সংগৃহীত
জাতীয়

সংস্কৃতিজন সনজীদা খাতুনকে বুধবার ছায়ানটে শ্রদ্ধা নিবেদন 

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, সংস্কৃতিজন এবং সংগীতজ্ঞ সনজীদা খাতুন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিলো ৯১ বছর। তার মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

সনজীদা খাতুনের ছেলে পার্থ তানভীর নভেদ জানিয়েছেন, প্রয়াত সনজীদা খাতুনের প্রতি সর্বজনের শ্রদ্ধা নিবেদন বুধবার (২৬ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে অনুষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। এক সপ্তাহ ধরে তিনি এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। সনজীদা খাতুনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার পুত্রবধূ ও ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা।

দীর্ঘদিন ধরে সনজীদা খাতুন ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া এবং কিডনি রোগে ভুগছিলেন। এর আগেও একই অসুস্থতায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন বলে জানান লাইসা আহমদ লিসা।
সনজীদা খাতুনের ছেলে পার্থ তানভীর নভেদ জানিয়েছেন, প্রয়াত সনজীদা খাতুনের প্রতি সর্বজনের শ্রদ্ধা নিবেদন বুধবার (২৬ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে অনুষ্ঠিত হবে।

সনজীদা খাতুনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে ছায়ানট, উদীচী, চারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। সর্বশেষ তার দাফনের বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি।

জীবনের ৯২ বছর পূর্ণ করার মাত্র দশ দিন আগে তিনি বিদায় নিলেন। সনজীদা খাতুন এমন এক সময়ে চলে গেলেন, যখন বাঙালির চিরায়ত উৎসব হয়ে ওঠা পহেলা বৈশাখের বাকি আর মাত্র তিন সপ্তাহ। রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসবে আর কখনো তাকে দেখা যাবে না।

সনজীদা খাতুনের বিপুল কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবন সামগ্রিকভাবে বাঙালির মানস ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। সনজীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। তার বাবা কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। তিনি লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের বোন এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের স্ত্রী। সনজীদা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সনজীদা খাতুনের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষক হিসেবে। তিনি ইডেন কলেজ, কারমাইকেল কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা শেষে অবসরে যান।

সনজীদা খাতুনের লেখার একটি বড় অংশ জুড়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ব্যাপক পরিসরে জনমানসে কবিগুরুকে পৌঁছে দেওয়ার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় শুদ্ধ সংগীতের চর্চার পাশাপাশি বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় ছিলেন সনজীদা খাতুন, তখন সহযোদ্ধাদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘মিনু আপা’ নামে।

সনজীদা খাতুন আজীবন ছিলেন যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই সনজীদা খাতুন সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। দেশের সব ধরনের সংকটে সোচ্চার ছিলেন এই বরেণ্য ব্যক্তিত্ব।

শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে সনজীদা খাতুন ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দেন। তার প্রথম গানের গুরু ছিলেন সোহরাব হোসেন। তার কাছে তিনি দীক্ষা নেন নজরুলসংগীত, আধুনিক বাংলা গান ও পল্লিগীতির। প্রথমে রবীন্দ্রসংগীত শিখেছেন প্রখ্যাত হুসনে বানু খানমের কাছে। এরপর তিনি শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেনদের মতো বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীদের কাছ থেকে তালিম নেন।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন। এরপর সাভারের জিরাব গ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। তার সঙ্গে কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মীও ছিলেন। তারা ভারতের আগরতলা শহরে কিছুদিন অবস্থান করেন। তারপর ১৯৭১ সালের ৫ মে কোলকাতায় প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সাংস্কৃতিক কর্মীদের একতাবদ্ধ করা শুরু করেন।

তিনি মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ, ধ্বনি থেকে কবিতা, অতীত দিনের স্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ: বিবিধ সন্ধান, ধ্বনির কথা আবৃত্তির কথা, স্বাধীনতার অভিযাত্রা, সাহিত্য কথা সংস্কৃতি কথা, জননী জন্মভূমি, রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ, শান্তিনিকেতনের দিনগুলি ও জীবনবৃত্ত।

রবীন্দ্রবিষয়ক তার সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে আছে ‘রইল তাঁহার বাণী: রইল ভরা সুরে’, ‘গীতবিতান: তথ্য ও ভাবসন্ধান’, ‘সার্ধশততম জন্মবর্ষে রবীন্দ্রনাথ’।

২০২৩ সালে ৯০তম জন্মবার্ষিকীর দিনে ‘নবতিপূর্ণা’ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শুনিয়েছিলেন সনজীদা খাতুন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, অল্পে তুষ্ট সহজ সরল জীবনের এই সার্থকতায় আমি ধন্য হয়েছি।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত), দেশিকোত্তম পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)। এ ছাড়া কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট ১৯৮৮ সালে তাকে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য’ উপাধি, ২০১৯ সালে ‘নজরুল মানস’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে। ২০২১ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কুষ্টিয়ায় ৮১ কিলোমিটার এলাকায় বিজিবির তৎপরতা

সাম্প্রতিক ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠে...

একই স্থানে সূর্যোদয়–সূর্যাস্ত দেখার অপার সৌন্দর্যের দ্বীপ রাঙ্গাবালী

পটুয়াখালীর সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী যেন লুকিয়ে থাকা এক টুকরো স...

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা আজও নির্ধারণ হয়নি: মিজানুর রহমান

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তিকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ কর...

শ্রীমঙ্গলে ‘হারমোনি উৎসব’ স্থগিত 

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রী...

বিজয় দিবস উদযাপনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির প্রস্তুতি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি মহান বিজয় দিবস উদযাপনের জন্...

কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্য নিহত

কুষ্টিয়ায় ছবি তুলতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পাবনা জেলায় কর্মরত ডিএসবি’র ইন্স...

বাজার থেকে কিটক্যাট চকলেট সরানোর নির্দেশ, সতর্কতা জারি

নেসলে কিটক্যাট চকলেটের একটি বিতর্কিত লট বাজার থেকে ২০২৬ সালের ২১ জানুয়ারির মধ...

হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি:বড় ভাই ওমর ফারুক

বর্তমানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা...

ধানমণ্ডি ৩২-এ টাঙানো হলো মওলানা ভাসানী, ওসমান হাদির ছবি

রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙা বাড়িতে টাঙানো হয়েছে মওলা...

ভোরের আলোতেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনসমাগম, বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা

ভোরের আলো ফোটার আগেই ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী মা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা