জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) জন্য বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের দল গড়া নিয়ে চলছে দলাদলি। ৩০ জনের তালিকা নিয়ে পক্ষপাতিত্ব ও উপেক্ষার অভিযোগ উঠেছে। এই দুই বিভাগের প্রাথমিক দল গড়ার কারিগর আবার বর্তমান দুই ক্রিকেটার সোহাগ গাজী ও মাইশুকুর রহমান। বর্তমান ক্রিকেটারদের প্রাথমিক স্কোয়াড নির্বাচন করার ঘটনা এনসিএলের ইতিহাসে প্রথম বলে জানান জাতীয় দলের সাবেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার।
বরিশাল ও রাজশাহীর এই ঘটনা হতবাক করেছে বিসিবি কর্মকর্তাদেরও। মাইশুকুরের স্বাক্ষর করা তালিকায় বিসিবির ন্যাশনাল চুক্তিতে থাকা শাকির হোসেন শুভ্রকে রাখা হয়নি। এনসিএল উদীয়মান তিন ক্রিকেটার রাহিম আহমেদ, ইমন আলি ও সুজন হাওলাদারকেও প্রাথমিক দলে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি তিনি। বিসিবি উদ্যোগ নেওয়ায় গতকাল থেকে রাজশাহীর অনুশীলন ক্যাম্পে যোগ দেন এই চার ক্রিকেটার। টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান জানান, এই ক্রিকেটারদের ১৫ জনের স্কোয়াডে রাখা না রাখার সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচক প্যানেল। বরিশাল বিভাগের বঞ্চিত ক্রিকেটারকেও অনুশীলনে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগে ভালো মানের ক্রিকেটার বেশি থাকায় মাইশুকুরকে ১৫ জনে রাখতেন না নির্বাচকরা। তিনি খেলেন মূলত সিলেট বিভাগের হয়ে। এই বিভাগের হয়েই ২০১০ সালে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে তাঁর অভিষেক। এনসিএল গত মৌসুমেও টি২০ ও প্রথম শ্রেণির লিগ খেলেছেন সিলেটে। মাইশুকুর এবার নিজেই রাজশাহীর ৩০ জনের দল গড়েছেন নিজেকে রেখে। বিসিবিতে পাঠানো তালিকায় স্বাক্ষরও করেছেন তিনি। যে বিভাগে মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়রা খেলেন, সেখানে মাইশুকুরের সর্বেসর্বা হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মাইশাকুর বলেন, ‘আমি রাজশাহী বিভাগের ক্রিকেটার হলেও খেলতে হয় সিলেটে। আমার রাজশাহীতে খেলতে চাওয়া নিশ্চয়ই দোষ না। বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রাজশাহী দল বানিয়েছি। এখানে রাজনীতি কোথায় জানি না। ১৩ জনের একটি কমিটি করেছেন বিভাগীয় কমিশনার। আমি কমিটির সদস্য হওয়ায় তালিকায় স্বাক্ষর করতে বলা হয়।’ যদিও বিসিবির চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের বাদ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি। গতকাল থেকে রাজশাহীর অনুশীলনে যোগ দেওয়া চার ক্রিকেটার শুভ্র, ইমন, রাহিম, সুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কিছু বলতে রাজি হননি।
জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার সোহাগ গাজীর কাছ থেকে পাওয়া ৩০ জনের তালিকায় দ্বিতীয় বিভাগের ক্রিকেটার রয়েছেন বলে জানান বিসিবি একজন কর্মকর্তা। প্রাথমিক তালিকার খেলোয়াড়দের নিয়ে গতকাল অনুশীলন শুরু করেছে বিভাগটি। যদিও ৮৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা তাসামুল হককে রাখেননি গাজী। গত মৌসুমেও বরিশালের হয়ে খেলেছেন তিনি। এই বিভাগে স্কোয়াড নির্বাচনে প্রধান কোচ মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গেও কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি গাজী।
লন্ডন থেকে ফোনে আশরাফুল বলেন, ‘বরিশালে ভালো ক্রিকেটার কম। যে কারণে ঢাকা লিগের দ্বিতীয় বিভাগের ক্রিকেটারও প্রথম শ্রেণির লিগে খেলতে চায়। এই দলটাকে ভালো করতে হলে খেলোয়াড় তুলে আনতে হলে লিগে ফল পেতে হবে। লিপু ভাইকে আমি অনুরোধ করেছি কয়েকজন ক্রিকেটারকে দেওয়ার জন্য– নাঈম ইসলাম, শামসুর রহমান শুভ, তাসামুল হক, এ টিমে খেলতে গেছে পেসার মুশফিক হাসানের মতো কয়েকজন ক্রিকেটারদের। ভালো দল না দিলে তো ফল খারাপ হবেই। তাই লিপু ভাইকে ভারসাম্য করতে বলেছি।’ বরিশাল গতকাল অনুশীলন শুরু করলেও খেলোয়াড় উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। যে দলটি সম্পূর্ণ বরিশালের ক্রিকেটার খেলানোর নীতি গ্রহণ করেছে, তারাই বিভাগের অনুশীলনে ছিলেন না।
অভিযোগ আপত্তি এবং স্কোয়াড গড়া নিয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে, যাচাই-বাছাই এবং বিচার-বিশ্লেষণ করে ১৫ জনের স্কোয়াড করে দেওয়া হবে কোচ ও অধিনায়কের মতামত নিয়ে।’ বঞ্চিতদের দলে নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে হাসি দিয়ে বলেছেন, ‘দেখা যাক।’
আমারবাঙলা/জিজি