চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, কার্যক্রম ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন। সকাল থেকে শুরু হওয়া এই সফরে তিনি প্রশাসনিক কার্যক্রম তদারকি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং জনগোষ্ঠীমুখী সেবাপ্রদান কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের ওপর জোর দেন।
চন্দনাইশে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিদর্শন
সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক চন্দনাইশ থানা পরিদর্শন করে উপজেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সম্মেলন কক্ষে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি অংশ নেন।
সভায় জেলা প্রশাসক বলেন—
“একটি দায়িত্বশীল, সেবামুখী ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রত্যেক কর্মকর্তা যদি পরিবর্তনের অংশীজন না হন, তবে কাঙ্ক্ষিত মানবিক সমাজ ব্যবস্থার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।”
তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাস্তবায়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন এবং জনসেবায় আন্তরিকতা বজায় রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
উপকারভোগীদের মাঝে সরকারি সহায়তা বিতরণ
মতবিনিময় সভা শেষে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিভিন্ন সরকারি সহায়তা বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক। এর মধ্যে প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার ও ট্রাইসাইকেল, ছয়জনকে সুবর্ণ নাগরিক কার্ড, ১০ জন কৃষকের মাঝে সার ও বীজ, ৪০ জন এতিম শিশুকে পোশাক ও শিক্ষা উপকরণ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পরবর্তীতে তিনি চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত নতুন প্রশাসনিক ভবন উদ্বোধন করেন এবং চট্টগ্রাম–১৪ আসনের কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
পটিয়ায় প্রশাসনিক তদারকি ও মতবিনিময়
চন্দনাইশ সফর শেষে জেলা প্রশাসক পটিয়া উপজেলা পরিদর্শনে যান। তিনি পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, পটিয়া থানা এবং নির্বাচনের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। থানায় তিনি অস্ত্রাগারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্টার পর্যালোচনা করেন।
পরে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন,
“সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা বজায় রাখা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা—এ তিনটি ক্ষেত্রেই প্রশাসনকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে।”
সামাজিক সহায়তা ও উন্নয়ন কার্যক্রম
উভয় উপজেলাতেই জেলা প্রশাসক বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে অংশ নেন। এর মধ্যে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় রিকশা প্রদান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুবর্ণ নাগরিক কার্ড ও ট্রাইসাইকেল বিতরণ, কৃষকদের মাঝে রবি প্রণোদনার সার-বীজ বিতরণ, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের উদ্যোগে আত্মকর্মসংস্থানের চেক বিতরণ, সরকারি শিশু পরিবারের কিশোরদের মাঝে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ এবং হাবিলাসদ্বীপ সরকারি শিশু পরিবারের মাঠ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন উল্লেখযোগ্য।
দিনব্যাপী সফরে চন্দনাইশ ইউএনও মো. রাজিব হোসেন, পটিয়ার ইউএনও ফারহানুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা, পটিয়া থানার ওসি, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং দুই উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আমারবাঙলা/এনইউআ