সারাদেশ

মুন্সীগঞ্জে আলুর মজুদ বেশি, তবুও সিন্ডিকেটে দাম চড়া 

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মুন্সীগঞ্জ জেলা। প্রতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ আলু উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে এ জেলার। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলুর চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রাখে এ জেলার আলু চাষিরা। অন্যান্য বছর বর্ষা মৌসুমে আলুর দাম ক্রেতাদের হাতের নাগালে থাকলে এ বছর লাগামহীন ভাবে বাড়ছে। খুচরা বাজারে কেজিতে ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতা, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিটষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিমাগারে চাহিদার তুলনায় আলুর মজুদ এখনও অনেক বেশি। এর পরেও ব্যবসায়ীরা আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। দাম বাড়িয়ে নিজেরাই হিমাগারে রাখা আলুর দলিল একজন অপর জনের সাথে বেচা-বিক্রি করছেন। হাতবদলে প্রতিবার বাড়ানো হচ্ছে দাম। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা ও পাইকারী বাজারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ভোক্তাদের মোট আলুর চাহিদা রয়েছে ৯৫ হাজার ৮৮ মেট্রিকটন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৪৬৩ মেট্রিকটন। জেলার হিমাগার গুলোতে এখনও পর্যন্ত মজুদ রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন আলু।

জাতীয় পর্যায়ে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। দেশে আলুর চাহিদা ৮৯ লাখ ৯২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৯১ লাখ ৯ হাজার মেট্রিকটন। সে হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকে অন্তত ২০ লাখ টনের বেশি আলু।

জেলা কৃষি বিপনন কর্মকর্তা এবি এম মিজানুল হক বলেন,গত বছর আলু উৎপাদন সামান্য কম হয়েছে। তবে মুন্সীগঞ্জে আলুর কোনো সংকট নেই। এখনও যে পরিমাণ আলু হিমাগারে মজুদ আছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। জাতীয় পর্যায়েও একই অবস্থা। পুরনো আলু শেষ হওয়ার আগে নতুন আলু চলে আসবে। আলু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করেছে।

মুন্সীগঞ্জ বড় বাজার, দেওভোগ বাজারের সবজির দোকান গুলোতে ঘুরে দেখা যায়, আলুর আকারভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। আলুর দাম বেশি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।

জাকির হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, সব সবজির দাম নাগালের বাহিরে। একমাত্র আলুই ছিল গরীব ও মধ্যবিত্তের প্রধান সবজি। সেটিও সিন্ডিকেট করে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ১৮ - ২০ টাকার আলু ৪৫-৫০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সাধারণ মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে।

বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে হিমাগার গুলোতে আলু সংকট দেখাচ্ছেন আলু ব্যবসায়ীরা। দুই সপ্তাহ আগে যে আলু ৩০-৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি সে আলুই আমাদের দু'দিন ধরে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ রয়েছে আরও এক থেকে দের টাকা। তাই বাধ্য হয়ে ৪৫- ৫০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। হিমাগার পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করা গেলে, খুচরা পর্যায়েও দাম কমে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জে ৬২ টি হিমাগার রয়েছে। যেখানে প্রতি বছর ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬০ মেট্রিকটন আলু রাখা হয়। মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় আলুর পাশাপাশি রংপুর থেকে এনে রাখা হয়।

এসব আলু ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, বরিশাল, বরগুনা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন আরদে বিক্রি হয়। মৌসুমের শুরুতে হিমাগার গুলোতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কৃষকরা আলু রাখলেও জুলাইয়ের আগে কৃষকের এসব আলু কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। এর পরেই আলুর বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

জেলার সরেজমিনে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সানোয়ারা কোল্ড স্টোরেজ, নুর কোল্ডস্টোরেজে, সদর উপজেলার বিক্রমপুর মাল্টিপারপাস ও রিভারভিউ কোল্ড স্টোরেজের দেখা যায়, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অন্য ব্যবসায়ীরা দরদাম করে আলু কিনছেন। শ্রমিকরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে কেউ আলু বাছাই করছেন, কেউ আলু বস্তা ভর্তি করছেন, আলু ওজন করে বিভিন্ন জেলায়, আড়দে পাঠাতে ট্রাক ভর্তি করছেন।

