সংগৃহীত
লাইফস্টাইল

নিখুঁতভাবে ডিম সিদ্ধ করার উপায় বললেন বিজ্ঞানীরা

আমার বাঙলা ডেস্ক

ডিম নিখুঁতভাবে সিদ্ধ করতে কত সময় লাগবে? অনেকে বলবেন- এ মামুলি প্রশ্ন; পানি দেব চুলায়; সঙ্গে ডিম। পানি ‘ফুটতে’ শুরু করলে ডিম সিদ্ধ হয়ে গেল।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এজন্য লাগবে পাক্কা আধা ঘণ্টা।

নতুন একটি গবেষণার বরাতে এ তথ্য দিয়েছেন তারা। এতে ডিম সিদ্ধ করার যথাযথ একটি পদ্ধতি বের করার কথাও বলেছেন তারা।

ওই গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বিবিসি লিখেছে, একটি ডিম নিখুঁতভাবে সিদ্ধ করা, এটি মানুষের জীবনে বলা যায় নিঃসন্দেহে সত্য একটি বিষয়। কেননা ডিমের খোলস ছাড়ানোর পর ভেতরটা ঠিকঠাক না থাকলে তা আপনার সকালের নাস্তার সময়টাকে হতাশায় রূপ দিতে পারে। আবার হয়তো ডিম ভাঙার পর পাউরুটির টোস্টের টুকরো সেটিতে চুবিয়ে নিতে গিয়ে দেখলেন কুসুমটি শুকনো ও ঝুরঝুরে হয়ে গেছে। কিংবা সাদা অংশ চটচটে হয়ে আরও খারাপ অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। অবস্থা যদি এই হয় তাহলে তা আপনার রান্না ও খাওয়ার আনন্দকে ডোবাবে।

সমস্যা হচ্ছে, ডিমের কুসুম ও অ্যালবুমেন (ডিমের সাদা অংশ) সিদ্ধ হয় দুটি ভিন্ন তাপমাত্রায়। কুসুমের জন্য তাপমাত্রা প্রয়োজন ৬৫ ডিগ্রি সেলিসিয়াস বা ১৪৯ ফারেনহাইট আর সাদা অংশের জন্য দরকার আরেকটু বেশি ৮৫ ডিগ্রি সেলিসিয়াস বা ১৮৫ ফারেনহাইট।

ডিম সিদ্ধ করার প্রচলিত পদ্ধতিতে সাধারণত বিসদৃশ এ দুটি ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে একটি আপসরফা করা হয়। একটি ডিমকে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (২১২ ফারেনহাইট) পুরোপুরি সিদ্ধ বা ‘হার্ড বয়েল’ করলে সাদা অংশটি কোমল থাকবে, যা আপনার কাছে ভালোই ঠেকবে। এক্ষেত্রে কুসুমটি পুরোপুরি শক্ত হয়ে যাবে, যদি এমনটি আপনার পছন্দের হয় তবে কথা নেই। তবে নরম ও তরল কুসুম পছন্দ হলে হতাশ হতে হবে।

আরেকটি পদ্ধতিতে ডিম সিদ্ধ করা হয়, যা ‘সস ভিড’ নামে পরিচিত। এ প্রক্রিয়ায় ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (১৪০-১৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এক ঘণ্টার জন্য গরম পানিতে ডিম সিদ্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে ডিমের কুসুমটি তরল অবস্থায় থাকে, যা খেতে অনেকের কাছে সুস্বাদু ঠেকে এবং সাদা অংশটি হয় হালকা ও স্বচ্ছ।

যাই হোক, ডিম সিদ্ধের জটিল এসব কথাবার্তা নিয়ে আর ভাবতে হবে না। গবেষকরা এখন নিখুঁত একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। পাশাপাশি তারা দেখিয়েছেন, এটি শুধু সুস্বাদুই নয় বরং আপনার জন্য বেশ ভালো।

ইতালির পোজুওলিতে ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের বিজ্ঞানী পেলেগ্রিনো মুস্তোর নেতৃত্বে গবেষকরা তাদের গবেষণাপত্রে কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডাইনামিক্স (সিএফডি) ব্যবহার করে ডিম সিদ্ধের প্রথম একটি সিমুলেশন তুলে ধরেছেন।

সিএফডি হল কম্পিউটার ব্যবহারের একটি বিজ্ঞান, যেখানে তরল ও গ্যাস কীভাবে প্রবাহিত হয় তা অনুমান করা হয়। এতে ভর, গতি ও শক্তি সংরক্ষণের পদার্থ বিদ্যার সূত্র অনুসরণ করা হয়।

পেশাদার বেশির ভাগ শেফ ও অপেশাদার রাঁধুনির কাছে সিমুলেশনের মাধ্যমে পাওয়া নতুন পদ্ধতির প্রস্তাব অপরিচিত হলেও তা ভালো ফল দিতে পারে। এ পদ্ধতিকে গবেষকরা বলছেন ‘ধাপে ধাপে রান্না’, যাতে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২১২ ফারেনহাইট) ফুটন্ত পানিতে একটি ডেকচিতে ডিম সিদ্ধ করা হয়। পরে তা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৮৬ ফারেনহাইট) কুসুম গরম পানিতে রাখা হয়। এক্ষেত্রে ভালো ফল পেতে প্রতি দুই মিনিট পর পর ৩২ মিনিট ধরে ডিমগুলোকে ভিন্ন তাপমাত্রার গরম পানির পাত্রে স্থানান্তর করতে হবে।

এটি রান্নাঘরে ডিম সিদ্ধ করতে দিয়ে যারা ঘরের অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সেসব রাঁধুনি বা গৃহিণীদের জন্য আদর্শ পদ্ধতি নয় বলেও মন্তব্য করেছেন গবেষকরা। তবে যদি আপনি এতটা সময় দিতে ও পরিশ্রম করতে রাজি থাকেন তাহলে এর ফলাফলও হবে দারুণ।

বিজ্ঞানীরা যখন নতুন এ পদ্ধতি বাস্তব জীবনে প্রয়োগের চেষ্টা করেন, তখন সিদ্ধ ডিমটি ব্যতিক্রম হিসেবেই তাদের কাছে ধরা দেয়।

তারা নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ও হাই-রেজোলিউশন মাস স্পেকট্রোমেট্রি ব্যবহার করে ডিমের গঠন, স্বাদ ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করেছেন। এর থেকে পাওয়া ফলাফল বলছে, পর্যায়ক্রমে সিদ্ধ ডিমের কুসুম ‘সস ভিডে’র মতই নরম থাকে, তবে এটি এখন পর্যন্ত ভালো।
যাই হোক, এটি ‘সস ভিডে’র মতো সিদ্ধ ছিল না। ডিমের সাদা অংশ তরল ও কুসুম অর্ধসিদ্ধ ছিল না। বরং এটি প্রচলিত সিদ্ধ ডিমের মতোই নরম ছিল।

গবেষণাপত্রটির লেখকরা বলছেন, এটি হওয়ার কারণ সম্ভবত সিদ্ধের সময় ডিমের সাদা অংশের তাপমাত্রা ‘পর্যায়ক্রমে’ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৫ ফারেনহাইট) এবং ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২১২ ফারেনহাইট) ছিল; কিন্তু কুসুমটি সিদ্ধের তাপমাত্রা ৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১৫৩ ফারেনহাইট) মধ্যে ছিল।

তবে বিস্ময়করভাবে রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এভাবে ডিম সিদ্ধ করলে ডিমের কুসুমে অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় বেশি পরিমাণে পলিফেনল থাকে। এ ধরনের যৌগমূলগুলো সাধারণত উদ্ভিদে পাওয়া যায়, যা অন্যান্য পদ্ধতিতে ডিম সিদ্ধের থেকে বেশি স্বাস্থ্যকর। এ ধরনের যৌগগুলো সাধারণত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহ-নিবারক বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত।

গবেষণা বলছে, উদ্ভিদ সংকটময় পরিস্থিতিতে সূর্যের অতিবেগুণি রশ্মি, খরা বা পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পলিফেনলকে ব্যবহার করে থাকে। এটি মানুষের জন্যও উপকারী হতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মহামারী সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল বলছে, খাদ্যে উচ্চমাত্রায় পলিফেনল গ্রহণের ফলে হৃদরোগ, নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার ও স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি কমে।

সেজন্য এমন উপকার পেতে এরপর থেকে ‘ধাপে ধাপে’ ডিম সিদ্ধ করতে পারেন এবং এটি সকালের নাস্তায় পাউরুটির টোস্টের সঙ্গে খাওয়ার জন্য দারুণ উপকরণ হতে পারে।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২৫০, আহত ৫০০

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ৬ মাত্রার শক্তিশালী ও ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা...

দুপুরে সিইসির সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মা...

ডা. ফাতেমা দোজাকে বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

সরকারি চাকরিতে ইস্তফা প্রদানের পর তথ্য গোপন করে পুনরায় যোগদান, যুক্তরাষ্ট্রে...

বাকৃবিতে কঠোর নিরাপত্তা, হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা

প্রশাসনের নির্দেশে হল ছাড়ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের নেপথ্যে ছাত্রী হেনস্তা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের নেপথ্যে ছাত্রী হেনস্তাস্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ...

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে বেলজিয়াম, ইসরায়েলকে নিষেধাজ্ঞা

ফিলিস্তিনকে চলতি মাসের শেষ দিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃ...

হত্যার উদ্দেশ্যে নুরুল হককে আঘাত করা হয়েছে: মির্জা ফখরুল

হত্যার উদ্দেশ্যে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে আঘাত করা হয়েছে বলে মন্তব...

হাবিব-মনিরের নেতৃত্বে পুলিশে গড়ে ওঠে ২ গ্রুপ, জবানবন্দিতে মামুন

ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামের নেতৃত...

বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে : হাইকোর্ট

এখন থেকে সারা দেশের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের হা...

ঢাকায় তিন দিনের সফরে আসছেন টিআই চেয়ারম্যান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)-এর চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ তিন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা