সংগৃহীত
সারাদেশ

রামগড় চা বাগান পাতি সরালির শত বছরের অভয়াশ্রম

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

সীমান্তবর্তী ফেনী নদী ঘেঁষে রামগড় চা বাগানের অবস্থান। খাগড়াছড়ির প্রবেশদ্বার এ চা বাগান। প্রায় এক হাজার ৪০০ একর আয়তনের বাগানের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ৫০ একরের একটি বিশাল জলাশয়। সবুজ চা বাগানের মাঝে সারি-সারি নারিকেল গাছ ঘেরা এ বিশাল জলাশয়টি শত বছরের পুরানো। এটি পাতি সরালি হাঁসসহ বিভিন্ন অতিথি পাখির অভয়াশ্রম। তবে সরালি-ই এ জলাশয়ের শত বছরের বাসিন্দা ও চা পরিবারের সদস্য। নিরাপত্তা ও খাদ্যের অভাব না থাকায় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করে এরা।

পাতি সরালি (Dendrocygna javanica) ডেনড্রোসিগনিডি গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত এক প্রজাতির হাঁস। ইংরেজি নাম Lesser Whistling Duck, এরা ভারতীয় উপমহাদেশের স্থানীয় পাখি। এই পাখির বাদামি বর্ণের লেজ আছে, যা সাধারণত লুকানো থাকে। যখন এরা সোজা হয়ে ওড়ে, তখন তাদের দেহের বাকি অংশের তুলনায় মাথা কিছুটা নিচু হয়ে থাকে। এ ছাড়া এই পাখি খুবই ধীরে ওড়ে কিন্তু পাখা খুব দ্রুত নাড়ায়।

পাতি সরালি নিশাচর পাখি। এরা দিনের বেলায় বিশ্রাম নেয়। পাতি সরালি সবসময় একটি বড় পরিবারের সঙ্গে থাকে। এদের প্রধান খাবার হল পানিতে থাকা গুল্ম, ধানক্ষেতের ধান, ছোট মাছ, ব্যাঙ, অমেরুদণ্ডী প্রাণী যেমন- শামুক, কেঁচো ইত্যাদি। পাতি সরালির প্রজননকাল সাধারণত বর্ষাকাল। এদের প্রজননকাল এলাকার খাবারের প্রাচুর্যের ওপর নির্ভরশীল। এরা ক্ষুদ্র ডাল ও ঘাস দিয়ে গাছের গোঁড়ায় বাসা বানায়। স্ত্রী পাখি একসঙ্গে সাত থেকে ১২টি সাদা ডিম পাড়ে। ডিমগুলোতে পিতামাতা উভয়ে তা দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ২২ থেকে ২৪ দিন সময় লাগে। ছোট সরালি, সরাল, শরাল, গেছো/সিঙ্গেল হাঁস নামেও পরিচিত। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল হয়ে চীন ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত এদের আবাস এলাকা বিস্তৃত। দেহের দৈর্ঘ্য ৩৮ থেকে ৪২ সেন্টিমিটার ও ওজন ৪৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম। এরা শিস দিয়ে ‘হুই-হুয়ি-হুই-হুয়ি’ স্বরে ডাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চা বাগানের জলাশয়ের বাসিন্দা পাতি সরালির সঙ্গে লেনজা হাঁস, পিং হাস, বালি হাঁস, বড় সরালী, কাইম, মদনা, গঙ্গা কবুতর, কালাকোড়া ও পিয়ারির পাশাপাশি নাম না জানা অনেক অতিথি পাখির বিচরণ করছে। এ ছাড়া শীতে নানা প্রজাতির অতিথি পাখিও এসে জড়ো হয় এ জলাশয়ে। শীতের সকালে সোনালী রোদে পাতি সরালিসহ অন্যান্য পাখিদের সঙ্গে বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙ্গা আর গাঙচিলের মতো দেশীয় পাখি একাকার হয়ে যায়। সারা বছরই মুখরিত থাকে অসংখ্য পাখ-পাখালির কলকাকলিতে। কখনো জলকেলি, কখনো খুনসুটিতে কিংবা গলা ছেড়ে সুর তুলে ঝাঁকে ঝাঁকে আকাশে উড়ছে এসব পাখি। এদের দলবদ্ধ বিচরণ সহজেই মন কেড়ে নেয় যে কারো। সবুজ চা বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য যেন আরো বাড়িয়ে দেয় এসব পাখি।

রামগড় চা বাগানের কর্মচারী রাখাল চন্দ্র বনিক জানান, প্রায় আশি বছর আগে এ চা বাগানেই তার জন্ম। জন্মের পর বুঝতে শিখেই জলাশয়ে ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখির বসবাস দেখে আসছেন। ১৯১৬ সালে বাগানটির সৃষ্টি। জলাশয়টি তারও আগে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি। বিশাল এ ডোবা দেশিয়জাতের নানা মাছসহ জলজপ্রাণি ও জলজ উদ্ভিদে পরিপূর্ণ। এ কারণেই বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এ জলাভূমিটি বেছে নেয়।

তিনি আরো বলেন, বাগানের শ্রমিক-কর্মচারী কেউ কখনো পাখিগুলো শিকার কিংবা বিরক্ত করে না। ফলে চা পরিবারের সদস্য হিসেবেই পাখিগুলো সারা বছর বসবাস করে।

বাগানের ব্যবস্থাপক শওকত বাহার সোহাগ বলেন, ‘বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদের খান পাখিগুলোর ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। পাখির আবাসস্থল জলাশয়টিতে সার্বক্ষণিক চারজন পাহারাদার নিয়োজিত থাকেন। কেউ যেন পাখি শিকার বা কোনো রকম বিরক্ত করতে না পারে এজন্য কঠোর নির্দেশ তার। তাই বাগানের সবাই এ ব্যাপারে খুবই সজাগ ও সতর্ক।’

তিনি আরো বলেন, ‘শুধু জলাশয় নয়, বাগানের গাছে-গাছেও পাখিদের বসবাসের জন্য বাসা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ফলে পুরো বাগানই পাখিদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।’

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

এমিতে ‘অ্যাডোলেন্স’-এর জয়জয়াকার

বাংলাদেশ সময় সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘোষণা করা হলো ৭৭তম এমি অ্যাওয়ার্ডস।...

লন্ডনে বাংলাদেশি মাকে ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য, ছেলের ওপর হামলা

লন্ডনে হামলার শিকার হয়েছেন এক বাংলাদেশি তরুণ। তরুণের ভাষ্য, তাঁর হিজাব পরা মা...

রাকসু নির্বাচনে কার কী প্যানেল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসু নির্বাচনের এ পর্যন্ত নয়টি প্...

হাত না মেলানো : ভারতের ব্যাখ্যা, পাকিস্তানের প্রতিবাদ

আগা সালমান-শাহিন আফ্রিদিরা হয়তো সেটা ভেবেই মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন...

বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে তিস্তার পানি

টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি আব...

গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল: জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন

গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের একটি স্...

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন নির্দেশনা

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা আরও সুশৃঙ্খল করতে সরকারি হাসপাতালগুলোকে নতুন নির্দেশনা...

ক্রীড়া পরিদপ্তরে দুদকের অভিযান

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ক্রীড়া পরিদপ্তরের বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচি প...

এক লাফে ট্যারিফ বাড়ল গড়ে ৪০ শতাংশ

বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তি উপেক্ষা করেই নতুন ট্যারিফের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়...

বগুড়ায় মা ও ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা

বগুড়ার শিবগঞ্জে এক নারী ও তার কলেজপড়ুয়া ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা