‘সুলতান অব সুইং’ ওয়াসিম আকরাম ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখে খেলে গেছেন পরবর্তী দুই দশক। ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জেতা আকরাম ওয়ানডে ও টেস্ট মিলিয়ে ৯০০–এরও বেশি উইকেট নিয়েছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলারদের একজন আকরামের আত্মজীবনী ‘সুলতান: আ মেমোয়র’ প্রকাশিত হয় ২০২২ সালে। যেখানে নিজের খেলোয়াড়ি জীবন, নেশায় আসক্তি, পারিবারিক সম্পর্ক, পাকিস্তান ক্রিকেটে ফিক্সিং নিয়ে অকপটে অনেক কথা লিখেছেন আকরাম। আত্মজীবনীতে ‘ডার্টি মানি’ নামে একটা অধ্যায়ে আকরাম লিখেছেন ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে। পাকিস্তান ক্রিকেটকে টালমাটাল করে দেওয়া এই ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে এসেছিল আকরামের নামও, তাঁকে জরিমানাও করা হয়েছিল, তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছিল তাঁকে আর কখনো অধিনায়ক না বানাতে। নিজের বইতে আকরাম অবশ্য এই ফিক্সিং কেলেঙ্কারি থেকে নিজে না জড়িত থাকার দাবি করেই লিখেছেন অনেক কিছু।
ওয়াসিম আকরাম যা লিখেছেন
পাকিস্তান ক্রিকেটে দুর্নীতির আভাস আমি প্রথম পাই ১৯৯০ সালের এপ্রিলে, অস্ট্রেলেশিয়া কাপ ফাইনালের আগে। এর কয়েক দিন আগে থেকেই শারজাতে গুঞ্জন চলছিল—আমরা নাকি অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারব। কথাটা পৌঁছে যায় জাভেদ মিয়াঁদাদের কানে, তিনিই জানান ইমরান খানকে।
ইমরান তখন আমাদের সবাইকে ড্রেসিংরুমে ডেকে স্পষ্ট করে বললেন, আমরা যেন সবাই নিজেদের সেরাটা দিই। আর সবাই যাতে সিরিয়াস থাকে, সে জন্য তিনি জানান-ওই পর্যন্ত টুর্নামেন্টে আমরা যে ১৪ হাজার পাউন্ড পুরস্কার জিতেছিলাম, এর পুরোটাই তিনি পাকিস্তানের জয়ের পক্ষে বাজি ধরবেন। আমরা জিতেও গেলাম। সেদিন মনে হয়েছিল, ভালো একটা কাজের ভালো পুরস্কার পেলাম।
তবে আমি তখনো বুঝিনি-বুঝতে পারেনি বাইরের অনেকেও-পাকিস্তানি ক্রিকেট ব্যবস্থা দুর্নীতির কাছে এতটা অসহায় কেন। আসলে, পুরো পাকিস্তানি সমাজই দুর্নীতির প্রলোভনে ভরপুর। যখন কেউ পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সদস্য হয়, তখন সে সমাজের খুব ছোট একটি অভিজাত শ্রেণির অংশ হয়ে যায়। কিন্তু সেই সম্মান, অর্থ আর জনপ্রিয়তার চারপাশে ঘুরে বেড়াত বহু মুখ-চেনা-অচেনা, আপন-পর।
এই মানুষদের মধ্যে কারা আপনার মঙ্গল চায়, আর কারা সর্বনাশের ফাঁদ পাতছে, তা বোঝাটা ছিল কঠিন। কেউ যদি কিছু উপহার দেয়, কীভাবে জানবেন সেটা গ্রহণযোগ্য কি না? পরিচিতজনদের, আত্মীয় বা পুরোনো বন্ধুদের ওপর ভরসা করাটাই তো স্বাভাবিক। অথচ তারাই অনেক সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করত। পাকিস্তানের অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার শেষ পর্যন্ত ডুবে গেছেন পরামর্শের অভাবে, প্রতিভার অভাবে নয়।
আমি নিজে পাকিস্তানি ক্রিকেটে তুলনামূলক এক শান্ত সময়ে খেলেছি। ইমরান ও জাভেদ-দুজনের মধ্যে মতভেদ ছিল অনেক, তবে দুজনই ছিলেন কঠোর নেতা, উচ্চ মান বজায় রাখতেন। তাঁদের নেতৃত্বে খেলতে পারাটা আমার জন্য বিশাল গর্বের ব্যাপার ছিল।
কিন্তু পরে যখন আবার দুর্নীতির গুঞ্জন শুরু হলো, তখন দৃশ্যপট পুরো পাল্টে গেছে। ইমরান অবসর নিয়েছেন, জাভেদ বাদ পড়েছেন, আমাকে জোর করে অধিনায়কত্ব থেকে সরানো হয়েছে। সেলিম মালিক তখন অধিনায়ক, কিন্তু কেউ তাকে শ্রদ্ধা করে না। দলে অনেক নেতা, কিন্তু প্রকৃত নেতা কেউই ছিল না। তাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াত চাটুকার আর সুবিধাভোগী লোকজন।
আমি নিজেও তখন আর দলে মনপ্রাণ দিয়ে জড়িত ছিলাম না। আমি অধিনায়কত্ব
চাইনি, কিন্তু যখন পেলাম, ভালোভাবে সামলাতেও পারিনি। তবু আমাকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাটা ছিল অপমানজনক। যাদের আমি বন্ধু ভেবেছিলাম, যাদের আমি নিজের ঘরে দাওয়াত দিয়ে খাইয়েছি, তারাই বলেছিল আমার অধিনায়কত্বে খেলবে না। আর বোর্ড সেটা মেনে নিয়েছিল। তাদের সঙ্গে আবার কীভাবে খেলব?
আমার স্ত্রী হুমা বলেছিল, ওদের বন্ধু না ভেবে ‘সহকর্মী’ ভাবো। তাই ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত আমি দলে ছিলাম, কিন্তু দলের ভেতরের অংশ ছিলাম না। ব্যাট করেছি, বল করেছি, যতটা পারি খেলায় অবদান রেখেছি-কিন্তু নিজেকে জড়িতে রেখেছি যতটা সম্ভব কম। টিম মিটিংয়ে গেছি, চুপ করে থেকেছি। মাঠের বাইরে সবার থেকে দূরে থেকেছি। অধিনায়ক যেই হোক, তার কাছে মাথা নত করিনি-আর ওটা তো প্রায়ই বদলাত।
কিন্তু আমি নিজেকে গুটিয়ে রাখলে কী হবে, নানা রকম সব এজেন্ডা সামনে চলেই আসছিল। পাকিস্তান যখনই কোনো টেস্ট হারত, আমাদের ব্যর্থতা নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ত। ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডকে শেষ দিনে অলআউট করতে না পারায় এ রকমই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ল। আসল সত্যটা হলো, ওয়াকার এবং আমি, দুজনই ক্লান্ত ছিলাম, আমাদের ফিল্ডিং খারাপ হয়েছিল। আর স্বাগতিকেরা ব্যাটিংও ভালো করেছিল। সেলিম মালিক তাঁর বন্ধু অফ স্পিনার আকরাম রাজাকে দলে নিয়েছিলেন, সে কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ওয়ানডের সিরিজের শেষ ম্যাচের দুই দিন আগে আতাউর রেহমান (ফাস্ট বোলার) আমার কাছে এসে বলল, ‘পরের ম্যাচটা ফিক্সড। টিমে সবাই বলাবলি করছে।’ কীভাবে নেব কথাটা? আতাউর ভালো ছেলে, কিন্তু অত বুদ্ধিমান না, সহজ-সরল। আমি তাই ওর কথাটা হালকাভাবে নিয়েছিলাম।
পরে রশিদ লতিফ বলেছিল, সেই ম্যাচের আগের রাতে তাকে সেলিম মালিকের রুমে ডেকে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে ওয়াকার (ইউনুস), ইনজি (ইনজামাম-উল-হক), বাসিত (আলী) ও আকরাম রাজাকে ঘুষের প্রলোভন দেখানো হয়। সত্যি কি না কে জানে! রশিদ লতিফ ছিল এক অদ্ভুত চরিত্র-উইকেটরক্ষক হিসেবে খুব ভালো, কিন্তু সাংবাদিকদের ‘ভেতরের খবর’ দিতেও ওস্তাদ।
আতাউর পরে দাবি করে বসে, আমি নাকি ওকে ওই ম্যাচে খারাপ বল করার জন্য ৩–৪ লাখ রুপি অফার করেছিলাম। কিন্তু সত্যিটা হলো, ওই ম্যাচ আমরা হেরেছিলাম ১৪৫ রানে অলআউট হয়ে, কেউ খারাপ বল করেনি।
১৪ এপ্রিল ১৯৯৪, শারজাতে অস্ট্রেলেশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিনের ঘটনা। আমরা তখন হোটেল হলিডে ইনে, হঠাৎ রুমে ফোন আসে। ওপাশের কণ্ঠ বলল, ‘তোমরা কাল হারবে।’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কে?’ সে বলল, ‘তুমি জানো।’ আমি কিছুই জানতাম না।
আমি কলটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিইনি। কিন্তু ইনতিখাব (ইনতিখাব আলম, পাকিস্তান দলের তখনকার ম্যানেজার) বললেন, তিনিও নাকি এমন ফোন পেয়েছেন। তিনি সিরিয়াস হয়ে সবাইকে ডেকে বললেন, ‘আমরা কাল ভারতকে হারাব। আর কেউ কিছু জানলে, এখনই বলো।’ কেউ কিছু বলল না।
তিনি ঘোষণা দিলেন, আমরাই জিতব। শুধু তা–ই নয়, এরপর ফাইনালে হেরে গেলে যে ১০ হাজার ডলারের চেক পাওয়ার কথা, সেই পুরো টাকাই আমাদের জয়ের পক্ষে বাজি ধরার কথা বললেন। সেই ম্যাচটার পর আমরা ফাইনালও জিতেছিলাম।
জুলাইয়ে ইংল্যান্ড থেকে পাকিস্তানে ফিরে একটা ট্রেনিং ক্যাম্পে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করলাম। বললাম, ‘লোকে যা বলাবলি করে, সব যদি সত্যি হয়? এমন যদি হয়, কেউ সত্যি সত্যি টাকার বিনিময়ে ম্যাচ ছেড়ে দিচ্ছে?’ আমি জানতাম, এটা সম্ভব। আমার কয়েকজন সতীর্থ ছিল অত্যন্ত সাদাসিধে ও অনভিজ্ঞ-যেমনটা আমিও একসময় ছিলাম। যেমন মুশি (মুশতাক আহমেদ) ১০ ভাইবোনের একটি পরিবার থেকে এসেছিল। সে যখন প্রথম জাতীয় দলে যোগ দেয়, তার আগে কখনো লিফটে চড়েনি। তাকে প্রথম যখন দেখি, সে তার রুমের চাবি নিয়ে হোটেলের লবিতে উদ্ভ্রান্তের মতো দাঁড়িয়ে ছিল, কোথায় যাবে বা কী করবে, বুঝতে পারছিল না। আমি তাকে পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিলাম।
তো ইমরান খানকে এ কথা বলার পর তিনি আমাকে বললেন, ‘এসবের বাইরে থাকো এবং নিজের পারফরম্যান্সের দিকে মনোযোগ দাও। কেউ যেন বলতে না পারে তুমি চেষ্টা করনি।’ এরপর শ্রীলঙ্কায় গিয়ে আমি প্রাণপণে খেললাম। কলম্বোর মন্থর উইকেটে ৫ উইকেট নিলাম, ক্যান্ডিতে আমি আর ওয়াকার মিলে নিলাম ২৭ উইকেট।
টেস্ট ও ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের হারানোর পর সামনে ছিল সিঙ্গার ট্রফি (সিঙ্গার ওয়ার্ল্ড সিরিজ, ১৯৯৪)। আমরা বেশির ভাগই দুই সপ্তাহের জন্য তাজ হোটেলে রয়ে গেলাম। ঘুরে বেড়ালাম, আমি হুমাকে নিয়ে মালদ্বীপও গেলাম। পরে শোনা গেল, সেলিম পারভেজ নামের এক সাবেক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার ও আফতাব বাট নামে একজন বুকি ওই সময় খেলোয়াড়দের সঙ্গে নানা গোপন চুক্তি করেছে। আমি প্রথমজনকে চিনতে পেরেছিলাম, খুব অল্প সময়ের জন্য ওর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল; দ্বিতীয়জনের ব্যাপারে আমি জানতাম না। সিঙ্গার ট্রফি পরে জুয়াড়িদের অনুপ্রবেশের জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠেছিল। কাছের একটি ক্যাসিনো ছিল তাদের প্রিয় আড্ডাখানা। সেখানেই এম.কে. গুপ্তা, ওরফে জন দ্য বুকি, অস্ট্রেলিয়ার মার্ক ওয়াহ ও শেন ওয়ার্নের সঙ্গে পরিচিত হয়।
আমি জানি, ওয়াহ-ওয়ার্ন যে ধরনের প্রস্তাবের বিনিয়মে টাকা নিয়েছে বলেছে, অস্ট্রেলিয়ার কেউ কেউ পরে সেটা নিয়ে হাসাহাসিও করেছে। আপনি খেলে কাউকে আনন্দ দিয়েছেন বলে সে আপনাকে হাজার হাজার ডলার দিয়েছে, আর সেটার বিনিময়ে আপনিও তাকে আপাতদৃষ্টে তুচ্ছ কিছু তথ্য দিলেন, এ রকম ছিল ব্যাপারটা। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এটাই স্বাভাবিক ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার খেলোয়াড়েরা প্রায় সব সময়ই নানা রকম উপহার এবং সুবিধা পেত। পরে তারা জানতে পারত, এর সঙ্গে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
ওই টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান ম্যাচটাও ছিল অদ্ভুত। ১৭৯ রান তাড়া করতে নেমে আমরা ৮০ রানে ২ উইকেট হারাই। ৪৬ রানে থাকা সাঈদ আনোয়ার হঠাৎ করে ‘ক্র্যাম্প’ নিয়ে মাঠ ছাড়ে। পরে ব্যাটিংয়ে সবাই যেন অসাড় হয়ে গেল। সেলিম ৫১ বলে ২২, বাসিত ১৩ বলে ০। এর আগে ওয়াকার বল হাতে ৮ ওভারে দিল ৪৩ রান।
ম্যাচ শেষে ইন্তিখাব এই তিনজনকে ডেকে বললেন। তিনি নাকি এক জুয়াড়ির কাছ থেকে ফোন পেয়েছেন, যে তাঁকে বলেছে, সে এই ম্যাচে টাকা খাটিয়ে লস করেছে। ইন্তিখাব পরে দাবি করেছিলেন, বাসিত নাকি তাঁর কাছে ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছিল (বাসিত অবশ্য এটা অস্বীকার করে)।
ওই সময় দলে একটা ভয়ংকর সন্দেহ-অবিশ্বাস কাজ করছিল। আপনি সতীর্থদের দিকে তাকিয়ে ভাববেন, সে কি ঠিকঠাক খেলছে? আপনি তার প্রতিটি হাবভাব খেয়াল করবেন। মাঠে খেলার মাঝে এমন অনুভূতি খুব কষ্টের। সেই ম্যাচে আমি ৩ উইকেট নিয়েছিলাম, ১৬ রান করেছিলাম। জানতাম, আমি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েছি। কিন্তু বাকি সবাই?
