সংগৃহীত ছবি
মতামত

বন্যা পরবর্তী কৃষির পুনর্নির্মাণ

ড. মশিউর রহমান : জলবায়ুগত পরিবর্তন, ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভূপ্রকৃতিগত কারণে বাংলাদেশ প্রায় প্রতি বছরই বন্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রতি বছর বন্যায় সবচেয়ে বেশি যে খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেটি কৃষি খাত। বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি এ দেশের কৃষি। দেশের প্রতিটি কৃষক তার পরিবারের জন্য সবচেয়ে বড় অর্থনীতিবিদ। তাই দেশের অর্থনীতি পুনর্নির্মাণে কৃষকের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ও বন্যা পরবর্তী ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি এবং কৃষি প্রযুক্তিবিষয়ক সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো আবশ্যক।

এবারের বন্যায় ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রায় ৭৪টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা জানি আউশ, আমন এবং বোরো ধানের তিনটি মৌসুম রয়েছে। আউশ মৌসুমে ধান বপন এবং রোপণ এই দুভাবেই চাষ করা যায়। রোপণের উপযুক্ত সময় ১০ চৈত্র থেকে ১০ বৈশাখ (২৪ মার্চ-২৩ এপ্রিল) এবং জাতভেদে ধান কাটার সময় ২০ আষাঢ় থেকে ৩০ শ্রাবণ (৪ জুলাই-১৪ আগস্ট)। অন্যদিকে রোপা আউশের চারা জাত ভেদে ১৫ চৈত্র থেকে ১৫ বৈশাখ (২৯ মার্চ-২৮ এপ্রিল) এর মধ্যে বীজতলায় তৈরি করে ২০-২৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয় এবং জাত ভেদে ধান কাটার সময় ১৫ শ্রাবণ থেকে ২০ ভাদ্র (৩০ জুলাই-৪ সেপ্টেম্বর)। সে হিসেবে বোনা এবং রোপা আউশ, এমনকি নাবি জাতের রোপা আউশও বন্যাক্রান্ত এলাকায় নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আউশ নিয়ে আপাতত ভাবার কিছু নেই। এখন আমাদের চলমান ফসল আমন এবং পরবর্তী ফসল বোরো নিয়ে ভাবতে হবে।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে জীবনকাল ১২০ দিনের কম এমন জাতগুলো ১০ শ্রাবণের (২৫ জুলাই) পর বীজ বপন করে ২০-২৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করার পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। ১২০ দিনের কম জীবনকাল এমন জাতগুলো হলো ব্রি ধান-৩৩ (ফলন: ৪.৫ টন/হে.), ব্রি ধান-৫৬ (ফলন: ৪.৫ টন/হে.), ব্রি ধান-৫৭ (ফলন: ৪.০ টন/হে.), ব্রি ধান-৬২ (ফলন: ৪.৫ টন/হে.), ব্রি ধান-৬৬ (ফলন: ৪.৫ টন/হে.), ব্রি ধান-৭১ (ফলন: ৫.৫ টন/হে.), ব্রি ধান-৭৫ (ফলন: ৫.৫ টন/হে.), ব্রি হাইব্রিড ধান-৪ (ফলন: ৬.৫ টন/হে.) এবং ব্রি হাইব্রিড ধান-৬ (ফলন: ৬.৫ টন/হে.)।

এ ছাড়াও দেরিতে রোপণের জন্য নাবি জাতের রোপা আমন ব্রি ধান-২২, ব্রি ধান-২৩, ব্রি ধান-৩৮, ব্রি ধান-৪৬, বিনাশাইল, নাইজারশাইল রোপণের উপযোগী। নাবি জাতের আমন রোপণের ক্ষেত্রে ঘন করে রোপণ করতে হবে এবং প্রতি গোছায় চারার সংখ্যা বেশি দিতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে বোরো ধানের আবাদ যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

কিন্তু যেসব জমিতে নাবি আমন ধান চাষ করা সম্ভব হবে না এবং ঊফশি বোরো চাষ করা হবে সেসব জমিতে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য স্বল্প-মেয়াদি বারি সরিষা-১, বারি সরিষা-২, বারি সরিষা-৩, বারি সরিষা-১৪ এবং বিনা সরিষা-৯ চাষ করা যেতে পারে। অথবা বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বিনা চাষে আবাদযোগ্য মাষকলাই এবং খেসারি বপন করা যায়। কারণ কম খরচে এবং কম বিনিয়োগে এটি লাভজনক।

যেসব জমি থেকে পানি নামতে দেরি হবে এবং বাড়ির সংলগ্ন জমিতে ভাসমান বেডে বিভিন্ন শাক, সবজি, এমনকি শিম চাষ করা যায় অথবা বিভিন্ন সবজির চারা তৈরি করা যেতে পারে। পানি সরে গেলে বেড মাটির যথাস্থানে বসিয়ে মাছা তৈরি করে দিতে হবে। যেসব জমি আলু চাষের উপযোগী সেসব জমিতে পানি সরে গেলে মালচিং করে আলু চাষ করা যেতে পারে।

বন্যাত্তোর গাছে মাজরা, বাদামি ও সাদা-পিঠ গাছ ফড়িং, পাতা মোড়ানো এবং পামরি পোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার জন্য পোকা বিশেষে হাত জাল, পার্চিং এবং প্রয়োজন হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

যেসব এলাকায় বন্যায় উঁচু জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে বীজতলা করা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে ভাসমান অথবা দাপোগ বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করা যেতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলে আগাম শীত আসার কারণে ১৫ সেপ্টেম্বর এবং মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে ২০ সেপ্টেম্বরের পর আমন ধান রোপণ করা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে আগাম রবি ফসলের আবাদ করা যেতে পারে।

সর্বোপরি বন্যাক্রান্ত এলাকার জমি পতিত রাখা যাবে না। ধান চাষ করতে হবে এমন নয়। যেখানে যে ফসল চাষ করা সম্ভব তাই চাষ করতে হবে। উৎপাদন খরচ এবং ফলনের প্রতি যেমন লক্ষ্য রাখতে হবে, তেমনি আগামী বোরো যাতে কোনোভাবেই বিলম্বিত না হয় সেটিও বিবেচনায় রাখা। বন্যা পরবর্তীতে চারাগাছ সম্পূর্ণভাবে মাটিতে লেগে যাওয়ার সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ৬০ গ্রাম থিওভিট ও ৬০ গ্রাম পটাশ সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, কৃষি অনুষদ, বাকৃবি

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সময়ের পালাবদলে হারিয়ে যাচ্ছে গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ

সময় যেন নিঃশব্দে বদলে যায়। একসময় মৌলভীবাজারের জুড়ীর গ্রামগুলোতে হেমন্ত মানেই...

খাদ্য অনিয়মে ‘দয়াময়ী মিষ্টান্ন’কে ১ লাখ টাকা জরিমানা

চট্টগ্রাম নগরের নন্দনকানন এলাকার মিষ্টির দোকান ‘দয়াময়ী মিষ্টান্ন’...

১০ ডিসেম্বর হতে পারে তফসিল ঘোষণা

আগামী ১০ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণাকে সামনে র...

শ্রীমঙ্গলে নাচ-গানে গারো সম্প্রদায়ের ওয়ানগালা উৎসব উৎযাপিত

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গারো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব “...

ফটিকছড়িতে চিরকুট লিখে প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা!

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম আজিমপুর গ্রামের সেকান...

বে–টার্মিনালে বিনিয়োগের আগে প্রকল্প যাচাইয়ে ব্যস্ত বিশ্বব্যাংক টিম

চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ ‘বে–টার্মি...

চট্টগ্রাম সিটিতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন—৩৬ প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়ন চলছে

চট্টগ্রাম সিটির সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্পের...

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সুমন–এ্যানির ঘরে পাঁচ সন্তানের আগমন

চট্টগ্রাম শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সা...

১০ ডিসেম্বর হতে পারে তফসিল ঘোষণা

আগামী ১০ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণাকে সামনে র...

খাদ্য অনিয়মে ‘দয়াময়ী মিষ্টান্ন’কে ১ লাখ টাকা জরিমানা

চট্টগ্রাম নগরের নন্দনকানন এলাকার মিষ্টির দোকান ‘দয়াময়ী মিষ্টান্ন’...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা