শেরপুরের সীমান্তবর্তী টিলায় শাল-গজারি বাগানজুড়ে এখন রংবেরঙের ফুলের সমাহার। মৌসুমের এ সময়ে সেখানে মৌয়ালদের দম ফেলার সময় নেই যেন। বনাঞ্চলের সুবিধাজনক স্থানে তাঁরা বাঁশ বেঁধে বানিয়েছেন টংঘর। সেখানে তাঁরা রাত্রি যাপন করছেন। আর ঠিক এর নিচেই সাজানো হয়েছে শত শত মৌবাক্স। এর ভেতরে দিনরাত অবিরাম গুঞ্জনে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছি।
মৌয়াল ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ২মাস এভাবেই শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্ত বনাঞ্চলে পাহাড়ি ফুলের মধু সংগ্রহ করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শতাধিক মৌয়াল। কেউ টংঘরে, আবার কেউ তাঁবু গেড়ে পাহাড়ে অবস্থান নেন। শ্রীবরদীতে ৪০ থেকে ৪৫, ঝিনাইগাতীতে ৩০ থেকে ৩৫ ও নালিতাবাড়ীতে ২৫ থেকে ৩০টি দল এখন বিভিন্ন পাহাড়ে অবস্থান করছে।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা থেকে ছয়জনের একটি দল নিয়ে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী এলাকায় মধু সংগ্রহে এসেছেন মৌয়াল বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, তাঁরা সারা বছর বিভিন্ন এলাকায় মৌবাক্স নিয়ে মধু সংগ্রহ করেন। এই ২মাস পাহাড়ের ফুলের ওপর তাঁদের প্রধান নির্ভরতা। তাই এ সময়ে তাঁদের মতো অনেকে শেরপুরে আসেন। এবার তিন শতাধিক বাক্সে দেড় মাসে ১৫-১৬ মণ মধু পেয়েছেন। আরও ১০ থেকে ১২ দিন মধু সংগ্রহ চলবে।
মৌয়ালেরা বলেন, সব মিলিয়ে শতাধিক মৌয়ালের ২৫ থেকে ৩০ হাজার বাক্সে চলছে মধু সংগ্রহ। দেড় মাসে একজন মৌয়াল ১৫ থেকে ১৭ মণ মধু পাচ্ছেন।
মৌয়ালেরা বলেন, এখন পাহাড়ি ফুলের মধু সংগ্রহ চলছে। এরপরই শুরু হবে শর্ষে ফুলের মধু সংগ্রহ। সারা বছর এভাবেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ ও বিক্রি করে থাকেন তাঁরা। বনফুলের মধু বাজারে প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানান বন বিভাগের বালিঝুড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা সুমন মিয়া। যদি স্থানীয় লোকজনকে মধু সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, তাহলে তাঁদের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে বন বিভাগের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
আমারবাঙলা/এসএ