বিনোদন

ইউটিউবই বদলে দেয় রাখির জীবন

বিনোদন প্রতিবেদক

একটি দৈনিকে সেই ‘লাইলী’ নোয়াখালী থেকে যেভাবে ফ্রান্সে গেলেন-প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল অভিনেত্রী রেহানা রাখির নোয়াখালী থেকে ফ্রান্সে যাত্রার গল্প। তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু, অভিনয় ও দেশ ছেড়ে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে জনপ্রিয়তা উঠে আসে সেই গল্পে। কিন্তু ইউরোপের আভিজাত্যের ভেতরে পৌঁছে খুলে যায়নি ভাগ্যের দরজা; বরং নতুন দেশে পা রেখেই একাকিত্বে ‘জর্জরিত’ হয়েছেন রাখি। মন বারবার ছুটে গেছে নিজের দেশে, চেনা পরিবেশে। কনটেন্ট নির্মাণ শুরু করেও শুরুতে পাননি স্বীকৃতি। অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, পেছনে ছিল কটূক্তি। অচেনা দেশ, নতুন সমাজ-সেসবের বাধা ঠেলে তিনি যেভাবে এগিয়েছেন, তৈরি করেছেন নিজের পরিচয়, আজকের গল্পে থাকবে সেই সংগ্রামের কথাই।

২০১৬ সালে কাজের পরিমাণ কমতে থাকে রাখির। তবু টিকে থাকার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু যখন আর টিকতে পারছিলেন না, ২০১৮ সালে তিনি পাড়ি জমান ফ্রান্সে। ভেবেছিলেন, ইউরোপের উন্নত দেশে গেলে টিকে থাকার লড়াইটা কিছুটা সহজ হবে; কিন্তু হলো উল্টো। শুরুর দিনগুলো নিয়ে রাখি বলেন, ‘ফ্রান্সে আসার পর যেন একদম একা হয়ে যাই। কোনো বন্ধুবান্ধব, পরিবার, প্রিয়জন, কাছের মানুষ-কেউ এখানে ছিলেন না। একা একা সারা দিন জানালার পাশে বসে থাকতাম আর রাস্তার গাড়িগুলো গুনতাম, কয়টা গাড়ি যাচ্ছে, কয়টা গাড়ি আসছে। কী যে একটা খারাপ সময় পার করেছি, তা এখন ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
একসময় রাখির মধ্যে বিষণ্নতা ভর করে। ঠিক ঘুম হতো না, ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে হতো। এভাবে কাটতে লাগল দিন, দিন থেকে মাস, মাস থেকে বছর। বেশ কয়েকবার দেশে ফেরার পরিকল্পনা করেন রাখি। সিদ্ধান্ত নেন ফ্রান্সে আর থাকবেন না। রাখি বলেন, ‘আস্তে আস্তে সবার সঙ্গে পরিচয় হতে লাগল, কিন্তু কারও সঙ্গে মনের মিল হচ্ছিল না। ধরুন, একজন মানুষের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক হয়েছে, কিন্তু দুই দিন পর আমাকে মিডিয়া নিয়ে এমন অ্যাটাক করে বসলেন, আমার কান্না এসে গেল। একা থেকে যেন আরো একা হয়ে যাচ্ছিলাম।’

কথায় আছে না ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’। এত সংগ্রামের মধ্যেও অভিনয়ের নেশা মাথায় সারাক্ষণ ঘুরতে থাকে রাখির। ২০১৯ সালে ইউটিউব চ্যানেল খোলেন তিনি। বিভিন্ন টপিকে অভিনয় ও জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে কনটেন্ট বানাতে শুরু করেন। ‘রেহানা রাখি ভ্লগ’ নামের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে আস্তে আস্তে সাবস্ক্রাইবার বাড়তে থাকে। অভিনয়, ভিডিও তৈরি, এডিটিং-সব একাই করতে হয় তাঁকে। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে একেকটা কনটেন্ট বানিয়েছেন তিনি।

রাখির ভাষ্য, ‘এই জার্নিটাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এ জার্নি প্রতিদিনের একটি যুদ্ধ, বাচ্চা কান্না না করলে যেমন মা খাবার দেন না, ঠিক প্রতিদিন ভিডিও আপলোড না করলে চ্যানেল ডাউন হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন কাজ করতে হয়েছে। অনেক ক্লান্ত থাকার পর এমনও হয়েছে, এক দিনে তিনটি ভিডিও তৈরি করতে হয়েছে। আবার টানা কয়েক রাত না ঘুমিয়েও ভিডিও শুট করেছি।’

এত পরিশ্রমের পরও সমালোচকদের তির রাখির দিকে আসতে থাকে। প্রতিবেশী থেকে কাছের মানুষ তাঁকে দেখলেই এড়িয়ে যেতেন। রাখি বলেন, ‘আমি কোথাও গেলে অনেকে আমাকে দেখে হাসতে থাকতেন। টিপ্পনী দিয়ে বলতেন, ‘‘আরে ওই রাখি যাচ্ছে।”

বিশ্বাস করবেন না, এ শহরের মানুষ যে কী পরিমাণ অপমান করেছেন, তা বলে বোঝাতে পারব না। এমনও হয়েছে, কারো বাসায় দাওয়াতে গিয়েছি, তাঁদের মাথার মধ্যে ঢুকে গেছে যে আমি তাঁদের ভিডিওর মধ্যে দেখিয়ে অনেক অনেক টাকা ইনকাম করি। যেই আমি ক্যামেরাটা ধরতাম, ঠাস করে মুখটা লুকিয়ে ফেলতেন।’

তবে রাখি মনে করেন, তাঁদের জন্যই তিনি আজকের জায়গায়। এসব সমালোচনা ও প্রত্যাখ্যান তাঁকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। রাখি বলেন, ‘যাঁরা সমালোচনা করেন, তাঁদের আমি আশীর্বাদ হিসেবে নিয়েছি। কারণ, তাঁরা সমালোচনা করায় আজ আমি রেহানা রাখি। যাঁরা সমালোচনা করতেন, এখন দেখি তাঁরাই ফেসবুক পেজ খুলে বসে আছেন। এসব দেখি আর সেসব দিনের কথা মনে হলে হাসি।’

আঞ্চলিক ভাষায় ভ্লগ নির্মাণের জন্যও কটু কথা শুনতে হয়েছে রাখিকে। ফেসবুক ইউটিউবের মন্তব্য থেকে ইনবক্সে অনেকেই টিপ্পনী কাটেন। তবে নিজের আঞ্চলিকতা নিয়ে গর্ববোধ করেন রাখি।

তিনি বলেন, ‘যখন ইউটিউবিং শুরু করি, তখন চিন্তা করলাম, সবাই তো বইয়ের ভাষায় কথা বলে, আমি না হয় আমার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি। এ চিন্তা থেকে নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলা শুরু করি। অনেকে আমাকে নোয়াখাইল্লা নোয়াখাইল্লা বলে বিদ্রূপ করেছেন; কিন্তু বিশ্বাস করেন, আমার একটুও খারাপ লাগেনি। কারণ, আমি আমার আঞ্চলিকতাকে ভালোবাসি। এটাই আমার অস্তিত্ব, এটাই পরিচয়।’

ফেসবুক ইউটিউব রাখিকে নতুন একটা জীবন দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তবে এর জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাঁর অনুসারীদের। তাঁরা না থাকলে আজ তিনি এ জায়গায় আসতে পারতেন না বলে মনে করেন তিনি। রাখির কথায়, ‘কনটেন্ট ক্রিয়েশন আমাকে নতুন করে পরিচিতি দিয়েছে। নাটকে অভিনয় করে যে পরিচিতি পাইনি, ইউটিউব, ফেসবুক করে আল্লাহ আমাকে অনেক অনেক বেশি পরিচিতি দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী ভাই-বোনের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ ও ঋণী, তাঁদের এত সুন্দর সাপোর্টের কারণে আজ আমি রেহানা রাখি।’

আমারবাঙলা/জিজি

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রাস্তা অবরোধ করার অধিকার কারো নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ফরিদপুরের সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধের ঘট...

সুশীলা কারকির উত্থান যেভাবে

নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্...

১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্য...

আয়ের দিক দিয়ে ফের মেসিকে ছাড়িয়ে শীর্ষে রোনালদো

রেকর্ডের দৌড়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে। কিন্...

সাবালেঙ্কার সাফল্যের রহস্য

সদ্য ইউএস ওপেন নারী এককের শিরোপাজয়ী বেলারুশের টেনিসকন্যা আরিনা সাবালেঙ্কা নিজ...

লন্ডনে বাংলাদেশি মাকে ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য, ছেলের ওপর হামলা

লন্ডনে হামলার শিকার হয়েছেন এক বাংলাদেশি তরুণ। তরুণের ভাষ্য, তাঁর হিজাব পরা মা...

জমির বিরোধে খুন, দুর্ঘটনায় মৃত্যু, তবু তাঁরা জুলাই শহীদ 

রাজধানীর ওয়ারীতে গত বছরের ১৪ আগস্ট কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিএনপি নেতা মো. আল-আমি...

হাত না মেলানো : ভারতের ব্যাখ্যা, পাকিস্তানের প্রতিবাদ

আগা সালমান-শাহিন আফ্রিদিরা হয়তো সেটা ভেবেই মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন...

নুরাল পাগলা দরবারে হামলা, গোয়ালন্দে ওসির পর ইউএনওর বদলি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুর‌াল পাগ‌লার দরবার ও বাড়িতে হামলা ও মরদেহে আগু...

বিশ্বের নতুন দ্রুততম মানবী জেফারসন–উডেন

নতুন দ্রুততম মানবী পেল বিশ্ব। টোকিওতে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা