সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার কোটি কোটি টাকা লোপাট ও মানিলন্ডারিং সহ নানা অপকর্মের সহযোগীদের বিরুদ্ধে এখনো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থেকে ‘ফ্রি স্টাইলে’ ঘুষ, দুর্নীতি, বদলী পদায়নের নামে মোটা অংকের বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিএনসিসিকে এই সিন্ডিকেটটি আবারো ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে।
সূত্র মতে, সরকার এবং ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ এই সংস্থায় নিম্ম বেতনের মাস্টার রোল কর্মচারীদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ও ‘মৃত পিয়ন ও ক্লিনারদের’ অসহায় পরিবার থেকে পোষ্য কোটায় দুই শতাধিক লোককে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আর এই সুযোগে গত ফেব্রুয়ারিতে ডিএনসিসির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসান, সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন, উপ প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মফিজুর রহমান ভূইয়া, শ্রমিক দলের নেতা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শক ফরহাদ হোসেন বুলেট, ক্লিনারদের বর্তমান সভাপতি জিয়াউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রাজু মিয়াসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র দুই শতাধিক চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে গড়ে দুই লাখ-তিন লাখ টাকা করে হাতিয়েছেন। এই চক্রটি দৈনিক ৫৭৫ টাকা মজুরিতে কাজ করলে মজুরি, না করলে নেই শর্তের ভিত্তিতে চাকরি দিয়ে নিরীহ কর্মচারী পরিবারের পকেট কেটে চার-পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নির্ভয় দিয়ে চাকরি প্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসা করলে এর সত্যতা মিলবে। এ ছাড়া চাকরি দেওয়ার নামে ঘুষ-বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে ডিএসসিসির নগর ভবন সহ আঞ্চলিক কার্যালয়ে সাধারণ কর্মচারীদের মাঝে নানা গুঞ্জন চলছে। কারণ কয়েকজন কর্মকর্তা ও নামধারী কর্মচারী এবং ক্লিনার নেতারা ইতোমধ্যে কয়েকটি কোটি টাকা পকেটঁস্থ করেছেন।
আর এসব সহ আরো বেশকিছু গুরুতর অভিযোগ উল্লেখ করে গত ১২ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন। একই সঙ্গে ডিএনসিসির ফ্যাসিস্ট ও দুর্নীতিবাজ সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম কারাগারে থাকলেও তার রেখে যাওয়া কতিপয় চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও কোটি কোটি টাকা লোপাটকারী চক্রটি এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছে। তারা এখনো জাতীয়তাবাদী কর্মচারী নেতাদের ওপর ভর করে নিজেরা বিএনপি সাজার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। আর এই সুযোগে গত ৫ আগস্টের পর থেকে ডিএনসিসিতে আবারো ঘুষ, দুর্নীতি মাথাছাড়া দিয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে এই চক্রের সদস্যরা ইতোমধ্যে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তারা নামে-বেনামে এবং নিকট আত্মীয় স্বজনদের নামে অবৈধ সম্পদ করেছেন। জরুরি ভিত্তিতে ডিএনসিসির প্রধান কার্যালয় সহ তাদের বাসা বাড়িতে অভিযান চালালে আরো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও দুর্নীতিবাজ তৎকালীন মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্দেশে মো. মফিজুর রহমান ভূইয়াকে সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এবং উপ-প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রদান করা হয়। এ ছাড়া তাকে প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী কমিটির সদস্য সচিব করা। অথচ ডিএনসিসির অর্গানোগ্রামে পরিস্কার বলা আছে, সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও উপ প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি ও দায়িত্ব প্রাপ্তদের ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বাধ্যতামূলক। কিন্তু মফিজুর রহমান ভূইয়া শুধুমাত্র এইচএসসি পাশ। অভিবক্ত সিটি করপোরেশনে তার অতীতের কর্মকাণ্ড নিয়েও নানা বির্তক আছে। ওইসব বিষয়সহ দুদকে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের নিয়োগকৃত ডিএনসিসির আরেক দুর্নীতিবাজ সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন। তিনি প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার দপ্তরের পাশাপাশি আরো বেশ কয়টি দায়িত্ব ভাগিয়ে নিয়েছেন। এরমধ্যে সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা অঞ্চল-৩ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব), পয়ঃবর্জ্য সংক্রান্ত একটি বিদেশি প্রকল্পের সদস্য সচিব এবং প্রাইমারী বর্জ্য সংগ্রহকারী কমিটির সদস্য।
আরাফাত হোসেন মেয়র সেলের সহযোগিতায় অস্বাভাবিক ক্ষমতাবান হয়ে উঠেন। একই সঙ্গে পরিবহন ম্যানেজারের দায়িত্বও হাতিয়ে নেন। তবে তিনি দ্রুত পরিবহন বিভাগে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরিবহন ম্যানেজার থাকা অবস্থায় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার উদ্যোগ নিলে, মেয়রের নির্দেশে তিনি রক্ষা পান এবং তাকে পুনরায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্বপদে ফেরত আনা হয়। এখানো তিনি উক্ত পদে বহাল থেকে নানা অনিয়ম ও ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে ইতোমধ্যে শত কোটি টাকা মালিক হয়েছেন; যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। মেয়র আতিকের সহযোগিতায় নিয়োগকৃত এই কর্মকর্তা বর্তমানে বিএনপি সমর্থিত শ্রমিক দলের কতিপয় নেতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিএনপি সাজার চেষ্টায় আছেন।
আরো অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আগুনে পোড়া কৃষি মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের নামে ডিএনসিসির ফান্ড থেকে কয়েক কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে সাহায্য পাঠানো হয়। কিন্তু ডিএনসিসির ফান্ড থেকে ব্যবসায়ী নামে বরাদ্দ করা টাকার সিংহভাগই আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে তড়িগড়ি করে পোড়া মার্কেট সংস্কার ও মেরামতের পর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২৫-৩০ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। তবে কত টাকা ডিএনসিসির ফান্ডে জমা হয়েছে তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। এই মার্কেটে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িতরা হলেন, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, ডিএনসিসি সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, সাবেক সচিব মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক, সাবেক মেয়র আতিকের ভাগিনা মো. তৌফিক, ভাতিজা মো. ইমরান, এপিএস (মেয়র আতিক) মো. মোর্শেদ হোসেন এবং অঞ্চল-৫-এর সাবেক আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোতাকাব্বির হোসেনসহ আরো অনেকে। তাদের নাম রয়েছে অভিযোগপত্রে।
ডিএনসিসির সাধারণ কর্মচারীরা জানান, আলোচিতরা সবাই ইতোমধ্যে চাকরির সুবাধে কোটিপতি হয়েছেন। সঠিক অনুসন্ধান ও তদন্ত হলে আরো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মফিজুর রহমান ভূইয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে আরেক অভিযুক্ত আরাফাত রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমার কোনো মতামত নেই। এ বিষয়ে ডিএনসিসির পিআরও দপ্তরে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, চাকরি দেওয়ার কমিটি বলতে পারবে বিষয়টির বিস্তারিত।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            