এ সময় হিমাগারে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, বছরের এ সময় হিমাগারে ব্যস্ততা এমনই থাকে। আলুর বিক্রির পরিমান গত বছরের মতই। তবে দাম খুব চওড়া। এক সপ্তাহে কেজিতে দাম বেড়েছে ৮-১০টাকা। কেনো বেড়েছে জানতে চাইলে শ্রমিকরা কোন কথা বলতে চাননি।

আলুর দাম নিয়ে কথা বলতে নারাজ ব্যবসায়ীরাও। বর্তমানে জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে আলুর এমন দাম যৌক্তিক বলে মনে করছেন তারা।

আলু ব্যবসায়ী হাজী সৈয়দ দেওয়ান বলেন, দেশে সব তরকারির দাম আকাশ ছোঁয়া। অন্য তরকারির উৎপাদন নেই। এছাড়াও এ বছর আলু উৎপাদনও কম হয়েছে। তাই চাহিদা বেড়েছে। এতে আলুর দাম এবার সামান্য দাম বেড়েছে। আহামরি বাড়েনি। দাম বাড়ায় সবায় নরে চড়ে বসেছে। গত কয়েক বছর যখন দাম কমছিল, তখন সরকার কেনো কোন ব্যবস্থা নিলো না?

তবে আলুর দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে কথা স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ী শ্যামল সরকার। শ্যামল বলেন, হিমাগার গুলোতে প্রতিদিন যেমন শতশত বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে। তেমনি আলুর মালিকানার দলিল বিক্রি হচ্ছে। এসব দলিল আমাদের মত ব্যবসায়ীরাই একজন, আরেক জনের কাছ থেকে কিনছেন। এমনও হয়েছে দুইমাস আগে ৫০ কেজির বস্তার যে, দলিল ১৩ শ টাকায় বিক্রি করেছিলাম, সেই দলিল ১৪ শ থেকে ১৫ শ টাকায় কিনেছি। গত ১৫ দিন ধরে একই দলিল ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবার হাত বদল হলেই ৫০-১০০ টাকা করে দাম বাড়ছে।

তবে জেলা কৃষি বিপনন কর্মকর্তা এবি এম মিজানুল হক বলেন, আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে ভোক্তা অধিকার সহ তারা কাজ শুরু করেছেন। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানার আওতায় এনেছেন। আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে তারা অভিযান অব্যাহত রাখবে।

এবি/ওশিন

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ফুলকোর্ট সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ফুলকোর্ট সভা...

দেশজুড়ে সমবায়ের জয়যাত্রা, বঞ্চিত সিলেট বিভাগ

দেশজুড়ে যখন সমবায়ের জয়যাত্রা, তখন সিলেট বিভাগ যেন রয়ে গেছে উন্নয়নের মানচিত্রে...

যে কারনে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন,ব্যাখ্যা করলেন অজিত দোভাল

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল বলেছেন, দুর্বল শাসন ব্যবস...

সেন্টমার্টিন খুললেও যাচ্ছে না জাহাজ

দীর্ঘ প্রায় নয় মাসের বিরতির পর অবশেষে আজ শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে দেশের একমা...

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে সরকার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দলগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে সরকার। ইতোমধ...

লাঠিটিলায় বিলুপ্তির পথে হাতি !

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার থেকে: মৌলভীবাজারে জুড়ীতে সিলেট বিভাগের একমাত্...

ফুলকোর্ট সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ফুলকোর্ট সভা...

যে কারনে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন,ব্যাখ্যা করলেন অজিত দোভাল

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল বলেছেন, দুর্বল শাসন ব্যবস...

দেশজুড়ে সমবায়ের জয়যাত্রা, বঞ্চিত সিলেট বিভাগ

দেশজুড়ে যখন সমবায়ের জয়যাত্রা, তখন সিলেট বিভাগ যেন রয়ে গেছে উন্নয়নের মানচিত্রে...

সুদানে ভয়াবহ গণহত্যা চালালো আরএসএফ

সুদানের দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশার শহরে ভয়াবহ গণহত্যার চিত্র উঠে এসেছে। আবুবকর আ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা