চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে ৯ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও বেগম রোকেয়া দিবস-২০২৫ উদযাপন এবং ‘অদম্য নারী পুরস্কার ২০২৫’ বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন, এবং সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ শরীফ উদ্দিন।
সভা শুরু হয় স্বাগত বক্তব্যে, যা প্রদান করেন উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী। পরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্মিত বেগম রোকেয়া দিবসের বিশেষ ডকুমেন্টারি “আমিই রোকেয়া” প্রদর্শন করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা পর্যায়ে ‘অদম্য নারী পুরস্কার ২০২৫’ এই চার ক্যাটাগরিতে প্রদান করা হয়েছে:
-
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী: শিপ্রা দাশ, বোয়ালখালী।
-
শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী: আসমা আকতার রুনা, সাতকানিয়া।
-
সফল জননী নারী: রেজিয়া বেগম, সন্দ্বীপ।
-
নির্যাতনের বিরুদ্ধে জীবনসংগ্রামে জয়ী নারী: জান্নাতুল আদন, সাতকানিয়া।
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা সৌভাগ্যবান যে, আমাদের একজন বেগম রোকেয়া আছেন। তিনি তাঁর সময়ের প্রতিকূলতা জয় করে নারীর জন্য কিছু করার কথা ভেবেছেন, সমাজে নারীদের মর্যাদার আসন দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। আমাদের মেয়েরা প্রত্যেকেই একেকজন রোকেয়া। যারা সাফল্য পেয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘসময় ধরে অনেক পরিশ্রম করে সফল হয়েছেন। এমন নয় যে, গতকাল শুরু করে আজই সফল হয়েছেন। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, সেসব পেরিয়ে তাঁরা সফল হয়েছেন; আবার অনেকেই মাঝপথে থেমে গেছেন, সফল হতে পারেননি। আমরা যারা নারীদের জন্য কাজ করছি, আমাদের দায়িত্ব হলো এঁদেরকে হারিয়ে যেতে না দেওয়া। সামনে তুলে আনা, সফল হতে সহযোগিতা করা। তিনি বলেন, জীবন একবারই পাওয়া যায়; এই জীবনেই আমাদেরকে সফল হতে হবে। এজন্য কষ্ট করতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। এমন নয় যে, জীবন বার বার ফিরে পাবো; একটা জীবন কোনোভাবে পার করে দিলেও পরেরবার জীবনকে সাজিয়ে নেব, সুন্দর করে শুরু করব। কাজেই আমাদের ভালো কিছু করার জন্য এই একটা জীবনকেই সুন্দর করে তুলতে হবে। কঠোর পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তিকে জাগিয়েই তা করা সম্ভব হবে। নিজের মধ্যে অদম্য মনোভাব থাকতে হবে, বেগম রোকেয়া যদি পারেন, তবে আমরা কেন পারব না। তিনি সবাইকে ইচ্ছা, পরিশ্রম ও নীতিবোধের মাধ্যমে পারিবারিক জীবন যাপনের আহ্বান জানান।”
পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, “ অদম্য নারী পুরস্কারপ্রাপ্তদের জীবন সংগ্রাম ও তাঁদের বক্তব্য শুনে তিনি ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান। তিনি বেগম রোকেয়া অবদান তুলে ধরে বলেন যে, সময় ও পরিস্থিতির প্রয়োজনে একজন বেগম রোকেয়ার জন্ম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি যে কাজ করি তারচেয়ে আমার স্ত্রীর কাজগুলো অনেক কঠিন এবং অনেক বেশি পরিশ্রমের। বিশ্বের প্রতিটি নারীর প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।”
সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ শরীফ উদ্দিন বলেন, "অদম্য নারী পুরস্কার প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান। তিনি উপস্থিত সবাইকে নিজের পরিবারের সন্তানদের প্রতি কোনো ধরনের বৈষম্য না করার আহ্বান জানান। পরিবারে আমরা যদি সহিংসতা ও বৈষম্য দূর করে সন্তানদের সুশিক্ষিত করতে পারি তাহলে রাষ্ট্র সুনাগরিক পাবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে।'
অনুষ্ঠানে প্রাপ্ত নারীদের ক্রেস্ট, সনদ ও উত্তরীয় দিয়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়।