দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক জিতে ইতিহাস গড়েছে ১৩ বছর বয়সী চৈতী রানী দেব। তার এই সাফল্যে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার গ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা।
গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) এফ-৪০ জ্যাভলিন থ্রো ইভেন্টে ৯.৪৫ মিটার দূরত্বে জ্যাভলিন ছুড়ে স্বর্ণপদক জয় করেন চৈতী। এটি বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশ (এনপিসি)-এর ইতিহাসে অন্যতম সেরা সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চৈতীর এই বিজয় বাংলাদেশের প্যারালিম্পিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তিনি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের ভূনবীর গ্রামের বাসিন্দা সত্য দেবের কন্যা। চৈতী ভূনবীর দশরথ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার উচ্চতা তিন ফুট সাত ইঞ্চি।
গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে নিজ বাড়িতে পৌঁছালে চৈতী রানী দেবকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। পরদিন তার বিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে দেশের গর্ব চৈতী রানী দেবকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্স (এসএইচআই), বাংলাদেশের ক্রীড়া প্রশিক্ষক দেব প্রসাদ শীল, বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
চৈতীর বাবা সত্য দেব বলেন,
“আমার প্রতিবন্ধী মেয়ে আজ দেশের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় লড়াই করে পদক এনে দিয়েছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমার মেয়ের জন্য সবাই দোয়া ও আশীর্বাদ করবেন।”
চৈতীর বিদ্যালয় ভূনবীর দশরথ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ঝলক চক্রবর্তী বলেন,
“দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ২০২৫ এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে আমাদের বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী চৈতী রানী দেব অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে দুটি স্বর্ণপদক অর্জন করেছে। তার এই সাফল্য বাংলাদেশের প্যারালিম্পিক অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
চৈতী রানী দেব বলেন,
“আমার এই অর্জন দেশবাসী ও এলাকাবাসীকে উৎসর্গ করছি। সামনে আমি দেশের পক্ষে খেলতে জাপান যাব। সবাই দোয়া করবেন, যেন আবারও দেশের পতাকাকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে পারি।”
চৈতীর প্রশিক্ষক বাগেরহাটের বাসিন্দা দেব প্রসাদ শীল বলেন,
“প্রথম পরিচয়ের পরই বুঝেছিলাম চৈতীর মধ্যে প্রবল সাফল্যের ক্ষুধা রয়েছে। সে অন্যদের মতো নয়, বরং আরও বেশি শক্ত মানসিকতার। শুরুতে ভেবেছিলাম কীভাবে তাকে প্রশিক্ষণ দেব, কিন্তু পরে দেখেছি প্র্যাকটিসে তাকে কেউ থামাতে পারে না। সে একটানা ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর্যন্ত জগিং করতে পারে। মাত্র কয়েক মাসের প্রশিক্ষণেই সে জাতীয় পর্যায়ে দৌড় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর দুবাইয়ে এশিয়ার অসংখ্য প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে দুটি স্বর্ণপদক জিতে দেশকে গৌরবান্বিত করেছে। আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত।”
আমারবাঙলা/এসএ