প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের খসড়া অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ, উদ্বেগ ও ক্ষোভ আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে পৃথক কর্মসূচিতে তারা রাজধানীতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ এখনো জারি না হওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
ঢাকা কলেজের সামনে বিক্ষোভ শেষে ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীর আব্দুর রহমান ঘোষণা দেন আগামী শনিবার (৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সময় দেওয়া হলো কর্তৃপক্ষকে। এর মধ্যে অধ্যাদেশ জারি না হলে রবিবার থেকে শিক্ষা ভবনের সামনে তারা টানা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করবেন। সকাল থেকে বিক্ষোভ মিছিলের পর শিক্ষার্থীরা মিরপুর সড়ক অবরোধ করেন এবং দুই ঘণ্টার বেশি অবস্থানের পর নতুন কর্মসূচি দিয়ে অবরোধ তুলে নেন।
অন্যদিকে একই দিন সাত সরকারি কলেজকে একীভূত করে স্কুলিং পদ্ধতিতে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ গঠনের উদ্যোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা কলেজ ইউনিটের আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে তারা দাবি করেন, হঠাৎ করে নাম, কাঠামো ও প্রশাসনিক পরিচয় পরিবর্তন করলে সাত কলেজের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হবে এবং শিক্ষার পরিবেশে অস্থিরতা তৈরি হবে।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খসড়া অধ্যাদেশ গবেষণানির্ভর নয় এবং এতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের ক্লাস, পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ একই সময়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে—যা শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে। একই সাথে নারী শিক্ষার অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী ১৫০ বছরের ইডেন কলেজ ও প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্য ও প্রাচীর একটি প্রতিষ্ঠানকে বিনষ্ট করার পায়তারা করা হচ্ছে। তারা আরও বলেন, অবকাঠামো, সিলেবাস ও অংশীজনের মতামত ছাড়া ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা পদ্ধতিগতভাবে ভুল। উচ্চ মাধ্যমিক স্তর সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কাও অযৌক্তিক নয়, যা সাত কলেজের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষক ড. মো. দিললর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত কাঠামো বাস্তবায়িত হলে সরকারি কলেজের সক্ষমতা কমে যাবে এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ত্বরান্বিত হতে পারে ফলে রক্ষণশীল পরিবারের প্রায় চল্লিশ হাজার নারী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় ঝুঁকিতে পড়বেন।
পরিচয় সংকট ও কাঠামোগত অনিশ্চয়তায় সাত কলেজের শিক্ষকরা উদ্বিগ্ন:-
প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের খসড়া অধ্যাদেশে সাত কলেজের শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় বাধা হলো পরিচয় সংকট ও পেশাগত অনিশ্চয়তা।নতুন কাঠামোয় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষক–কর্মকর্তাদের ক্লাস, পরীক্ষা বা প্রশাসনিক ভূমিকার স্পষ্ট নির্দেশ নেই। এতে দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
এ ছাড়া সিলেবাস, অবকাঠামো ও অংশীজনদের মতামত ছাড়া ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়াকে তারা শিক্ষার মান ও ঐতিহ্যের জন্য বড় হুমকি মনে করছেন। নতুন কাঠামো চূড়ান্ত না হওয়ায় ভবিষ্যৎ দায়িত্ব বণ্টন ও প্রশাসনিক অবস্থান নিয়েও তারা গভীর অনিশ্চয়তায় আছেন—যা তাদের মূল বাধা।
নতুন অধ্যাদেশ ঝুলে থাকায় ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বাধাসমূহ:-
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি যে বাধায় পড়েছে তা হলো ডিগ্রি–পরিচয় ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা। খসড়া অধ্যাদেশ চূড়ান্ত না হওয়ায় তারা জানে না কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে তারা পড়ছে বা ভবিষ্যতে সার্টিফিকেটের মূল্যায়ন কী হবে।
বিক্ষোভ–অবরোধের কারণে ক্লাস, পরীক্ষা ও সেশন বিলম্বিত হচ্ছে এবং রাস্তায় অবস্থান নেওয়ায় নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকিও বাড়ছে। অবকাঠামো প্রস্তুতির অভাব, শিক্ষক সংকট ও সিলেবাসের অস্পষ্টতাও তাদের শিক্ষাজীবনে বড় বাধা তৈরি করছে।
শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা সর্বসম্মতভাবে দাবি করেন, অংশীজনদের মতামত গ্রহণ করে, গবেষণানির্ভর ও স্থিতিশীল কাঠামো নিশ্চিত করে দ্রুত অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করতে হবে। অন্যথায় চলমান অস্থিরতা বাড়তে পারে এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।
আমারবাঙলা/এসএ/আরএ