নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন ইলিয়াসের নেতৃত্বে পুলিশের গাড়ির মধ্যেই মারজান উদ্দিন (২৯) নামে এক যুবককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও থানা প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। মারধরকারীরা উপজেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং যুবদল নেতা ইলিয়াসের অনুসারী বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে থানা প্রাঙ্গণে হট্টগোল সৃষ্টির চেষ্টা দেখা যায়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এক নারীসহ দুজনকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৬ অক্টোবর উপজেলার নলচিরা গ্রামের নিগার সুলতানার বিয়েতে নিজ গ্রামের হুজুরের বদলে অন্য গ্রামের হুজুর দিয়ে পড়ানো হয়। এ নিয়ে মসজিদের ক্যাশিয়ার হেলাল মাঝির সঙ্গে কনের কাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিনের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে রোববার সকালে শাহাব উদ্দিনকে রামচরণ বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হেলাল মাঝির নেতৃত্বে মারধর করা হয়।
খবর পেয়ে শাহাব উদ্দিনের ভাই মারজান ও নাজিম ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও বেধড়ক মারধর করা হয় এবং কুপিয়ে আহত করা হয়। এরপর হামলাকারীরা তাদের দুটি বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয় বলে অভিযোগ।
পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ শাহাব উদ্দিন ও মারজানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অভিযোগ উঠেছে, এই খবর পেয়ে যুবদল নেতা ইসমাইল হোসেন ইলিয়াস তার অনুসারীদের নিয়ে হাসপাতালের সামনে জড়ো হন। পুলিশের উপস্থিতিতেই তাঁর নেতৃত্বে মারজান ও শাহাব উদ্দিনের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করা হয়।
একপর্যায়ে হাসপাতাল থেকে থানায় নেওয়ার পথে হাসপাতালের ফটকের সামনে পুলিশের গাড়িতেই হামলা চালানো হয়। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা পুলিশের গাড়ি থামিয়ে মারজানকে বেধড়ক মারধর করে তাঁর শরীর থেকে সব ব্যান্ডেজ খুলে নেন। এরপর থানার সামনে গিয়েও তাঁর ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করা হয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিনহাজুল আবেদীনকে যুবদল নেতাকে উদ্দেশ করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শোনা যায়। এসআই মিনহাজুল বলেন, "আপনার মতো মানুষ যদি...। তাকে আমরা হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসছি, তাকে মারার দরকার আছে? তার বিরুদ্ধে মামলা হবে।" একপর্যায়ে তিনি মাটিতে বসে প্রশ্ন করেন, "আমার সামনে আসামিকে মারধর করে কীভাবে?" ওই ভিডিওতে ইলিয়াসকে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে থানা প্রাঙ্গণে প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়।
আহত মারজান উদ্দিন ও তাঁর বড় ভাই শাহাব উদ্দিনকে পরে গুরুতর আহত অবস্থায় থানায় সোপর্দ করা হয়।
অন্যদিকে, হেলাল মাঝি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, মসজিদের হুজুরকে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রশ্ন করলে শাহাব উদ্দিন তাঁকে হুমকি দেন। রোববার সকালে শাহাব উদ্দিন উল্টো তাঁর (হেলাল মাঝির) ওপর হামলা করেন এবং তাঁর আরও চার ভাই এসে কুপিয়ে তাঁদের গুরুতর আহত করেন।
হাতিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক বাবর আজম অভিযোগ করেন, যুবদল আহ্বায়ক ইলিয়াসের নেতৃত্বেই হামলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইলিয়াস বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের অনুসারী হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
তবে হামলার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে যুবদল নেতা ইসমাইল হোসেন ইলিয়াস বলেন, তাঁর উপস্থিতিতে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। উল্টো তিনি তাঁর কর্মীদের তাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি শাহাব উদ্দিনকে ‘ছাত্রলীগের লাঠিয়াল’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, বিষয়টি এনসিপি বনাম বিএনপি রূপ নিয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মন্জুরুল আজিম সুমন জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেবেন।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা বলেন, দুই গ্রুপই কোপাকুপি করেছে। তিনি হামলাটিকে ‘রাজনৈতিক বিষয়’ বলতে রাজি হননি। তবে তিনি স্বীকার করেন, “উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে পুলিশের গাড়িতেই [মারজানের] সকল ব্যান্ডেজ খুলে নিয়ে তাকে পিটানো হয়।” ওসি আরও বলেন, “পরবর্তীতে অন্য গ্রুপ থানা প্রাঙ্গণে এসে বলে ফ্যাস্টিসকে আমাদের হাতে তুলে দেন, আমরা তাকে নিয়ে যাব। এ নিয়ে থানার প্রাঙ্গণে উচ্চবাচ্য হয়েছে।”
উভয় পক্ষের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
আমারবাঙলা/এফএইচ