পাহাড়ে বেড়ে ওঠা দুই ভাই-বোন আলী ও রোশনি একে অপরের পরিপূরক। বাক্প্রতিবন্ধী আলী ছোট বোন রোশনিকে নিয়ে পাহাড়ে গড়ে তোলে ছোট্ট এক জগৎ। কিন্তু এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা তাদের আলাদা করে দেয়। নতুন এক সংগ্রামে নামে আলী-নিঃসঙ্গতা, অবিচার, নির্যাতনের ভেতরও সে হার মানে না। অন্যদিকে ভাইয়ের খোঁজে পথে নামে রোশনি। এমন গল্প নিয়ে বিপ্লব হায়দারের সিনেমা ‘আলী’ মুক্তি পেয়েছে।
পর্দায় সম্পর্কের গল্প
বিপ্লব হায়দারের সিনেমা ‘ভয়াল’ মুক্তি পায় গত বছর। গতকাল প্রথম আলোকে নির্মাতা জানান, পরে শুটিং হলেও আগে মুক্তি পায় ‘ভয়াল’। আগে শুটিং করেও নানা কারণে ‘আলী’ মুক্তি দিতে পারেননি। ভয়াল ছিল বাবা ও মেয়ের সম্পর্কের গল্প, ‘আলী’ ভাই-বোনের গল্প। বিপ্লব হায়দার জানালেন, পর্দায় পারিবারিক সম্পর্কের গল্প বলতে ভালোবাসেন।
‘পরিবারের গল্প নিয়ে সারা দুনিয়ায় অনেক সিনেমা হয়েছে, আগে আমাদের দেশেও হয়েছে। কিন্তু ইদানীং দেখবেন, এ ধরনের গল্প নিয়ে কেউ সিনেমা বানাতে চায় না। কিন্তু যত ঝামেলাই হোক, আমি এ ধরনের গল্পই বলতে চাই,’ বললেন বিপ্লব হায়দার। জানালেন এ ধরনের সিনেমা নির্মাণের চ্যালেঞ্জের কথা। বাজেট, অভিনয়শিল্পী নির্বাচন থেকে হল পাওয়া-সবকিছু নিয়েই তাঁকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। বিপ্লব হায়দারের ভাষ্যে, ‘শাকিব (খান) ভাই, নিশো (আফরান) ভাইয়ের মতো শিল্পী নিতে গেলে বাজেটে কুলায় না। আবার বড় তারকা না থাকলে পরিবেশকেরাও আগ্রহ দেখান না। এসব ম্যানেজ করেই আমাদের চলতে হয়।’
তবে গত ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘উৎসব’ সিনেমার সাফল্য এই নির্মাতাকে আশাবাদী করে তুলেছে। ‘বাক্প্রতিবন্ধীর গল্প নিয়ে মূলধারার সিনেমা দেশে তেমন হয়নি। আশা করি, গল্পের নতুনত্ব দর্শককে আকৃষ্ট করবে। উৎসব প্রমাণ করেছে, অ্যাকশন আর থ্রিলারের বাইরে পারিবারিক গল্পের আলাদা দর্শক আছে। এই সময়ে এমন একটা সিনেমার দরকার ছিল। অনেক নতুন নির্মাতাকেই এটা অনুপ্রাণিত করবে,’ বললেন বিপ্লব।
‘সবচেয়ে কঠিন চরিত্র’
‘আলী’তে বাক্প্রতিবন্ধী যুবকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইরফান সাজ্জাদ। গতকাল অভিনেতা প্রথম আলোকে বলেন, এটাই তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন চরিত্র। ‘আলী একজন বাক্প্রতিবন্ধী। এ ছাড়া তাঁর অন্য শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এমন একটা চরিত্র করা সহজ নয়। শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম, নিজের সর্বোচ্চ দিয়েছি। নিঃসন্দেহে এটাই আমার পুরো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন চরিত্র। শারীরিক ও মানসিকভাবে নিংড়ে নিয়েছে, ছয়-সাত মাস চরিত্রটি থেকে বের হতে পারিনি।’ ইরফান জানালেন, চরিত্রের প্রয়োজনে তাঁকে ইশারা ভাষা শিখতে হয়েছে। এই ভাষার বিশেষজ্ঞরা শুটিংয়ের পুরোটা সময় ইউনিটের সঙ্গে ছিলেন।
নায়ক-পরিচালক রসায়ন
বিপ্লব হায়দারের ‘ভয়াল’ ও ‘আলী’-দুই সিনেমাতেই আছেন ইরফান সাজ্জাদ। অভিনেতা জানালেন, খুঁতখুঁতে এই নির্মাতার সঙ্গে কাজ করতে তাঁর ভালো লাগে।
শুটিংয়ে প্রতিটি বিষয়ের ওপর যেভাবে নজর রাখেন, সেটাও তাঁকে মুগ্ধ করে। বিপ্লব হায়দার জানালেন, ‘আলী’ করতে গিয়েই ‘ভয়াল’-এ যুক্ত হন ইরফান। ‘আলী’র শুটিংয়ে ‘ভয়াল’-এর গল্প শুনে ও কাজ করতে আগ্রহী হয়। ওই সিনেমায় কিন্তু সে মূল চরিত্র না, তারপরও গল্প ভালো লাগায় আগ্রহী হয়েছে। আমিও না করিনি। সে ভালো অভিনেতা, সব পরিচালকই কাজ করতে আগ্রহী হবে,’ বললেন বিপ্লব।
পরীক্ষার মধ্যেও প্রচারে
সিনেমায় রোশনি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিলিতা মেহজাবিন। ওর এইচএসসি পরীক্ষা চলছে, এর মধ্যেও সে ছবির প্রচারে ছুটে বেড়াচ্ছে। জানাল, আগে থেকেই পড়া মোটামুটি গোছানো, তাই খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। মিলিতার মা-বাবা দুজনই বিনোদনজগতের মানুষ। বাবা উপস্থাপক–অভিনেতা শফিউল আলম, মা অভিনেত্রী নাবিলা আলম। ছয় মাস বয়সে হুমায়ূন আহমেদের ‘কালা কইতর’ দিয়ে অভিষেকের পর অমিতাভ রেজা চৌধুরী, আবুল হায়াতসহ অনেক নির্মাতার সঙ্গে কাজ করেছে মিলিতা। তবে পড়াশোনার কারণে মাঝেমধ্যেই অভিনয়ে দীর্ঘ বিরতি পড়ে। জানাল, নির্মাতা সিনেমাটির প্রস্তাব নিয়ে যান তাঁর মায়ের কাছে।
বলেন, ‘আপনার মেয়ের সঙ্গে চরিত্রটি পুরো মানিয়ে যায়, ওকে ছাড়া হবেই না।’ ব্যস, এভাবেই আলীর সঙ্গে যুক্ত হওয়া। মিলিতা জানাল, সে তো বটেই, তার কলেজের বন্ধুরাও অপেক্ষা করে আছে সিনেমাটি মুক্তির, কবে দল বেঁধে দেখতে যাবে!
একটু আক্ষেপ
২০২৩ সালের শেষের দিকে বান্দরবান আর ঢাকায় এক মাস ধরে সিনেমাটির শুটিং হয়। তবে বান্দরবানের শুটিংয়ে থাকতে পারেননি নির্মাতা, গিয়েই আক্রান্ত হন ম্যালেরিয়ায়। ঢাকায় ফেরত আসতে হয়। ‘এই অংশের শুটিং আমার সহকারীরাই সামলেছে। এ ছাড়া নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে বান্দরবানের কিছু জায়গায় শুটিংয়ের অনুমতি পাইনি। এই আক্ষেপটুকু আছে, তারপরও নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে, এটাও কম আনন্দের নয়,’ বললেন বিপ্লব হায়দার।
ঢাকার তিন মাল্টিপ্লেক্স স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস ও লায়ন সিনেমাস ছাড়াও বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্স মুক্তি পাচ্ছে ২ ঘণ্টা ৭ মিনিটের ‘আলী’। সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে আরও আছেন মিশা সওদাগর, কাজী হায়াৎ, শতাব্দী ওয়াদুদ, শওকত সজল প্রমুখ।
আমারবাঙলা/জিজি