন। আট বছর ঢাবির আন্ডারে শুধু এক্সপেরিমেন্ট চলেছে, ফলাফল হয়নি। আর কোন এক্সপেরিমেন্ট নয়। প্রয়োজন বাস্তব উদ্যোগ, বাজেট ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। অর্ধশত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, কতগুলো মানসম্মতভাবে চলছে?
৩৬ জুলাই ছাত্র জনতার- বিপ্লবের প্রেক্ষিতে বলতে চাই, এমন কোন কর্মসূচি নেওয়া ঠিক হবে না যেখানে বৈষম্য তৈরি হয়। যাতে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যেতে বাধ্য হয়। যে সমস্ত সাবজেক্ট এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে তা এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা পায়নি। সাত কলেজে সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে যে বাজেট, যে শিক্ষক, যে অবকাঠামো, যে ল্যাব, প্রয়োজন তার কোনোটিই নেই। ঢাকা কলেজ একটি বয়েজ কলেজ, ইডেন কলেজ মেয়েদের কলেজ। প্রত্যেকটি কলেজের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা দরকার। ঢাকা বা ঢাকার আশেপাশে পর্যাপ্ত জমি অধিগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক মানের ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করুন। দ্রুত স্টেক হোল্ডারদের সাথে বসুন। প্রস্তাবনা করুন, নীতিমালা ও অধ্যাদেশ এর খসড়া পত্রের উপর সেমিনার আয়োজন করুন।
প্রতিটি কলেজের সুদীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য রয়েছে যা বাংলাদেশের ভাষা ও রাষ্ট্রের জন্মের সাথে জড়িত। ইতিহাস -ঐতিহ্য নষ্ট করা ভালো কাজ নয়। এক অর্ডারে বিলুপ্ত করা যাবে, কিন্তু গঠন করা যাবে না। এই কঠিন দায়িত্ব পালন দুই একজন বিতর্কিত শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব নয়, এজন্য একটি স্বাধীন শিক্ষা কমিশন গঠন করুন। যারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কাজ না করে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে স্বাধীনভাবে গরিব সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে মানবসম্পদে রূপান্তর করার মহান দায়িত্ব পালন করবেন। সেই মহান প্রত্যাশায় --
লেখক শিক্ষাবিদ এবং সরকারি কলেজের অধ্যাপক
আমার বাঙলা/আরএ