২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) শুরু হয়েছে। বাংলা প্রথম পত্রের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এবারের পরীক্ষা। পরীক্ষা চলবে আগামী ১৩ মে পর্যন্ত। এবারের পরীক্ষায় সারা দেশের ১১টি শিক্ষাবোর্ডের ১৯ লাখ ২৮ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেবে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা।
নির্দিষ্ট দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৫ থেকে ২২ মে পর্যন্ত। এদিকে পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস, গুজব, নকল বা অসদুপায় অবলম্বনের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক রয়েছে।
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রতি বোর্ড ১৪ নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো- ১. পরীক্ষা শুরুর ৩০ (ত্রিশ) মিনিট পূর্বে অবশ্যই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে; ২. প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত সময় অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে; ৩. প্রথমে বহুনির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল/রচনামূলক (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং উভয় পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না; ৪. পরীক্ষার্থীরা তাদের প্রবেশপত্র নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট হতে পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে তিন দিন পূর্বে সংগ্রহ করবে; ৫. শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়গুলো এনসিটিবির নির্দেশনা অনুসারে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রকে সরবরাহ করবে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে ধারাবাহিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বর বোর্ডের ওয়েবসাইটে অনলাইনে প্রেরণ করবে; ৬. পরীক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ উত্তরপত্রের ঙগজ ফরমে তার পরীক্ষার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড ইত্যাদি যথাযথভাবে লিখে বৃত্ত ভরাট করবে। কোনো অবস্থাতেই উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না; ৭. পরীক্ষার্থীকে সৃজনশীল/রচনামূলক (তত্ত্বীয়), বহুনির্বাচনী ও ব্যবহারিক অংশে পৃথকভাবে পাস করতে হবে; ৮. প্রত্যেক পরীক্ষার্থী কেবল নিবন্ধনপত্রে বর্ণিত বিষয়/বিষয়সমূহের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। কোনো অবস্থাতেই ভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না; ৯. কোনো পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা (সৃজনশীল/রচনামূলক (তত্ত্বীয়), বহুনির্বাচনী ও ব্যবহারিক) নিজ বিদ্যালয়ে/প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে না। পরীক্ষার্থী স্থানান্তরের মাধ্যমে আসন বিন্যাস করতে হবে; ১০. পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে; ১১. কেন্দ্রসচিব ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি/পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন আনতে এবং ব্যবহার করতে পারবেন না; ১২. সৃজনশীল/রচনামূলক (তত্ত্বীয়), বহুনির্বাচনী ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর উপস্থিতির জন্য একই উপস্থিতি পত্র ব্যবহার করতে হবে; ১৩. ব্যবহারিক পরীক্ষা নিজ নিজ কেন্দ্র/ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে; ১৪. পরীক্ষার ফল প্রকাশের ৭ (সাত) দিনের মধ্যে পুনঃনিরীক্ষার জন্য অনলাইনে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।
বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ড. খোন্দকার এহসানুল কবির বলেন, ‘আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি এবং এখন পর্যন্ত কোনো ঘাটতি দেখছি না। মনিটরিং টিম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে।’
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীরা এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। পরীক্ষার হল রুমে বসে পরীক্ষা দিতে অক্ষম হলে, তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হবে। জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা অনুযায়ী, এই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম সতর্ক করে বলেন, গুজব ও অপতৎপরতা রোধে আপাভ বেশি সতর্ক থাকা উচিত।
এবারের পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা চলাকালে ১৩ মে পর্যন্ত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড।
পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতরে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে কেন্দ্রগুলোর ২০০ গজের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ব্যতীত জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বুধবার ডিএমপি কমিশনার স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, যেহেতু পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন, সেহেতু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-ওওও/১৯৭৬)-এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ব্যতীত জনসাধারণের অনধিকার প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। এ আদেশ আগামী ১০ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার দিনগুলোতে পরীক্ষা চলাকালীন সময় পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় ১ লাখ
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় এক লাখ। বিগত পাঁচ বছরে এবারই সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ছিল ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন, ২০২২ ছিল ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন এবং ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
এদিকে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকায় আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ১৩টি কেন্দ্র বাতিল করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। বাতিল কেন্দ্রগুলোর কোডসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
দেশে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার উদ্বেগজনক। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে গত সাত বছরে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী কমেছে। পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ২৮ লাখ দুই হাজার ৭১৫ জন শিক্ষার্থী। স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারলে তাদেরই গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। তবে গত বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সাত বছরের শ্রেণি কার্যক্রমে প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষার স্বাভাবিক পথ থেকে ছিটকে পড়েছে। গড়ে প্রতি বছর দুই লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী রয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে ছাত্র সাত লাখ এক হাজার ৫৩৮ জন এবং ছাত্রী সাত লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা দুই হাজার ২৯১টি, প্রতিষ্ঠানসংখ্যা ১৮ হাজার ৮৪টি।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন এবং এক লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন ছাত্রী। এই বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৭২৫টি এবং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৩টি।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ আট হাজার ৩৮৫ এবং ৩৪ হাজার ৯২৮ জন ছাত্রী।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            