জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১২ মে) ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। আজ দুপুরে ট্রাইব্যুনালে সংবাদ সম্মেলন করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রথমে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আজকে জুলাই আগস্টের গণহত্যার যে প্রধান মাস্টার মাইন্ড শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ মহা পরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর চিফ প্রসিকিউটর সব কিছু দেখে বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিল করবেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুটি কারণ আজকে জানানো হবে। বাকিগুলো পরে জানানো হবে। এর মধ্যে প্রথম অভিযোগ হচ্ছে উসকানিমূলক। আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে নির্দেশ। এ বিষয়ে তার বহু কল রেকর্ড আছে। যেখানে তিনি মার্ডারের নির্দেশ ও অঙ্গহানির নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছেন। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট তিনটি ঘটনার কেন্দ্রিক কিছু অভিযোগ এসেছে, যা পরে জানানো হবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণ-অভ্যুত্থানের সময়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় তিনবার বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ২০ এপ্রিল এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিল প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় দুই মাস বাড়ানো হয়। আগামী ২৪ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল। অবশ্য এর আগেই প্রতিবেদন জমা দিল তদন্ত সংস্থা।
এই মামলা ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অপর মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
আমারবাঙলা/জিজি