ক্লাব ফুটবলে এখন টাকার ছড়াছড়ি—মাঠের খেলোয়াড়েরা যেমন, মালিকপক্ষের ভিআইপি বক্সও তেমন। এর মধ্যে প্রিমিয়ার লিগই অর্থ প্রাচুর্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ঘরোয়া প্রতিযোগিতা।
ইংল্যান্ডের শীর্ষ এই লিগের ব্যয়ক্ষমতা বিশ্বের বাকি সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে বহুগুণ ছাড়িয়ে গেছে। বিপুল অর্থই সেখানে টেনে এনেছে প্রতিভাবান ও তারকা খেলোয়াড়। ফুটবল অর্থনীতি ও বাণিজ্য নিয়ে কাজ করা গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান ক্যাপোলজির তথ্য অনুযায়ী, প্রিমিয়ার লিগের আগামী মৌসুমে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পেতে যাওয়া ১০ ফুটবলার কারা? চলুন দেখা যাক—
১০
কাই হাভার্টজ [আর্সেনাল]
২০২১ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে কাই হাভার্টজের গোলে শিরোপা জিতেছিল চেলসি। তখন থেকেই হাভার্টজের ওপর নজর রাখতে শুরু করে অন্য ক্লাবগুলো। ২০২৩ সালে তাঁকে পেয়ে যায় চেলসির নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আর্সেনাল। লন্ডনের ক্লাবটি তাঁকে ২০২৫–২৬ মৌসুমে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড (২৩৭ কোটি ৭০ লাখ ৪৯ হাজার টাকা) বেতন দেবে। জার্মান এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারই আর্সেনালের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলার। গানারদের সঙ্গে তাঁর চুক্তি ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত।
৯
ওমর মারমুশ [ম্যানচেস্টার সিটি]
এ বছরই শীতকালীন দলবদলে ম্যানচেস্টার সিটিতে নাম লিখিয়েছেন ওমর মারমুশ। মিসরীয় এই ফরোয়ার্ড এরই মধ্যে ঢুকে গেছেন প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া ফুটবলারদের তালিকায়। ২০২৫–২৬ মৌসুমে সিটি তাঁকে পারিশ্রমিক হিসেবে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড (২৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা) দেবে। ক্লাবটির সঙ্গে তাঁর চুক্তি ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত।
৮
জ্যাক গ্রিলিশ [ম্যানচেস্টার সিটি]
অনেক আশা নিয়ে জ্যাক গ্রিলিশকে দলে ভিড়িয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি। কিন্তু প্রত্যাশার সিকিভাগও পূরণ করতে পারেননি। ইংলিশ এই উইঙ্গার এরই মধ্যে পেপ গার্দিওলার একাদশে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন। গার্দিওলা নাকি তাঁকে অন্য কোনো ক্লাব খুঁজে নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন। যদিও সিটির সঙ্গে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তি আছে। গ্রিলিশ যদি এখনই ক্লাব ছাড়তে রাজি না হন, তাহলে আসন্ন মৌসুমে তাঁকে ১ কোটি ৫৬ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড (২৫৪ কোটি ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা) বেতন দিয়ে রাখতে হবে।
৭
ব্রুনো ফার্নান্দেজ [ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড]
প্রিমিয়ার লিগের গত মৌসুম খুবই বাজে কেটেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। রেড ডেভিলরা পয়েন্ট তালিকার ১৫ নম্বরে থেকে মৌসুম শেষ করেছে। তবে অনেকে বলেন, একজন ব্রুনো ফার্নান্দেজ যদি না থাকতেন, তাহলে ইউনাইটেড নিশ্চিত অবনমিত হতো। দলের জন্য অন্তঃপ্রাণ ফার্নান্দেজের ওল্ড ট্রাফোর্ড ছাড়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও তিনি সেখানেই থেকে যাচ্ছেন। ইউনাইটেডকে আবারও নেতৃত্ব দেবেন। আসন্ন মৌসুমে তিনি পাবেন ১ কোটি ৫৬ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড (২৫৪ কোটি ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা) বেতন।
৬
বের্নার্দো সিলভা [ম্যানচেস্টার সিটি]
ম্যানচেস্টার সিটির মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা বের্নার্দো সিলভা। গত মৌসুমের ব্যর্থতা ভুলে এই মৌসুমে সাফল্যের খোঁজে থাকা গার্দিওলার কৌশলগত পরিকল্পনার অপরিহার্য অংশ হতে যাচ্ছেন তিনি। ক্লাব সতীর্থ জ্যাক গ্রিলিশ ও জাতীয় দলের সতীর্থ ব্রুনো ফার্নান্দেজের সমান ১ কোটি ৫৬ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড (২৫৪ কোটি ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা) বেতন পাবেন সিলভাও। বর্তমানে তিনিই সিটির সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া মিডফিল্ডার। এই পর্তুগিজের সঙ্গে আগামী মৌসুম শেষেই চুক্তির মেয়াদ ফোরাবে সিটির।
৫
রাহিম স্টার্লিং [চেলসি]
প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও রাহিম স্টার্লিংকে মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে রাখতে হচ্ছে চেলসিকে। গত মৌসুমে স্টার্লিংকে ধারে আর্সেনালে পাঠিয়েছিল চেলসি। সেখানে ভালো করতে পারেননি (২৮ ম্যাচে মাত্র ১ গোল) জ্যামাইকায় জন্ম নেওয়া এই ইংলিশ উইঙ্গার। মৌসুম শেষে আবারও ফেরত এসেছেন চেলসিতে। সম্প্রতি ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়ে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জেতা দলটির সঙ্গে তাঁর আরও দুই বছর চুক্তি আছে। তবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিক্রি করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। ১ কোটি ৬৯ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড (২৭৫ কোটি ৯০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা)—বছরে এত বেতন দিয়ে ব্যর্থ এক ফুটবলারকে কে দলে রাখতে চায়?
