ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর ভক্ত বাংলাদেশি গায়িকা আঁখি আলমগীর। ভারতীয় এই নায়ক অভিনীত প্রায় সব ছবি দেখা এই গায়িকার। ছোটবেলা থেকেই এই নায়কের প্রতি তাঁর ভালো লাগা। ভালো লাগার এই তালিকায় আছেন হলিউডের টম ক্রুজও। তবে টম ক্রুজের সঙ্গে দেখা না হলেও হয়েছিল মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে। সেই দেখায় একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন, গল্পও করেছেন। মিঠুন এই গায়িকার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, সিনেমায় অভিনয় করতে আগ্রহী কি না?
চিত্রনায়ক বাবা আলমগীরের কারণে অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়াটা খুবই সহজ ছিল। তবে বাবা চেয়েছিলেন বড় মেয়ে আঁখি আলমগীর চিকিৎসক হোক। শিশু বয়সে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অর্জন করে নিয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর পুরস্কার। তবে রক্তে অভিনয় থাকলেও সে পথে যাননি আঁখি আলমগীর। বেছে নেন সংগীতের জীবন। গানের জন্যও অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। অভিনেত্রী না হয়ে সংগীতশিল্পীর জীবন বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে আঁখির বক্তব্য ছিল এ রকম, ‘অভিনয় আমার রক্তে আছে। গানও আমার রক্তে আছে। আমার বাবা তো গানও গাইতেন। দুইটাই আমার ভালোবাসার জায়গা। আমি যদি দুইটা একত্রে নিতাম হয়তো কোনোটার প্রতি শতভাগ বিচার হতো না। আমার জন্য অভিনেত্রী হওয়াটা সহজ ছিল। গায়িকা হয়ে ওঠাটা অনেক বেশি কঠিন ছিল। আমি কঠিনটা কেন বেছে নিয়েছি জানি না। হয়তো আমার ভালোবাসাটা গানের জন্য বেশি ছিল।’
ছোটবেলা থেকে সিনেমাও দেখতেন। সিনেমা দেখতে দেখতে মিঠুন চক্রবর্তী ও টম ক্রুজ পছন্দের নায়ক হয়ে ওঠে। আজও সময় পেলে এই দুই তারকার সিনেমা দেখেন। মিঠুনের সঙ্গে একাধিক স্থিরচিত্র পোস্ট করে কিছু অনুভূতিও ব্যক্ত করেছেন এই গায়িকা। নিজের ফেসবুকে আঁখি লিখেছেন, ‘ছোটবেলায় আমার খুবই পছন্দের নায়ক ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী, টম ক্রুজ। এখনো। তবে দুজনকে দুই রকমের পছন্দ। গত মঙ্গলবার ছিল মিঠুন চক্রবর্তীর জন্মদিন, তাই ভাবলাম ছবিগুলো শেয়ার করি।’
অভিনয় ও গানের হিসাবে চার দশক ধরে বিনোদন অঙ্গনে কাজ করছেন আঁখি আলমগীর। ছোটবেলায় একবার পছন্দের নায়ক মিঠুনের সঙ্গে দেখা হতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হয়নি। সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে আঁখি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘উনি (মিঠুন চক্রবর্তী) বাংলাদেশে যখন আসেন, তখন আমি বেশ ছোট। ঢাকা ক্লাবে মিঠুনের সম্মানে নৈশভোজের পার্টিতে আব্বু আমাদের নিয়ে যাবে বলল। আমরা সবাই রেডি। আব্বুও রেডি। কিন্তু হঠাৎ আব্বুর কাছে একজন সিনেমার পরিচালক এসে বললেন, পরের দিনের শুটিংয়ের কিছু পরিবর্তন আছে তাই এখনই স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসতে হবে। আব্বুর কাছে অবশ্যই সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমাদের আর মিঠুন দর্শন হয়নি। তবে সেদিন কিন্তু আমার ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। গোপনে কান্নাও করেছিলাম।’
ছোটবেলায় দেখা না হলেও আঁখি যখন ব্যস্ত সংগীতশিল্পী, তখন মিঠুনের সঙ্গে দেখা হয়। তবে দেশের কোনো অনুষ্ঠানে নয়, দেশের বাইরে। লন্ডনের সেই অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে মিঠুন ও আঁখি আলমগীর পারফর্ম করেন। ২০০৬ সালের সেই অনুষ্ঠানে সাবিনা ইয়াসমীন, সামিনা চৌধুরী, আসিফ আকবর, চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী মান্না, মৌসুমীসহ আরো অনেকেই ছিলেন বলে জানান আঁখি আলমগীর।
আঁখি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘২০০৬ সালের লন্ডনে একই মঞ্চে আমরা পারফর্ম করি। গ্রিন রুমে গল্প শুনলাম ওনার, সবার সঙ্গে তাঁর ছবি আমিই তুলে দিলাম। কারণ, আমি সব সময় ভালো ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে যেতাম। আমি যে তাঁর কত বড় ভক্ত এবং তাঁর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া সব সিনেমা, অখ্যাত কিন্তু দুর্দান্ত গল্প এবং অভিনয়ের সব সিনেমা আমার দেখা, নিউমার্কেট থেকে তাঁর পোস্টার কিনে ঘরে টাঙিয়ে রাখা-এসবের কিছুই সেদিন বলিনি। ওগুলো কম হয় আমাকে দিয়ে। কুশল বিনিময় আর আব্বুকে শুভেচ্ছা জানাতে বললেন। আমি সিনেমায় অভিনয় করতে আগ্রহী কি না, কেন করি না, তা জানতে চাইলেন। দায়সারা উত্তর দিয়ে কোনায় বসে ছিলাম। তিনি আমাকে চা বানিয়ে খাওয়ালেন গ্রিন রুমে। প্রিয় অভিনেতার সঙ্গে একই স্টেজে পারফর্ম করছি, সেই আনন্দ আমাকে আপ্লুত করেছিল। ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিগুলো আজ সেই মুহূর্তের চেয়েও দামি মনে হচ্ছে। দুর্দান্ত একটা শো হয়েছিল। মধুর সব স্মৃতি।’
আমারবাঙলা/জিজি