সেই সময় আমাদের দলটা ছিল অসাধারণ। সাঈদ আনোয়ার দুর্দান্ত ফর্মে, ইনজি ছন্দে, ইজাজ ফিরেছে। দেশে ফিরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট খেললাম। তারা ক্রমেই উত্থানের পথে ছিল। এক বছরের মধ্যে তারা এমন একটি কাজ করেছিল, যা আমরা কখনো করতে পারিনি: ক্যারিবিয়ানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো।
করাচিতে প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনে ওরা ২৫২ রানে এগিয়ে, হাতে ৮ উইকেট। কিন্তু আমি আর ওয়াকার রিভার্স সুইং শুরু করলাম। আমি স্টিভ ওয়াহ আর বেভানকে তুলে নিলাম, ৫ উইকেট পেলাম।
আমরা জিতলাম, কিন্তু ম্যাচটা এখন কলঙ্কে মোড়ানো। টার্নিং উইকেটে আমাদের ৩১৪ রান তাড়া করতে দেওয়া হয়েছিল। শেষ দিনে আমাদের দরকার ছিল ৭ উইকেটে ১৫৯ রান। আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান সেলিম মালিক মাত্রই আউট হয়েছেন। শেন ওয়ার্ন এবং টিম মে বোলিংয়ে। ওয়ার্ন এবং মে পরে জানিয়েছিল, সেলিম তাদের খারাপ বল করার জন্য টাকা অফার করেছিলেন। যত দূর আমি জানি, এটা আর কেউ জানত না; আমি তো অবশ্যই না। ইনজি যখন শেষ উইকেটে মুশির সঙ্গে ৫৭ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ জিতিয়ে দিল, তখন আমরা প্রাণ ভরে উদ্যাপন করলাম।
রাওয়ালপিন্ডিতে ওয়ানডেতেও আমাদের জয়ের পরও আমি একইভাবে উদ্যাপন করেছিলাম। পরে জানা যায় যে ম্যাচের আগে সেলিম মালিক নাকি মার্ক ওয়াহকে তার উইকেটের জন্য টাকা অফার করেছিল। অথচ সেই সিরিজেই সেলিম নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসগুলো খেলেছিলেন-রাওয়ালপিন্ডিতে ২৩৭, লাহোরে ১৪৩। সেলিমই সম্ভবত ১৯৯৪ সালের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন। শেন ওয়ার্নের বিপক্ষেও সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ তিনিই ছিলেন। তাই পরের ঘটনাগুলো এতটাই বেদনাদায়ক।
ওই সিরিজে খুব ফ্ল্যাট উইকেটেও আমি দারুণ গতিতে বোলিং করেছিলাম। রাওয়ালপিন্ডিতে স্টিভ ওয়াহকে তো বোমার মতো বল ছুড়ছিলাম। স্টিভ পরে নিজের বইতে লিখেছে, ‘ওয়াসিম হয় আমাকে পছন্দ করত না, নইলে আমি ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ছিলাম।’ সত্যি বলতে, দুটোই। আমি ওকে অপছন্দ করতাম-ব্যক্তিগত কারণে নয়, খেলার কারণে। সে ছিল ভীষণ সাহসী, সহজে হার মানত না। বাউন্সারে কষ্ট পেত, গায়ে লাগত, তবু হাল ছাড়ত না। আমরা ওকেও হার মানতে বাধ্য করেছিলাম। সে জন্য ওই জয়টা ছিল আমাদের অন্যতম সেরা।
এরপর আমি লন্ডনে সাইনাস অপারেশনের জন্য গেলাম। তখন ভাবছিলাম, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়েতে পরের সফরটা অন্তত আগেরটার মতো বাজে হবে না।
কিন্তু আমি ভুল ছিলাম-এবারটা ছিল আরও বাজে।
আমারবাঙলা/জিজি