৪
ভার্জিল ফন ডাইক [লিভারপুল]
লিভারপুলকে অনেক দিন ধরেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভার্জিল ফন ডাইক। গত মৌসুমে তাঁর অধিনায়কত্বেই প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অল রেডরা। শিরোপা ধরে রাখার অভিযানেও দলকে তিনি নেতৃত্ব দেবেন। ডাচ এই সেন্টার–ব্যাক ২০২৫–২৬ মৌসুমে পারিশ্রমিক হিসেবে ক্লাবের পক্ষ থেকে পাবেন ১ কোটি ৮২ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড (২৯৭ কোটি ১৩ লাখ ১১ হাজার টাকা), যা প্রিমিয়ার লিগের ডিফেন্ডারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। লিভারপুলের সঙ্গে ফন ডাইকের চুক্তির মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত।
৩
কাসেমিরো [ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড]
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতা কাসেমিরো নতুন চ্যালেঞ্জ নিতেই ২০২২ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নাম লেখান। কিন্তু ব্রাজিলের তারকা এই মিডফিল্ডার প্রিমিয়ার লিগের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভালোভাবেই টের পাচ্ছেন। সর্বশেষ দুই মৌসুম খুব বাজে কেটেছে ইউনাইটেডের। কাসেমিরো নিজে খুব একটা ভালো করতে পারেননি। তবে বেতন পাচ্ছেন আকাশচুম্বী—১ কোটি ৮২ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড (২৯৭ কোটি ১৩ লাখ ১১ হাজার টাকা), যা প্রিমিয়ার লিগের মিডফিল্ডারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
২
মোহাম্মদ সালাহ [লিভারপুল]
২০২৫ সালই লিভারপুলে তাঁর শেষ বছর-গত জানুয়ারিতে কথাটি বলেছিলেন মোহাম্মদ সালাহ। তবে সৌদি আরবের ৮ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব ফিরিয়ে গত এপ্রিলে ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছেন সালাহ। মিসরের তারকা এই ফরোয়ার্ড ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত অ্যানফিল্ডেই থাকবেন। ২০২৫–২৬ মৌসুমে তিনি বেতন বাবদ পাবেন ২ কোটি ৮ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড (৩৩৯ কোটি ৫৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা), যা প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
১
আর্লিং হলান্ড [ম্যানচেস্টার সিটি]
ম্যানচেস্টার সিটিতে নিজের অভিষেক মৌসুমে গোলের বন্যা বইয়ে দেন আর্লিং হলান্ড। ভাঙেন একের পর এক রেকর্ড। ২০২২–২৩ মৌসুমে সিটিকে ট্রেবল জেতাতে বড় অবদানও রাখেন। তবে এর পর থেকে হলান্ডের ফর্ম পড়তির দিকে। এতে ঘন ঘন চোট পড়ার দায়ও আছে। পুরোপুরি ফিট থাকলে আসন্ন মৌসুমে সিটির আক্রমণভাগকে হলান্ডই নেতৃত্ব দেবেন। বেতন পাবেন ২ কোটি ৭৩ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড (৪৪৫ কোটি ৬৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকা), যা প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ বছরের শুরুতে সিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছেন হলান্ড। নরওয়ের এই তারকা স্ট্রাইকার ক্লাবটিতে থাকবেন ২০৩৪ সালের জুন পর্যন্ত। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের ফুটবলারদের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তির তালিকায় এখন হলান্ডের নাম সবার ওপরে।
আমারবাঙলা/জিজি