বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এখন পর্যটকে সরগরম। যেন কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। হোটেল-মোটেলে আগে থেকে বুকিং করা ছাড়া মিলছে না থাকার রুম। এ ছাড়া সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যটকরা সমুদ্রের ঢেউ উপভোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত এক সপ্তাহ এ অবস্থা চলছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর এ সময়ে পর্যটকদের ভীড় থাকে। তবে এ বছর সবচেয়ে বেশি ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায়ও গ্রহণ করা হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।
এদিকে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, সঙ্গে যোগ হয়েছে থার্টিফার্স্ট নাইট। কদিন পরেই বিদায়ের সুর বেজে উঠবে ২০২৪ সালের। সেই সঙ্গে বিরাজ করছে শীতের আমেজ। এমন সুন্দর মুহূর্তে মনকে আন্দোলিত করতে পর্যটকদের ভীড় জমেছে কক্সবাজারে।
পর্যটকরা বলছেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়ানোর এখন মোক্ষম সময়। তা ছাড়া সবার মধ্যে একটি বিষয় কাজ করছে, তা হলো ৫ আগস্টের পর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগের সময়ের তুলনায় আনন্দ উপভোগ অন্যরকম হবে বলে তাদের বিশ্বাস। কারণ হিসেবে তারা জানান, গত সরকার আমলেও তারা এসেছেন কক্সবাজারে। কিন্তু তখন নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল এই পর্যটন নগরী।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী পর্যটকরা বিচবাইক, ওয়াটার বাইক ও ঘোড়ায় চড়ে সমুদ্র দর্শন করছেন। কেউ আবার টায়ার টিউবে গা ভাসানো ও নোনা জলে গোসলে নেমেছেন। প্রিয়জনেরা এসব দৃশ্য মোবাইল ফোন ও ক্যামেরায় ধারণ করছেন।
পর্যটক বাড়ায় জমজমাট ব্যবসা হওয়ায় কিটকট চেয়ার, বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা খুশি। অটো ও চান্দের গাড়ি ব্যবসাও জমজমাট। বেড়েছে বার্মিজ ও শুটকি মার্কেটের ব্যবসা। অনেক নতুন পর্যটক এসব দোকানে ভীড় করায় খুশি দোকানিরা। পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের কোনো রুম খালি নেই। রুম না পেয়ে অনেক পর্যটককে ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে যত্রতত্র ঘুরতেও দেখা গেছে। আশানুরূপ পর্যটক আসায় এবারের ছুটিতে শত কোটি টাকার বেশি ব্যবসার আশা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে কয়েক লাখ পর্যটকের নিরাপত্তা, সমুদ্রে নিরাপদে গোসলসহ চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে মাঠে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। দীর্ঘ ছুটিতেই পর্যটকের চাপ একটু বেশি থাকে। এসব বিবেচনায় নিয়ে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সজাগ রয়েছে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম। নির্বিঘ্নে দেশ-বিদেশের পর্য়টকরা স্বাচ্ছন্দে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে হোটেল-মোটেল ও কটেজের ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং রয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ি রুম বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ পর্যটককে রুমের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি মুকিম খান বলেন, পর্যটন মৌসুম বহু আগে শুরু হলেও সেন্টমার্টিন পর্যটক যাওয়া নিষেধ থাকায় এতদিন পর্যটন ব্যবসা জমেনি। ডিসেম্বরের শুরুতে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু হলে চাঙ্গা হয়ে উঠে পর্যটন শিল্প। এর ফলে বেড়েছে পর্যটক। বর্তমানে সব ধরনের হোটেলে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষ বুকিং রয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্তও ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, বহু চাহিদা থাকলেও সেন্টমার্টিনে যাচ্ছেন দৈনিক দুই হাজার পর্যটক। এ কারণে আগ্রহ থাকলেও অনেক পর্যটক এবছর কক্সবাজারে আসছেন না। তবে ভারতে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ বন্ধ থাকায় সেই শূন্যতা অনেকটা পূরণ হয়েছে। ভারত যেতে না পেরে অনেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসছেন।
দেখা গেছে, সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট ও লাবনী পয়েন্টে পর্যটককে ভরা। শুধু এই তিন পয়েন্ট ছাড়া অন্য পয়েন্টগুলোতে চোখে পড়ার মতো ভিড় ছিল। আগত পর্যটকরা বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে ঘোড়ায় চড়ে, ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকে চড়ে সমুদ্র দর্শনে মেতেছেন। কিছু পর্যটক নোনা জলে স্নান করতে নেমে আনন্দ উপভোগ করছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের টহল আরো দুইগুণ বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ ও র্যাবসহ সব আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী সমন্বিতভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে রাতদিন গোয়েন্দা নজরদারিও রাখা হয়েছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            