নিজের রূপ কিংবা দেহ নিয়ে কেউই পুরোপুরি সুখী নন। যিনি মোটা তিনি ভাবেন আহারে যদি স্লিম হতে পারতাম। যিনি স্লিম তিনি ভাবেন কেমন রোগা রোগা দেহ আমার; অরেকটু মোটা হলে ক্ষতি কী হতো? এসব ভাবনা থেকেই হয়তো ইটিং ডিজঅর্ডারের সৃষ্টি।
এ ছাড়া আমাদের চারপাশে দেখা যায় অনেকের খাবারের প্রতি অনীহা। কোনো কিছুতেই তার রুচি নেই। এধরনের সমস্যাকেই মেডিক্যালের ভাষায় বলা হয় ইটিং ডিজঅর্ডার। এটি একটি রোগ; তা আমরা অনেকেই জানি না।
এ সমস্যায় ভোগা সেলিব্রিটিদের সংখ্যাও নেহাত কম না। এমন অনেক তারকা আছেন যারা এই রোগের সঙ্গে লড়াই করেছেন অনেক বছর।
দেখা যাক তাদের কী সমস্যা ছিল এবং কীভাবেইবা তারা রোগটিকে মোকাবিলা করেছেন-
টেলর সুইফট
২০২০ সালে টেলর সুইফটকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানায় নেটফ্লিক্স। মিস আমেরিকানা নামের সেই তথ্যচিত্রেই প্রথম জানা যায়, এই গায়িকারও ইটিং ডিজঅর্ডার ছিল। সুইফট বলেন, ‘একসময় আমার মাথায় গেঁথে গিয়েছিল, যাই দেওয়া হোক, আমি খেতে পারব না। এই বিষয়টি আমি আবার ইতিবাচকভাবেই দেখে গেছি। তারপর হঠাৎ বুঝতে পারলাম, কোনো খাবারেই আমার আগ্রহ নেই। খাবার দেখলেই একধরনের অস্বস্তি হতে থাকে।’
শোয়ের সময় সুইফট মনে করতেন, গানটাই তার সব। অথচ ঠিকমতো না খেলে যে মঞ্চেও পারফর্ম করা যায় না, এটি যতক্ষণে বুঝেছেন, তখন দেরি হয়ে গেছে। সুইফট বলেন, ‘এখন বুঝতে পারি, আপনি যদি ঠিকমতো না খান, শক্তি পাবেন না। আর শক্তি না পেলে তার প্রভাব আপনার শোতেও পড়বে।’
এড শিরান
২০২৩ সালের মার্চে এক সাক্ষাৎকারে এড শিরান নিজেই জানান, তার ইটিং ডিজঅর্ডারে ভোগার কথা। বেশ কয়েক বছর এই সমস্যায় ভুগেছেন গায়ক। বিয়ারের সঙ্গে কাবাব খেতে ভালোবাসা এই গায়ক নিজেকে ‘মোটা’ ভাবতেন। নিজের সৌন্দর্য নিয়ে ভুগতেন দ্বিধায়। বিশেষ করে ওয়ান ডিরেকশন ব্যান্ডের বাকি সদস্যদের স্লিম ও সিক্সপ্যাক গড়ন তাকে আরো হতাশায় ফেলে দিত। তাই ‘খাবারের লোভ’ সংবরণ করতে শুরু করেন। শিরান ভেবেছিলেন, না খেয়ে থাকলেই শুকিয়ে অন্য তারকাদের মতো সুঠাম দেহ পাবেন, হয়ে উঠবেন আরো আকর্ষণীয়। খেতে ভালোবাসা মানুষটা একসময় খাবার দেখলেই শঙ্কায় পড়ে যেতেন। শিরান বলেন, ‘আপনি যখন জাস্টিন বিবার বা শন মেন্ডেসের মতো তারকার সঙ্গে মঞ্চ শেয়ার করবেন, তখন নিজেকে নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগা কী স্বাভাবিক নয়? বিশেষ করে ওই বয়সে! মনে হতো, সব তারকার কী সুন্দর শরীর, আমি কেন এত মোটা।’
এই হতাশাই শিরানকে খাবারের প্রতি অনীহ করে তুলে। একসময় খাবার দেখলেই তার অসহ্য লাগতে থাকে। অনেকে হয়তো এই সমস্যাটি লুকিয়ে রাখেন, তাদের প্রতি শিরানের পরামর্শ, ‘এটি ভালো অভ্যাস না। নিজেকে ফিট রাখতে চাইলে নিয়মিত খাবার খেতে হবে, তবে সেটির পরিমাণ হবে পরিমিত। একই সঙ্গে শরীরচর্চাও করতে হবে। যে চর্চা আমি এখন করছি।’
জায়ান মালিক
দীর্ঘদিন খেতে না পারার অসুখে ভুগেছেন জায়ান মালিক। ২০১৬ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী জায়ান-এ প্রথম সেই কঠিন সময়ের কথা সবার সামনে আনেন এই ব্রিটিশ গায়ক। এই বইতে জায়ান জানান, ওয়ান ডিরেকশন ব্যান্ডের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। কনসার্টের শিডিউল নিয়ে টালমাটাল পুরো দল। আজ এই দেশে তো কাল আরেক দেশ। একবেলা খেতে বসে কখনো পুরো খাবার শেষ করতে পারতেন না মালিক। টেবিলে একাধিক পদ থাকলেও সময়ের কারণে একটার বেশি পদ ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হতো না। এভাবে চলেছে বছরের পর বছর। পরে সময় নিয়ে খেতে বসলেও আর খেতে পারতেন না। ব্যস্ততার কারণে জায়ান মালিক সেই সময়ে বুঝতে পারেননি, তিনি ইটিং ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। যখন বুঝতে পারেন, তত দিনে তার ওজন কমে গেছে, দেখা দিয়েছে নানা শারীরিক সমস্যা। সেই অবস্থা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠেছেন মালিক।
লিলি কলিন্স
এমিলি ইন প্যারিস সিরিজের ‘এমিলি’ লিলি কলিন্সও কিশোরী বয়সে ইটিং ডিজঅর্ডারে ভুগেছেন। টু দ্য বোন সিনেমায় অভিনয় করার পর এক সাক্ষাৎকারে লিলি বলেন, ‘এই সিনেমায় আমার অভিনীত চরিত্রটি নিজের জীবনের সঙ্গে খানিকটা মিলে যায়। কারণ, আমি নিজেই টিনএজ বয়সে খাবারের সমস্যায় ভুগেছি।’ লিলির লেখা বই আনফিল্টারড: নো শেইম, নো রিগ্রেটস, জাস্ট মির একটা গোটা অধ্যায়জুড়ে আছে সেই সময়ে খাবার নিয়ে তার সংগ্রামের কথা। সেই সময়ে নিজের ইটিং ডিজঅর্ডারের সমস্যা আর দশজন কিশোরের মতো তিনিও লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করতেন। ফলে সেটি আরো দীর্ঘায়িত হতে থাকে। লিলির পরামর্শ তাই, এমন সমস্যা নিয়ে কম বয়সীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে খোলামেলা আলোচনা জরুরি। সমস্যা শেয়ার করলেই মিলবে সমাধান।
টম ডেলি
অলিম্পিকে পদকজয়ী ব্রিটিশ তারকা ডাইভার ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব টম ডেলিরও ছিল ইটিং ডিজঅর্ডার। টম জানান, ২০১২ সালের দিকে আমি প্রতিদিন নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতাম। নিজের ওজন মাপতাম আর নিজের শরীর দেখে নিজেই লজ্জিত হয়ে ভাবতাম, বেঢপ।
এই ভাবনার অন্য একটা কারণও অবশ্য ছিল, তখন একজন ডাইভার হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন টম। যেখানে তাকে শুনতে হতো, ‘তোমার ওজন বেশি।’ এই বুলিং থেকেই একসময় খাওয়া নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন হতে গিয়ে ইটিং ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হন টম, ‘ছেলেদের এই বয়সে এমন সমস্যা নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলাও কঠিন। খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি হতে গিয়ে আমার এই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তখন শুনতে হতো, পরাফর্ম করতে হলে তোমাকে ওজন কমাতে হবে।’
সূত্র : ভোগ, পিপল ও ইউএস ম্যাগাজিন।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            