মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের হাইল হাওর যেন প্রকৃতির এক নিপুণ আঁচড়ে আঁকা বিস্তীর্ণ জলরাশি। শীতের ঘন কুয়াশা কাটিয়ে ভোরের প্রথম আলোয় হাওরের বুক চিরে ভেসে ওঠে হাজারো লাল শাপলার সমাহার। দূর থেকে মনে হয় পানির ওপর বিছিয়ে আছে অনন্ত লালের নীরব গালিচা। এই মোহময় দৃশ্য প্রতিদিন আকর্ষণ করছে দেশের নানান প্রান্তের প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের।
১৪টি বিল নিয়ে গঠিত সুবিশাল হাইল হাওরের অন্যতম অংশ ‘সানন্দা বিল’, যা সম্প্রতি ‘লাল শাপলা বিল’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে থাকা লাল শাপলার সৌন্দর্য যত দূর চোখ যায় শুধু লালের সমারোহ। প্রতিদিনই এখানে ভিড় করছেন হাজারো পরিবেশপ্রেমী দর্শনার্থী।
সিলেটের কানাইঘাট থেকে আসা দর্শনার্থী জুবায়ের আহমদ বলেন, সিলেট অঞ্চলের প্রতিটি কোণেই প্রকৃতির সৌন্দর্য আছে। কিন্তু শাপলা বিলে এসে মনে হলো প্রকৃতি যেন নিজের হাতে সাজানো এক শিল্পকর্ম উজাড় করে দিয়েছে।
শ্রীমঙ্গলের কলেজছাত্রী দীপান্বিতা দাশগুপ্তা জানান, প্রথমবার এত লাল শাপলা একসঙ্গে দেখে অভিভূত হয়েছেন। তাঁর ভাষায়, মনে হচ্ছে লাল গালিচার রাজ্যে দাঁড়িয়ে আছি। মন ভরে গেছে।
স্থানীয় যুবক ফাহিম আহমদ বলেন, এ বছর শাপলার বিস্তার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। পুরো বিলটাই যেন লাল শাপলার রাজ্য। সঙ্গে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখির আনাগোনায় দৃশ্য আরও মনোরম হয়ে উঠেছে।
শুধু দর্শনার্থী নয়, বাড়ছে স্থানীয়দের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও। যাত্রাপাশা গ্রামের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, হাজারো পর্যটকের ভিড়ে বাজার, হোটেল, মুদি দোকান সব জায়গায় ব্যবসা বাড়ছে। তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন, ফুল যেন না ছিঁড়ে সৌন্দর্যটিকে রক্ষা করা হয়।
হাওরের মাঝি তাহির মিয়া জানান, এখন মাছ ধরা বাদ দিয়ে নৌকায় পর্যটক ভ্রমণ করিয়েই ভালো আয়ের সুযোগ হচ্ছে। পর্যটক যত বাড়ছে, তাঁদের রোজগারও তত বাড়ছে।
মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আবু আজম জানান, লাল শাপলা রাতে ফুটে এবং ভোরে সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য চোখে পড়ে। তাই সকালই শাপলা দেখার উপযুক্ত সময়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, মির্জাপুরের লাল শাপলা এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিদিন এখানে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। ক্রমবর্ধমান দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
হাইল হাওরের লাল শাপলা শুধু প্রকৃতির রঙিন উপহার নয়; এটি বদলে দিচ্ছে একটি অঞ্চলের অর্থনীতি, পরিচয় এবং পর্যটনের চিত্র। জলরাশির ওপর লালের এই সমারোহ নতুন করে লিখে দিচ্ছে শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্যের গল্প এবং আহ্বান জানাচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের।
আমারবাঙলা/এসএ