ফেনীতে আওয়ামী সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফেনীতে সরকারি লেক ভরাট করে মার্কেট-দোকান নির্মাণ করে বিনা রশিদে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জামানতের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। ফলে গুরুত্বপূর্ণ পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই ফেনী শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে করে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয় পৌরবাসীদের।
আসন্ন বর্ষাকালকে সামনে রেখে লোক দেখানো লেক পরিষ্কার করা হলেও ভরাটকৃত লেক উচ্ছেদ-অভিযানে কোনো তৎপরতা নেই প্রশাসনের। এতে পৌরবাসীর মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্রের সরকারি লেকগুলো ভরাট করে মার্কেট-দোকান নির্মাণ করার ‘মহোৎসব’ শুরু হয়।
ফেনী শহরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ট্রাঙ্ক রোডের পূর্বপাশ থেকে দাউদপুর পুল পর্যন্ত একটি খাল আছে। অথচ শহরের দক্ষিণাংশের খালের খাজা আহম্মদ লেকটি বালি-মাটি দিয়ে ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়। সেখানে প্রায় ৩৬৫টি দোকান বরাদ্দ বাবদ বিনা রশিদে জামানতের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র।
আবার খাজা আহম্মদ লেক ভরাটের পর ওই লেকের বিপরীতে পুরাতন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শচিন্দ্রপাল ব্রিজের পর থেকে দাউদপুর পুল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার জলাধার ভরাট করা হয়।
একই সঙ্গে ফেনী রেলস্টেশন সংলগ্ন দমদমা খাল ও রেলওয়ের পুকুরসহ ৩৬৬ ডিসিমেল জলাধার ভরাট করে একই চক্র। ফলে সামান্য বৃষ্টির পানিতে ফেনী শহরের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখেছে শহরের বাসিন্দারা।
২০২১ সালের ডিসেম্বরের দিকে শহরের দাউদপুর চৌধুরীবাড়ি এলাকায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত পাকা ড্রেনের ওপর পৌরসভার একটি চক্র অবৈধভাবে ৩৫টি দোকানঘর নির্মাণ করে সেগুলো ভাড়া দেন এবং দোকান মালিকদের কাছ থেকে জামানত হিসেবে প্রায় দুকোটি টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরবর্তীতে দোকানগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা থেকে বারবার পৌরসভাকে তাগাদা দেওয়ার পরও তারা কর্ণপাত না করায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ওই ৩৫টি দোকান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় এবং আরো শতাধিক দোকান উচ্ছেদ বাকি থেকে যায়।
একের পর এক খাল ভরাট হলেও প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নীরব ভূমিকা পালন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও এ যাবৎ বহাল তবিয়তে রয়েছে ভরাটকৃত লেকগুলো।
স্থানীয়রা জানান, ফেনীর বর্তমান জেলা প্রশাসক যোগদানের পর থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, কৃষি জমির মাটি কাটা রোধ ও রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি রোধে ব্যাপকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়, যা অতীত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু শহরের গুরুত্বপূর্ণ ভরাটকৃত লেকগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ আমলের দুর্বৃত্তরা এখনও প্রশাসনের ওপর ভর করে আছে বলে অভিযোগ।
আব্দুল হাই নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘শহরের গুরুত্বপূর্ণ লেকগুলো ভরাট করে ফেলায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে আমাদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অথচ ফেনী পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন পরিষ্কার অভিযানে বের হলেও ভরাটকৃত লেক উচ্ছেদ করার কোনো চেষ্টাই করছেন না।’
এছাড়া শহরের আশপাশে জলাশয়, খাল ও লেকগুলো প্রভাবশালীরা দখল করে নেওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জলজট তৈরি হয়। এতে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
ফেনী পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আপাতত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করা হলেও কিছু প্রক্রিয়া শেষে ভরাটকৃত লেকের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিষ্কার অভিযান চালানো হয়। পরবর্তীতে ভরাটকৃত লেকের ওপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমারবাঙলা/ইউকে