‘আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমার পারফরম্যান্স (অভিনয়) একই রকম হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে আসলে ব্রেকটা (বিরতি) নিয়েছিলাম, ব্রেকটা দরকার ছিল,’ গত সোমবার প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন অভিনেতা শ্যামল মাওলা।
বিরতি ভেঙে কাজে ফিরেছেন তিনি। ৩ জুলাই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গতে মুক্তি পেয়েছে সাইকো থ্রিলার কানাগলি। সিরিজে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্যামল মাওলা।
কাজটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজটা যাঁরা দেখেছেন, বেশ প্রশংসা করছেন। বিশেষ করে গল্প কথন, সংলাপ, অভিনয় ও পরিচালনা পছন্দ করছেন দর্শক। কাজটা উপভোগ করেছি। এটার পরিকল্পনা, বাজেট-সবকিছুই ভালো ছিল।’
পুলিশ কর্মকর্তা চরিত্রে শ্যামল মাওলাকে খুব একটা পাওয়া যায়নি। আগে জিফাইভের ওয়েব সিরিজ কন্ট্রাক্ট-এ পুলিশের ছোট্ট একটা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এবার একেবারে কেন্দ্রীয় চরিত্র। কানাগলি সিরিজের গল্পটা এমন-শহরে একের পর এক তরুণ খুন হচ্ছেন। খুনিকে খুঁজতে গলদঘর্ম হয়ে যায় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত মামলার তদন্তভার নেন পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজ। তদন্তে নেমে তিনিও ধন্দে পড়ে যান। নিজের নিয়মে চরিত্রটি ধারণ করেছেন শ্যামল মাওলা।
তিনি বলেন, ‘চরিত্র ধারণের জন্য চরিত্রটাকে বিশ্বাস করা জরুরি। আমিও পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্র করার সময় বিশ্বাস করেছি, আমিই পুলিশ। আমি অপরাধের তদন্ত করে মামলার সুরাহা করতে পারব।’
বিরতির পর ফেরা
নির্মাতা অনম বিশ্বাসের ওয়েব সিরিজ ভাইরাস করার পর বিরতি নিয়েছিলেন শ্যামল মাওলা। ২০২৩ সালে ভাইরাসসহ অন্তত আটটির মতো ওটিটির কনটেন্টে কাজ করেছেন তিনি। পাশাপাশি একক নাটক ও টিভিসি তো ছিলই। হাঁপিয়ে উঠেছিলেন শ্যামল মাওলা।
বিরতির সময়টা কীভাবে কাটালেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘একদম কাজ ছাড়া বাসায়ই ছিলাম, সংসারে সময় দিয়েছি। পাশাপাশি নিজেকেও প্রস্তুত করেছি। আমি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।’ বিরতিতে যাওয়ার আগেই কানাগলি শেষ করেছিলেন তিনি। বিরতি থেকে ফেরার পর তৌকীর আহমেদের ধারাবাহিক ধূসর প্রজাপতি নিয়ে ফিরেছেন শ্যামল। এর বাইরে ঈদুল আজহায় মায়াডোরসহ বেশ কয়েকটি একক নাটকে তাঁকে দেখা গেছে।
শ্যামল মাওলা ওটিটির
সদরঘাটের টাইগার, মানি হানি, মাইনকার চিপায় থেকে মহানগর সিরিজে কাজ করে আলোচিত হয়েছেন। ছোট পর্দা ছাপিয়ে নিজেকে ওটিটির নিয়মিত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ওটিটিতে সাফল্যকে কীভাবে দেখেন?
শ্যামল মাওলা বলেন, ‘নাটকের কাজগুলো দুই থেকে চার দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। দুই-চার দিনে চরিত্রটা অনুভব করতে করতেই শেষ হয়ে যায়। ফলে মনের ক্ষুধাটা মিটছিল না। সেই জায়গা থেকে মনে হচ্ছিল, এমন একটা জায়গায় কাজ করি যেখানে সময় নিয়ে চরিত্রে ঢুকতে পারব।’
২০১৮ সালের এপ্রিলে নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকীর ক্যাশ নামে একটি থ্রিলার ড্রামা দিয়ে ওটিটিতে নাম লেখান শ্যামল মাওলা।
এই অভিনেতা বলেন, ‘ওটিটি আসার পর আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলাম। যেভাবে কাজ করতে চাইতাম, সেভাবে ওটিটির কাজগুলো হচ্ছিল। সে কারণে ওটিটির কাজগুলো করে মজাও পাচ্ছিলাম, আবার কাজেও জোর দিই।’
তিন মাধ্যমেই আছেন
ওটিটির কাজে সাফল্য পেলেও সিনেমা ও ছোট পর্দায়ও নিয়মিত কাজ করেন শ্যামল মাওলা। শিল্পীদের কেউ কেউ বড় পর্দায় কাজ করলে আর ছোট পর্দায় কাজ করতে চান না। কেউ আবার শুধু ছোট পর্দা নিয়েই থাকেন। সেখানে তিন মাধ্যমে কাজ করাটাকে কীভাবে দেখেন শ্যামল মাওলা?
তাঁর ভাষ্য, ‘মোশাররফ (করিম) ভাই, চঞ্চলদা (চৌধুরী) সিনেমা, নাটক ও ওটিটি-সবই করেন। আমিও করছি। আমি বিভেদ রাখতে চাই না। ফলে সব মাধ্যমেই কাজ করছি, করতে চাই। অভিনয় আমার পেশা, এটাই আমি করতে চাই।’
ওটিটি ও ছোট পর্দায় নাম করলেও বড় পর্দায় এখনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাননি শ্যামল মাওলা। বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিনেমায় আমি নতুন। চার থেকে পাঁচটার মতো কাজ করেছি। এখনো সিনেমায় পুরোপুরি শুরু হয়নি। আমি চেষ্টা করছি।’ নাদান নামে একটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে। ছবিটির দুর্গাপূজায় মুক্তির কথা রয়েছে।
এই অভিনেতা বলেন, ‘ছবিটির পোস্টপ্রডাকশনের কাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যে সার্টিফিকেশন বোর্ডে জমা পড়বে। আশা করছি, ছবিটি দর্শকের ভালো লাগবে।’ এর বাইরে একটি অমনিবাস চলচ্চিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। পাশাপাশি নতুন আরেকটি সিরিজে অভিনয়ের কথাবার্তা চলছে।
আমারবাঙলা/জিজি