সংগৃহিত
খেলা

‘জার্মান কাইজার’ বেকেনবাওয়ারের বিদায়

ক্রীড়া ডেস্ক: ফুটবল খেলেছেন তো অনেকেই। ঠিক কবে থেকে এর শুরু, তা জানা নেই কারোরই। কিন্তু ফুটবলকে রীতিমত বদলে দিয়েছেন এমন মানুষ কজনই বা হয়? নেদারল্যান্ডসে ইয়োহান ক্রুইফ শুরু করেছিলেন টোটাল ফুটবল, আর্জেন্টিনায় আছে ট্যানগো, ব্রাজিলের আছে সাম্বা। আর জার্মানির? ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা এই দলের অস্ত্র যান্ত্রিক ফুটবল। যেমনটা আর কেউ কখনো খেলেনি।

এই জার্মানির হাতেই খুন হয়েছিল ইয়োহান ক্রুইফের ৭৪ সালের অনিন্দ্যসুন্দর টোটাল ফুটবল। আবার ১৯৯০ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার লাগাম টেনে ধরেছিল এই জার্মানিই। দুবারেই মাঠের ফুটবলের বাইরে মেধা ছিল একজনের। নাম তার ফ্রাঞ্চ বেকেনবাওয়ার। ৭৪ সালে ছিলেন খেলোয়াড় আর ৯০ এ কোচ। খেলোয়াড় আর কোচ দুই ভূমিকায় বিশ্বকাপ জিতেছেন কেবল তিনজন। এরমাঝে একজন জার্মানির বেকেনবাওয়ার। ফুটবল যিনি শুধু খেলেননি, রীতিমত বদলে দিয়েছেন।

সেই অনন্য ফুটবলার বেকেনবাওয়ার পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন গতকাল। পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল (স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১২ মিনিট) বিবৃতিতে বলা হয়, ‘খুব দুঃখের সঙ্গে আমরা ঘোষণা করছি, বাবা ও স্বামী ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার গতকাল ঘুমের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে মারা গেছেন। এ সময় পরিবার তাঁর পাশে ছিল।’

জার্মানির সম্রাট দ্বিতীয় লুডভিগের মতোদেখতে হওয়ায় এক সাময়িকী বেকেনবাওয়ারের নাম দিয়েছিল ‘কাইজার।’ বাংলায় যা হয় সম্রাট। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে আক্ষরিক অর্থেই জার্মানির ফুটবলে আর ফুটবল ভক্তদের মাঝে সম্রাট হয়ে ছিলেন এই ক্ষুরধার ব্যক্তিত্ব।

ব্রাজিলের ছিল পেলে। আর্জেন্টিনার ছিল ম্যারাডোনা। নেদারল্যান্ডসের ছিল ক্রুইফ। আর জার্মানির ছিল বেকেনবাওয়ার। জার্মানির এই ফুটবলারকে তর্কাতীত ভাবে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার। তবে তার নিজ দেশের মানুষ মনে করেন, তিনিই সবার চেয়ে সেরা। বেকেনবাওয়ার ছাড়া আর কোনও বড় ফুটবলার নেই।

বেকেনবাওয়ার জার্মান ফুটবলের কতখানি জুড়ে আছেন, সেটা উয়েফার ‘এক্স’ পোস্ট থেকে বুঝে নেওয়া যায়, ‘...আর কেউ জার্মান ফুটবলকে তাঁর মতো এতটা পূর্ণতা দেননি।’

বলা হচ্ছিল, বেকেনবাওয়ার ফুটবলকে বদলে দিয়েছেন আজীবনের জন্য। ফুটবল মাঠে লিওনেল মেসির ফ্রি রোলের ফুটবলের কথা কে না জানে। সেই ফ্রি রোলের ফুটবল পৃথিবীকে প্রথম দেখিয়েছিলেন এই জার্মান মায়েস্ত্রা। সুইপার, লিবেরো… আরও কত কত শব্দের জন্মটা হয়েছে এই বেকেনবাওয়ারের কল্যাণে! ফরোয়ার্ডে গার্ড মুলার, গোলবারে সেপ মায়ার, মাঝমাঠে উলি হোয়েনেস আর রক্ষণে ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। সত্তরের দশকে জার্মানি এবং বায়ার্ন মিউনিখে রাজত্বের কারিগর ছিলেন তারা। আর এই অদম্য দলের অধিনায়ক ছিল সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি।

মিউনিখের গিসলিংয়ের ১৯৪৫ সালে জন্ম নেন বেকেনবাওয়ার। বয়সভিত্তিক ফুটবলের জন্য বেছে নেন মিউনিখের আরেক ক্লাব বায়ার্নকেই। শুরুতে তিনি ছিলেন একজন সেন্টার ফরোয়ার্ড। বায়ার্নের হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয় ১৯৬৪ সালে। সে সময় বায়ার্ন আজকের মত নামী ক্লাব না। ক্লাবটি খেলত জার্মানির দ্বিতীয় সারির ক্লাবে। সেই বায়ার্নকে বুন্দেসলিগায় উঠে আসতে দারুণভাবে সহায়তাও করেন বেকেনবাওয়ার।

এরপর বাভারিয়ানদের হয়ে যা করেছেন, তা ইতিহাসের পাতায় অনায়াসে ঠাঁই দেওয়া যায়। ১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে তিনি দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন এবং দলটিকে প্রথমবারের মতো বুন্দেসলিগার শিরোপাও এনে দেন। ১৯৭২-৭৪ সালের মধ্যে দলকে ঘরোয়া লিগের হ্যাটট্রিক শিরোপাও এনে দেন। এ সময় ইউরোপিয়ান ফুটবলেও বায়ার্ন হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য এক দল। ১৯৭৪-৭৬–এর মধ্যে হ্যাটট্রিক ইউরোপিয়ান শিরোপা জেতা দল হয়ে যায় তারা। যার পেছনে বড় অবদান অধিনায়ক বেকেনবাওয়ারের।

ফুটবলের ব্যক্তিগত সম্মাননার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি বলা চলে ব্যালন ডি’ অরকে। শেষ কবে একজন ডিফেন্ডার এই খেতাব জিতেছেন, সেটা দেখতে হলে ফিরে যেতে হবে ২০০৬ সালে। ডিফেন্ডারদের জন্য এই পুরস্কার পাওয়াই যেখানে কঠিন, সেখানে জার্মানির ফ্রাঞ্চ বেকেনবাওয়ার এই সম্মান জিতেছেন দুইবার। ১৯৭২ ও ১৯৭৬ সালে ব্যালন ডি’অর জিতে নেন এই ডিফেন্ডার। ১৯৮৩ সালে যখন বুটজোড়া তুলে রাখছেন, ততদিনে তিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। পেলের পাশে ম্যারাডোনা নয়, তখন তর্ক চলতো বেকেনবাওয়ারের নামে।

ফুটবলের জন্য তার মেধার কদর করতে ভোলেনি জার্মানি। ১৯৮৪ সালেই তার হাতে তুলে দেওয়া হয় জার্মানির দায়িত্ব। প্রথমবারেই দলকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে যান বেকেনবাওয়ার। সেবার ডিয়েগো ম্যারাডোনার অতিমানবীয় ফুটবলের সঙ্গে সেবার পেরে ওঠেনি পশ্চিম জার্মানি। কিন্তু বেকেনবাওয়ার যেন হাল ছাড়ার পাত্র নন। চার বছর পর সেই আর্জেন্টিনাকে হারিয়েই কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতেন দ্য কাইজার।

এরপর ফরাসি ক্লাব মার্শেইকে ১৯৯০-৯১ লিগ ওয়ান শিরোপা জেতান। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে কোচ হিসেবে বুন্দেসলিগার শিরোপা এনে দেন বায়ার্নকেও। পরবর্তীতে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে উয়েফা কাপের শিরোপাও এনে দেন বেকেনবাওয়ার। ডের কাইজার হয়ে ওঠেন জার্মান ফুটবলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ডাক এসে যায় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে।

কোচিং ক্যারিয়ারের ইতি টেনে বায়ার্নের সভাপতি এবং জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতির দায়িত্বও পালন করেন বেকেনবাওয়ার। তিনি যে সত্যিকার অর্থেই সম্রাট সেটা আরও স্পষ্ট হতে থাকে দিনে দিনে। ১৯৯৪ সালে বায়ার্নের প্রেসিডেন্ট হন। ক্লাবের আমূল বদলে দেন সেই সময়। উত্তরোত্তর এগিয়ে যেতে থাকে ক্লাব। ২০০৬ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ আয়োজনের পিছনেও অন্যতম ভূমিকা ছিল বেকেনবাওয়ায়ের।

এবি/এইচএন

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার

জনস্বার্থে ন্যায্য ও সময়োপযোগী প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দেশের ত...

ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  

ইসি যে সময় ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে সে সময়ের জন্য প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী&rs...

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা

পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট...

খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনায় ট্রাম্পের ভেটো

বর্তমানে খুবই আলোচিত বিষয় হল ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেন...

ড্রয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু মেসির মায়ামির

নতুন কিছু প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে জমকালো উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আজ...

আজ সোমবার থেকে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস

গত কয়েকদিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টিপাতের আভাস পাওয়া গেছে। দেশের বেশিরভা...

ঈদযাত্রা ‘স্বস্তিদায়ক’ না হওয়ায় ‘দুর্ঘটনা ও হতাহত বেড়েছে’: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

উৎসব বা আনন্দ করতে গিয়ে অনেক সময় নিরানন্দে পরিণত সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। তাই যথা...

বাবাকে নিয়ে মন্দিরার পোস্ট

পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘নীলচক্র’ ছবিতে অভিনয় করেছেন নবাগত...

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্কোয়াড ঘোষণা

পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট...

ইডেন কলেজের পুকুরের পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের পুকুরের পানিতে সাঁতার শিখতে গিয়ে ডুবে সানজিদা আক্ত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা