ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক

গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাবে সমর্থন জাতিসংঘের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজা যুদ্ধের ইতি টানতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করা একটি খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এ পরিকল্পনায় ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স’ (আইএসএফ) নামে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাব রয়েছে, যেখানে একাধিক দেশ অবদান রাখার আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোমালিয়াসহ পরিষদের ১৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। কোনো দেশই বিরোধিতা করেনি। রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল। খবর- বিবিসি

প্রস্তাব অনুযায়ী, আইএসএফ ইসরায়েল ও মিশরের পাশাপাশি একটি নতুন প্রশিক্ষিত ও পরীক্ষিত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে। এর লক্ষ্য, সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হামাসসহ ‘অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে স্থায়ীভাবে নিরস্ত্র করার প্রক্রিয়া’ গতিশীল করা। এখন পর্যন্ত ওই এলাকার পুলিশ বাহিনী হামাসের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, দুই বছরের যুদ্ধের পর গাজার পুনর্গঠনের অর্থায়ন বিশ্বব্যাংকের সমর্থিত একটি ট্রাস্ট ফান্ড থেকে আসবে। আইএসএফ এবং বিওপি উভয়ই একটি ফিলিস্তিনি কমিটি ও পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি কাজ করবে।

নিরাপত্তা পরিষদের ভেটোক্ষমতাসম্পন্ন দেশ রাশিয়া শুরুতে বিরোধিতার ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত ভোটে অংশ না নিয়ে বিরত থাকে। এর ফলে প্রস্তাবটি সহজেই পাস হয়। রাশিয়া ও চীন মূলত পিএসহ আরও আটটি আরব ও মুসলিম দেশের সমর্থনের কারণে প্রস্তাবটি আটকে দেয়নি। তবে মস্কো ও বেইজিং উভয়ই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, মূল প্রক্রিয়াগুলোর কাঠামো অস্পষ্ট, এতে জাতিসংঘের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত নয় এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের অঙ্গীকারও যথেষ্টভাবে পুনর্ব্যক্ত করা হয়নি।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেন, প্রস্তাব গ্রহণ ‌যুদ্ধবিরতি সুসংহত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এদিকে হামাস প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জানিয়েছে, এটি ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও দাবির প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রস্তাব পাস হওয়ার পর টেলিগ্রামে হামাস লিখেছে, পরিকল্পনাটি ‌‘গাজা উপত্যকার ওপর একটি আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে, যা আমাদের জনগণ এবং তাদের দলগুলো প্রত্যাখ্যান করে। আন্তর্জাতিক বাহিনীকে গাজায় দায়িত্ব পালন করানো, যার মধ্যে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণও রয়েছে, তাদের নিরপেক্ষতা নষ্ট করবে এবং দখলদারের স্বার্থে সংঘাতের পক্ষ হিসেবে দাঁড় করাবে।’

এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, তারা নিরস্ত্রীকরণে রাজি নয়। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই বৈধ প্রতিরোধ। এই প্রস্তাব গাজা উপত্যকার ওপর এক ধরনের আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে, যা আমাদের জনগণ ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো মেনে নেবে না। এর ফলে প্রস্তাবে অনুমোদিত এই আন্তর্জাতিক বাহিনীর সঙ্গে হামাসের বিরোধ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ জানান, আইএসএফকে এলাকা সুরক্ষিত করা, গাজার নিরস্ত্রীকরণে সহায়তা করা, সন্ত্রাসী অবকাঠামো ভেঙে ফেলা, অস্ত্র অপসারণ করা এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া, নিরাপত্তা পরিষদ ‘বোর্ড অফ পিস’ (বিওপি) নামে একটি অন্তর্বর্তীকালীন শাসন কাঠামো গঠনের অনুমোদন দেয়। এটি একটি ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক কমিটির তত্ত্বাবধানে গাজার পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তা তদারকি করবে।

মাইক ওয়াল্টজ আরও বলেন, প্রস্তাবটি ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের একটি সম্ভাব্য পথ খুলে দিচ্ছে; যেখানে রকেটের বদলে থাকবে শান্তির প্রতীক। আর এর মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধানের দিকে এগোনোর সুযোগ তৈরি হবে। এ প্রস্তাব হামাসের নিয়ন্ত্রণ ভেঙে দেবে; গাজাকে সন্ত্রাসের ছায়া থেকে বের করে এনে একটি নিরাপদ, সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।’

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গত মাসে ট্রাম্পের গাজা নিয়ে ২০ দফা পরিকল্পনার প্রথম ধাপ— দুই বছরের যুদ্ধবিরতির জন্য একটি যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি আগেই মেনে নিতে সম্মত হয়েছে। তবে এখন গাজায় অন্তর্বর্তী প্রশাসনিক কাঠামোকে বৈধতা দিতে এবং সেখানে সেনা পাঠানোর কথা বিবেচনা করা দেশগুলোর কাছে আশ্বাস পৌঁছে দিতে জাতিসংঘের এই প্রস্তাবকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নিরাপত্তা পরিষদের এই ভোটকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, এটি বিওপি-কে ‘স্বীকৃতি ও সমর্থন’ দেওয়ার একটি উপায়। ট্রুথ সোশ্যাল–এ তিনি লিখেছেন, এটি জাতিসংঘের ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম অনুমোদন হিসেবে স্থান পাবে, যা সারা বিশ্বে আরও শান্তি আনবে এবং এটি একটি সত্যিকারের ঐতিহাসিক মুহূর্ত!’

যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) এবং মিশর, সৌদি আরব ও তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি আরব ও মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ দ্রুত প্রস্তাবটি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। পিএ বলেছে, শর্তগুলো 'জরুরিভাবে এবং অবিলম্বে' বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিকল্পনার প্রাথমিক ধাপ—ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি-বন্দী বিনিময়—১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। রাষ্ট্রদূত ওয়াল্টজ একে ‘ভঙ্গুর, ভঙ্গুর প্রথম পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন। ট্রাম্পের পরিকল্পনা কার্যত ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ স্থগিত করেছে। সংঘাতটি শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর, যেখানে প্রায় ১,২০০ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হন।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে ৬৯,৪৮৩ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

আমারবাঙলা/এফএইচ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ঢাকাস্থ ৭ কলেজের শিক্ষকদের সর্বাত্মক টানা কর্মবিরতি ঘোষণা

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে ঢাকাস্থ ৭ কলেজের শিক্ষক...

শেখ হাসিনার মামলার রায় আজ

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থান দমনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শে...

উত্তরার দিয়াবাড়ি ব্রিজ এলাকায় ছিনতাই আতঙ্ক

রাজধানীর উত্তরার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান দিয়াবাড়ি। প্রতিদিনই বহু মানুষ এখান...

‘বিচার স্বচ্ছ হয়েছে, শেখ হাসিনা খালাস পেলে খুশি হতাম’

সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্টাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ...

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা...

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে বিএনপির আনন্দ মিছিল থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামি...

‘আই ডোন্ট কেয়ার’ লেখা ফটোকার্ড পোস্ট, ঢাবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার আটক

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্য...

গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাবে সমর্থন জাতিসংঘের

গাজা যুদ্ধের ইতি টানতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনাকে সমর্থন...

দেশে নারী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি, কারণ কি?

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আলোচনায় উঠে এসেছে তার ফাঁসি কার্যকরের...

জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দণ্ডিত আসামির বক্তব্য প্রচার না করার অনুরোধ

জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দণ্ডিত আসামির বক্তব্য প্রচার না করার অনুরোধ জানিয়েছ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা