অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস শেষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে যেসব ঘটনা ঘটছে; তা বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা সমর্থন করেন না। তারা সন্দেহ করছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এত দিন পর এসব ভাঙচুর-বিশৃঙ্খলার পেছনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দীর্ঘায়িত করার একটি সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত অথবা দেশে ভিন্ন কিছুর পথ তৈরি করার প্রেক্ষাপট তৈরির চেষ্টা থাকতে পারে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সভায় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুরের ঘটনা, সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনসহ চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থায়ী কমিটি আগামী সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সাক্ষাতে বিএনপি দলীয়ভাবে উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরবে। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করবে। এর দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র সফরে আছেন। আগামীকাল রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকাল নাগাদ তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতে তারা থাকতে পারেন।
এ দুটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে শুক্রবার দলটি সারা দেশের নেতা-কর্মীদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হতে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো বিরোধী পক্ষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ম্যুরাল ভাঙচুরসহ কোনো হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতা-কর্মীরা যেন কোনোভাবে জড়িত না হয়। আমাদের প্রত্যাশা, দেশ এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে এই নির্দেশনা দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী অক্ষর অক্ষরে পালন করবে।’
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে বিবৃতি দিয়ে কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় বিএনপি। এর ব্যত্যয় হলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে বলে দলটি সরকারকে সতর্ক করেছে।
বিএনপির নেতাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, বিভিন্ন বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তবে এ ঘটনায় বিএনপি নানা সংশয়-সন্দেহের ইঙ্গিত পেলেও সরকার ও ছাত্রদের সঙ্গে বড় ধরনের তিক্ততায় যেতে চায় না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরো সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাবে।
বিএনপির নেতারা মনে করেন, বুধবার রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ সারা দেশে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, এর পেছনে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার একটি প্রচ্ছন্ন উসকানি ছিল, এটি সত্য। তবে এই উসকানিতে ছাত্রদের জড়াতে বা উত্তেজিত করার পেছন থেকে একটি রাজনৈতিক মহলের ইন্ধন থাকতে পারে। হঠাৎ করে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্য হচ্ছে বিএনপি ও আগামী জাতীয় নির্বাচন। এর উদ্দেশ্য নির্বাচন প্রলম্বিত করা এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার প্রক্রিয়া আরো পেছানো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর যে পরিবর্তন, যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল, নৈরাজ্য করে তা কখনো পূরণ করা যাবে না। যে ঘটনাগুলো ৫ আগস্ট, ৬ আগস্ট ঘটেনি, এখন সে ঘটনা ঘটছে। তখন ঘটলে হয়তো মানুষ এগুলো স্বাভাবিকভাবে নিত, কিন্তু এখন মানুষ বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির সভায় দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে জেলায় ও বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ কর্মসূচি গ্রহণ নিয়েও আলোচনা হয়। এ বিষয়ে পবিত্র রমজানের আগে, আগামী সপ্তাহে কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। মূলত নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে এই কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। বিএনপি আগামী জুলাই-আগস্টে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করে। যদিও দলটির লক্ষ্য চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়।
এদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে বিবৃতি দিয়ে বিএনপি দেশের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বিএনপি বলেছে, এর ব্যত্যয় হলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এই বিবৃতিতে বিএনপি চলমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            