নাগরিক সেবা পেতে চরম দুর্ভোগে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দারা। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরই ঢাকার দুই সিটির প্রায় সব ওয়ার্ড কার্যালয়ে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর সরকার সিটি করপোরেশন কাউন্সিলরদের অপসারণ করে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদ, উত্তরাধিকার সনদ এবং বয়স্ক ও বিধবা ভাতার প্রত্যয়নপত্রের জন্য প্রতিদিনই চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর না থাকায় ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাউন্সিলরের নাগরিক সেবার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এখন একজন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৯টি সাধারণ ও তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ তো রয়েছেই।
ওয়ার্ড কার্যালয়ে এসে কেউ সনদ চাইলে সেটি আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে স্বাক্ষর হয়ে ওয়ার্ড কার্যালয়ে ওই সনদ ফিরে যেতে কয়েক দিন লেগে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে জন্ম-মৃত্যু ও নাগরিকত্ব সনদ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ সেবা প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়ার্ডের লোকজনকে চেনেন না। এজন্য একটি জন্মসনদ নিতে ১০ দিনেরও বেশি লেগে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ঠিকমতো সেবা না পাওয়ায় ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে সেবাপ্রার্থীদের বাগ্বিতণ্ডার ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি সেবাপ্রার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ডিএনসিসির ২ নম্বর ওয়ার্ডের (পল্লবী) সচিবকে মারধর করেন। ওই ঘটনার পর ওয়ার্ড সচিবের দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানান। তবে সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা মতে, নানা কারণে নাগরিকসেবা দিতে বিলম্ব হচ্ছে। বড় কারণ হলো, ওয়ার্ডের নাগরিকদের তথ্য যাচাই। কাজটি করতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। লোকবলেরও সংকট রয়েছে। যাচাইকারী হিসেবে আগে কাউন্সিলররা স্বাক্ষর করতেন, এখন তা আঞ্চলিক নির্বাহীদের করতে হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই স্কুল-কলেজের শিক্ষক বা অন্য প্রতিষ্ঠানের গেজেটেড কর্মকর্তাদের দেয়া যেত; কিন্তু তা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের করতে হচ্ছে। কিন্তু নাগরিকদের যেসব সনদ দিতে হয়, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা বড় সমস্যা।
কারণ ব্যক্তিগতভাবে ওই কর্মকর্তারা অনেককে চেনেন না। উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশান সনদ তো খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। হয়তো ভাইবোন পাঁচজন; কিন্তু বলল তিনজন। না চিনলে কিভাবে যাচাই করে সনদ দেয়া সম্ভব। তবে কর্মকর্তারা সচিবের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করছে। তাতে কতটা স্বচ্ছ হচ্ছে সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।
তাছাড়া এমনও হয়েছে, একজন কর্মকর্তাকে ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বের পাশাপাশি ১২ জন কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাছাড়া আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিজের কাজ তো আছেই। সব মিলিয়ে একজনকে ৩০ জনের কাজ একা করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সেবা প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির অঞ্চল-৪-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আতাহার মিয়া জানান, ডিএসসিসি অঞ্চল-৪ এর ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাতটিতে সচিব নেই। অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। ফলে সব সেবা চালু রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। কাউন্সিলররা স্থানীয় হওয়ায় সবাইকে চিনতেন, সহজেই নাগরিক সনদ, মৃত্যু সনদ, উত্তরাধিকার সনদ দিতে পারতেন। আমরা সবাইকে চিনি না। তাই এসব সনদ দিতে সময় লাগছে।’ অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম জানান, কাউন্সিলর না থাকায় যেসব সমস্যা হচ্ছিল, সেগুলো সরকারকে জানানো হয়েছে। তারপরই আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের সেবা প্রদানের দায়িত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে যেভাবে চলছে, সেভাবে চলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাজের চাপ নিতে হবে। এলাকার লোকদের চিনতে হবে।
.
আমার বাঙলা/এসএইচ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            