বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে প্রতিদিন যাত্রীবাহী বাস,পাথর বোঝাই ট্রাকসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করে। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাকপালা থেকে নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবাঘা পর্যন্ত সড়কের ওপর অবৈধ পার্কিং ঠেকাতে স্থায়ী উদ্যোগ চান যাত্রী, পথচারী ও এলাকাবাসী।
এই সড়কে গত বছরের আগস্ট মাসে একজন, ডিসেম্বর মাসে দুইজন, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে পাঁচজন, এপ্রিল মাসে দুইজন এবং নভেম্বর মাসে একজনসহ লাগাতার দুর্ঘটনায় অনেকে নিহত হয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা মহাসড়ক মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। সড়কের একপাশ দখলে রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় ওভারটেকিংয়ে ঘটছে বিপত্তি। এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি এবং দুর্ঘটনায় প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে। মহাসড়কের পাশে খাবার হোটেল থাকায় দিনেরাতে অবৈধ পার্কিংয়ে যানবাহনের জটলা লেগে থাকে। সড়কের জায়গা দখল করে হোটেলসহ অবৈধ স্থাপনা বাড়ছেই। এই সড়কে দফায় দফায় ছোট বড় দুর্ঘটনায় অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। তবুও স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়নি হাইওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বগুড়া থেকে নাটোরমুখী সড়কের শাকপালা, রাণীরহাট, বীরগ্রাম, ওমরদীঘি, টেংরামাগুর, জামাদার পুকুর, রুপিহার, কুন্দারহাট, নন্দীগ্রাম ফিলিং স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, সেলিনা ফিলিং স্টেশন এবং রণবাঘা এলাকায় সড়কের ওপর দিনেরাতে যানবাহনের জটলা লেগে থাকে। সড়কের ধারে বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল-দোকান থাকলেও নেই পার্কিং ব্যবস্থা। ফলে সড়কে যানবাহন রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চালকরা সেখানেই ঘুমিয়ে থাকেন। জামাদার পুকুর ফিলিং স্টেশনের সামনে সড়কের জায়গায় মাটি ভরাট করে টিনসেড খাবার হোটেল নির্মাণ করা হয়েছে। সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেই। এছাড়া সড়কের পাশে আছে হিমাগার, মাঝেমধ্যে সেখানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে যানবাহন।
শনিবার (১৭ মে ) সকালে বীরগ্রাম বাজার ও নন্দীগ্রামের সেলিনা ফিলিং স্টেশন এলাকায় খাবার হোটেলের সামনে অসংখ্য মালবাহী যানবাহন পার্কিং দেখা গেছে। দীর্ঘ লাইনে ট্রাক দাঁড় করিয়ে চালক-হেলপার হোটেলে খাবার খাচ্ছিলেন। কেউ কেউ খাবার খেয়ে পার্কিং ট্রাকে এবং চাকার সামনে সড়কের ওপরই ঘুমাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় ওভারটেক করার সুযোগ পাচ্ছে না চলন্ত যানবাহন।
স্থানীয়রা বলছেন, পবিত্র ঈদুল আজহা দুয়ারে কড়া নাড়ছে। কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে সড়কপথে বেড়েছে যানবাহন। পশুবাহী ট্রাক-ভটভটি চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্মজীবী মানুষ গ্রামের বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। সড়কপথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছে অবৈধ পার্কিং। মহাসড়ক মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, খাবার হোটেল ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সড়কেই অবৈধ পার্কিং- এর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে চলন্ত যানবাহনের ওভারটেকিংয়ে ঘটছে বিপত্তি। মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও ঠেকানো যায়নি অবৈধ পার্কিং। এ অবস্থা দিনদিন আরো প্রকট হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন, আব্দুর রউফ উজ্জল, আব্দুল জলিল এবং আমিনুল ইসলাম জানান, অবৈধ পার্কিং ঠেকাতে স্থায়ী উদ্যোগ প্রয়োজন। দিনেরাতে মহাসড়কের দুইপাশ দখল করে বাস-ট্রাক সারিবদ্ধ রাখে। চাকুরীজীবি, পথচারী, যাত্রীসহ চলন্ত পরিবহনের চালকরা সবসময় শঙ্কায় থাকেন। এই সড়কে অসংখ্য দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে। প্রথমে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা দেখা গেলেও একদিন পরই অবৈধ পার্কিং বাড়ে। যেন দেখার কেউ নেই। যানবাহন চলাচলে এবং পথচারীরা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন।
এ ব্যাপারে কুন্দারহাট হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ নির্মল চন্দ্র মহন্ত জানান, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে এবং অবৈধ পার্কিং ঠেকাতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান আছে। হাইওয়ে হোটেল এবং যানবাহনের চালকদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। অবৈধ পার্কিং দেখামাত্র নিয়মিত মামলা দেওয়া হচ্ছে।
আমারবাঙলা/ইউকে