ধর্ষণ মামলার বাদী সেই নারীকে বিয়ে করেছেন গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল। গত বৃহস্পতিবার কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে তাঁদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এ সময় নোবেল ও সেই নারী এবং দুজনের পক্ষ থেকে চারজন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেলকে বিয়ে করার অনুমতি দেন আদালত। নোবেলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার গত বুধবার এ আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলা মনি।
নোবেলের আইনজীবী জসীম উদ্দিন ও এসআই ইলা মনি জানান, ধর্ষণ মামলার বাদী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আসামি নোবেলের পক্ষ থেকে আদালতে লিখিতভাবে বিয়ে করার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। বাদী ও আসামি উভয় পক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে বিয়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
কারা ফটকে অনুষ্ঠিত গায়ক নোবেল ও সেই নারীর বিয়েতে স্বাক্ষী হিসেবে দুজনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ঘনিষ্টজেরা হলেন নাজমা হোসেন, সাবিহা তারিন, খলিলুর রহমান ও সাদেক উল্লাহ ভুইয়া।
ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত ২০ মে থেকে কারাগারে আছেন গায়ক নোবেল। সেদিন নোবেলের আইনজীবী আদালতের কাছে দাবি করেছিলেন, যে নারী ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন, তিনি তাঁর স্ত্রী। তিনি ধর্ষণ করেননি। ওই নারীকে স্ত্রী হিসেবে দাবি করলেও আদালতে কাবিননামা জমা দিতে পারেননি নোবেলের আইনজীবী জসীম উদ্দিন। ওই নারীকে সাত মাস ধরে একটি বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয় নোবেলের বিরুদ্ধে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ হোসেন বলেছিলেন, ‘কণ্ঠশিল্পী নোবেল ওই নারীকে বিয়ে করেছেন, এমন কোনো কাগজপত্র আমাদের কাছে জমা দিতে পারেননি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ীর কোনো একটি বাসায় ওই নারীর সঙ্গে নোবেলের মৌখিকভাবে বিয়ে পড়ানোর একটি ঘটনা রয়েছে; কিন্তু বিয়ের কোনো রেজিস্ট্রি কাবিননামা নেই।’
ডেমরা থানার পুলিশ আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছিল, সাত বছর আগে (২০১৮) ফেসবুকে নোবেলের সঙ্গে ওই নারীর পরিচয় হয়। তিনি মোহাম্মদপুরের একটি ভাড়া বাসায় থেকে রাজধানীর একটি কলেজে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে পড়তেন। তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা হতো। গত বছরের ১২ নভেম্বর ডেমরায় নোবেলের স্টুডিও দেখানোর জন্য ওই নারীকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত আটটার দিকে তিনি (নারী) বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেন নোবেল। পরে মুঠোফোনটি ভেঙে ফেলেন। এরপর তাঁকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের সেই ভিডিও ধারণ করেন নোবেল। পরে ভয় দেখিয়ে সাত মাস ধরে ওই বাসায় তাঁকে আটকে রাখা হয়।
পুলিশ আদালতকে আরো জানিয়েছিল, ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাঁর (নারী) মা-বাবা ঢাকায় আসেন। পরে ওই নারীকে নোবেলের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী।
জি বাংলার রিয়েলিটি শো সারেগামাপায় অংশ নিয়ে আলোচনায় আসেন গোপালগঞ্জের ছেলে নোবেল। অনুষ্ঠান চলাকালীন অবস্থায় বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনায় পড়েন তিনি। এরপর একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণেও সমালোচনা হয় নোবেলকে ঘিরে। এর মধ্যে চলচ্চিত্রে গান গেয়ে আলোচনায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হলেও সমালোচনায় সব ম্লান হয়ে যায়।
আমারবাঙলা/জিজি