গত শুক্রবার সারাদিন স্বাভাবিক ছিলেন বলিউডের ‘কাঁটা লাগা গার্ল’খ্যাত মডেল ও অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালা। দিনটি কাটিয়েছিলেন পরিবারের সঙ্গে ব্যস্ততায়। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেছে, সারাদিন তাঁকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি মোটেও। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করেই শেফালি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়েন।
জানা গেছে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই তিনি কিছু ওষুধ গ্রহণ করেছিলেন। এ ঘটনার পরই মুম্বাই পুলিশ তদন্তে নামে। শনিবার রাত থেকে একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা কাজ করছেন। ঘটনার পরপরই শেফালির বাড়ি থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছে মুম্বাই পুলিশের একটি বিশেষ দল।
* শেফালি রাত সাড়ে ১০টায় হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েন।
* সারা দিন উপোস ছিলেন।
* মৃত্যুর আগে ফ্রিজ থেকে কিছু খাবার খেয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পরিবার।
* ঘরে পাওয়া গেছে অ্যান্টি-এজিং, স্কিন গ্লো ও ভিটামিন ট্যাবলেট।
* এক দিন আগের রান্না করা খাবার খেয়েই সে ভেঙে পড়ে’।
* সোমবার ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট।
রাতভর তদন্ত, পরিবারের জবানবন্দি
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে শেফালির রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে গিয়েছিল। এর পেছনে বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণ উঠে এসেছে। পুলিশ জানায়, ওই দিন শেফালির বাড়িতে সত্যনারায়ণ পূজার আয়োজন চলছিল। পূজার কারণে তিনি উপোস ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সারা দিন তিনি কিছু খাননি। যদিও কেউ কেউ দাবি করেছেন, তিনি ফ্রিজ থেকে অল্প কিছু খেয়েছিলেন।
পরিবারের সদস্যদের জবানবন্দি অনুযায়ী, পূজার আয়োজন ও অতিথিদের উপস্থিতিতে শেফালি সারা দিন ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় তিনি মানসিক চাপেও ছিলেন বলে জানা গেছে। পুলিশ শেফালির স্বামী অভিনেতা পরাগ ত্যাগীসহ পরিবারের সদস্যদের ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বক্তব্য রেকর্ড করেছে। পরাগ ত্যাগী বলেন, ‘ব্যস্ততার মধ্যে শেফালি এক দিন আগের রান্না করা কিছু খাবার খেয়েছিল। সেটার পরই তার শরীর ভেঙে পড়ে।’
ওষুধ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শেফালির ঘর থেকে দুটি অ্যান্টি-এজিং ওষুধের প্যাকেট পাওয়া গেছে। পরিবার জানায়, বয়সের ছাপ না পড়ার জন্য তিনি পাঁচ–ছয় বছর ধরে এ ধরনের ওষুধ খাচ্ছিলেন। এ ছাড়া স্কিন গ্লো ট্যাবলেট ও বিভিন্ন ভিটামিনও তিনি নিয়মিত গ্রহণ করতেন। কিছু ওষুধ তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই খেতেন। তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ সেই ওষুধ সরবরাহকারী দোকানের ফার্মাসিস্টের জবানবন্দিও নিয়েছে। মোট ১০ জনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে।
ময়নাতদন্তে কী মিলল
শেফালির মৃত্যুর কারণ জানতে পুলিশের সঙ্গে কাজ করছেন পাঁচ চিকিৎসক। তাঁদের প্রাথমিক ধারণা, দীর্ঘ সময় উপোস থাকার কারণে রক্তচাপ কমে গিয়ে হৃদ্রোগ হতে পারে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ওষুধ গ্রহণের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও সমস্যা তৈরি হতে পারে।
হায়দরাবাদের যশোদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির প্রধান পরামর্শক ধীরেন্দ্র সিংহানিয়া এনডিটিভিকে বলেন, ‘মৃত্যুর কারণ হতে পারে স্টেরয়েড সেবন, ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ কিংবা হরমোন থেরাপি।’
তবে প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনেই নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, আজ (সোমবার) যেকোনো সময় তারা ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পাবে। তারপরই শেফালির মৃত্যু নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আমারবাঙলা/জিজি